• ঢাকা
  • শনিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

সিলেটের বিশ্বনাথে গোয়াহরি বিলে ঐতিহ্যময় “ পলো বাওয়া উৎসব” উৎযাপিত 


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: শনিবার, ২০ আগষ্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৫২ পিএম;
সিলেটের বিশ্বনাথে গোয়াহরি বিলে ঐতিহ্যময় “ পলো বাওয়া উৎসব” উৎযাপিত 
সিলেটের বিশ্বনাথে গোয়াহরি বিলে ঐতিহ্যময় “ পলো বাওয়া উৎসব” উৎযাপিত 

বিশ্বনাথে শনিবার (২০ আগস্ট) দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের বিলে বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনারমধ্যেদিয়েঝপা-ঝপ শব্দের তালে তালে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী “পলো বাওয়া ” উৎসব  নির্ধারিত সময়  অনুযায়ী বাংলা বছরের ১ লা মাঘ অনুষ্ঠিত হতো ঐতিহ্যবাহী ওই পলো বাওয়া উৎসব। .

কিন্তু বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল গ্রাম বাসি পালন করতে হয়েছে পলো বাওয়া উৎসব।সূর্যের তাপ  তীব্র  থাকলেও পলো বাওয়া  উৎসবে অংশগ্রহনকারী সৌখিন মাছ শিকারীরা বিপুল পরিমাণে মাছ শিকার করেছেন ‘শিশু থেকে শুরু  করে বৃদ্ধ সহ সব বয়সের মানুষের  অংশ গ্রহনে পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া শত শত বছরের পুরনো “ পলো বাওয়া” উৎসব আনন্দ ঘন পরিবেশে সম্পন্ন হয় এবারের পলো  বাওয়া  উৎসবে কোন সৌখিন শিকারীদেরকে খালি হাতে ফিরতে হয়নি।গোয়াহরি  গ্রামের  দক্ষিণের  বিলে  (বড় বিল)  এবারের  “পলো বাওয়া”  উৎসবে  ছিল মাছ শিকারের আলাদা প্রতিযোগিতা। প্রত্যেক শিকারী ছোট-বড় একাধিক মাছ হাতে নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। 
বাঁশ-বেতের  তৈরী পলো,  উড়াল জাল,  টেলা ঝাল (পেলাইন জাল)  সকাল সাড়ে ১০টায় আনন্দঘন  পরিবেশে একসাথে গ্রামবাসী  “পলো বাওয়া” উৎসব শুরু করেন। গ্রাম বাসীর সাথে বিভিন্ন গ্রাম থেকে অনেক আত্মীয়-স্বজনও পলো বাওয়া উৎসবে  অংশ গ্রহণ করেন।.

প্রায় ২ ঘন্টা ব্যাপী চলা  “পলো বাওয়া” উৎসবে সৌখিন মাছ শিকারীদের পলো ওজালে ধরা পড়ে বোয়াল, রুই, কাতলা,  শোল, কার্ফু, গজার,  ঘনিয়া, বাউশ, ব্রিগেড সহদেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। পলো বাওয়া উৎসবটি গ্রামবাসীর কাছে একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়।.

প্রতি বছরের ন্যায় এবারের ও  বিয়ে হয়ে যাওয়া গ্রামের মেয়ের “পলো বাওয়া” উৎসবকে কেন্দ্র করে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।আর বড়রা  মাছ শিকারে ব্যস্থ থাকলেও বিলের পারে গিয়ে গ্রামের শিশু ও নারীরা উৎসবের আনন্দ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হননি, তাদের উপস্থিতিও ছিলো লক্ষণীয়। 
এছাড়া “পলো বাওয়া” উৎসব দেখতে ভিন্ন গ্রাম থেকে অনেক আত্মীয়-স্বজনও আসেন। গ্রামবাসীরা জানান, “পলো বাওয়া” উৎসব গোয়াহরি গ্রামের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। পূর্ব পুরুষের আমল থেকে গ্রামবাসী উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে এই উৎসব পালন করে আসছেন।.

‘পলো বাওয়া”  উৎসবের এক সপ্তাহ পূর্বে পঞ্চায়েতের সভা ডেকে শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।সভার পর পরই উৎসবের ন্যায় গ্রামের ঘরে ঘরে পলোতৈরী, মেরামত ও সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। “পলো বাওয়া” উৎসবকে কেন্দ্র করে  গোয়াহরি  গ্রামে  গত  কয়েকদিন  ধরে গ্রামে বিরাজ করছিল উৎসবের আমেজ। আর টানা প্রায় ১৫ দিন পর্যন্ত চলবে ওই উৎসব।.

তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর ২য় ধাপে আনুষ্ঠানিক ভাবে আবার ও হবে “পলোবাওয়া”। ওই  ১৫  দিনের ভিতরে প্রতি  রবিবার ও বৃহস্পতিবার বিলে হাত ও টেলাজাল দিয়ে মাছ শিকার করবেন গ্রামবাসী। “পলো বাওয়া” উৎসব দেখতে হাজেরা বেগম বলেন,  পলো  বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য। ছোট বেলা থেকেই প্রাণের এই উৎসব দেখতে বিলে আসি।.

এবার সবাই মাছ শিকার করতে পেরেছেন দেখে আনন্দ লাগছে। সবার ঘরেই আজ উৎসবের আমেজ থাকবে। “পলো বাওয় “ উৎসবে অংশ গ্রহণ কারী সৌখিন মাছ শিকারী আব্দুল কাহার, ইকবাল হোসাইন, আব্দুররব, গোলাম শহিদ, মহরম আলী, আমিনুল ইসলাম, মর্তুজ আলী বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও “পলো বাওয়া” উৎসবে অংশ গ্রহণ করতে পেরে আনন্দ লাগছে।এবার বিলে মাছের পরিমাণ বেশি থাকায় প্রত্যেকেই একাধিক মাছ শিকার করতে পেরেছেন। আর বিলে মাছ বেশি  থাকায় নিজেদের চাহিদা পূরণ শেষে শিকার হওয়া মাছআত্মীয়-স্বজনদের  বাড়িতেও  পাঠানো সম্ভব হবে।.

গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দা ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গোলাম হোসেন বলেন, তীব্র গরমে বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ও মাছ মরা দেখা দেওয়ার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই শত শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসবের তারিখ নির্ধারণ করেন গ্রামবাসী।.

আর বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনায় তা সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাসিনুজ্জামান নূরু বলেন, “পলো বাওয়া” উৎসবটি আমাদের গ্রামের পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া একটি প্রাণের উৎসব। আর এই উৎসবের সময় গ্রামবাসীর মিলন মেলা ও হয়ে যায়।এবার  দেশে  থাকার  কারণে পলো  বাওয়া উৎসব দেখতে এসেছি। এটি অনেক আনন্দের একটি উৎসব। .

গ্রামের মুরব্বী হাজী ছুরত খান বলেন, যুগ যুগ ধরে বাপ-দাদার আমল থেকে “পলো বাওয়া ”উৎসব পালন করে আসছেন গ্রামবাসী প্রতি  বছর  পলো বাওয়া উৎসবে গ্রাম বাসী এক সাথে আনন্দ ঘণ পরিবেশের মাধ্যমে বিলে মাছ শিকারের কার্যক্রম শুরু করেন এবং দেশীয় প্রজাতির সু-স্বাদু  মাছ আহরণ করেন।.

বিশ্বনাথ পৌরসভার সহায়ক কমিটির সদস্য ফজর আলী বলেন, গ্রাম বাসীর বিশেষ আমন্ত্রনে গোয়াহ রিবিলে অনুষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবে অংশ গ্রহন করতে পেরে আনন্দিত হয়েছি। আর মাছ শিকারের পর ওই আনন্দের পরিমাণ কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে।গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী উৎসবটি টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। . .

ডে-নাইট-নিউজ / মিজানুর রহমান মিজান, (সিলেট) 

সারাদেশ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ