• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

একটি সেতুর অভাবে বলু চরের হাজারো মানুষের ভোগান্তি


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বুধবার, ০৬ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:৫৬ পিএম;
একটি সেতুর অভাবে বলু চরের হাজারো মানুষের ভোগান্তি
একটি সেতুর অভাবে বলু চরের হাজারো মানুষের ভোগান্তি

একটি সেতুর অভাবে বলু চরের হাজারো মানুষের ভোগান্তি
টাকা নিয়ে সেতু নির্মাণ না করার অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
.


আব্দুল মালেক নিরব, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের পাকা ব্রিজ না থাকায় বাঁশের তৈরি ভাঙাচুরা সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ। এতে বছরের পর বছর ধওে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসি।.


এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাঁশের সাঁকো ভেঙে হবে ব্রিজ, দুর্ভোগ কমবে এলাকাবাসীর, বাড়বে জমির মূল্য, উন্নত হবে মানুষের জীবনমান এমন নানা প্রলোভন দেখিয়ে ব্রিজ নির্মাণে দুই লাখ টাকা (চাঁদা) দাবি করেন চেয়ারম্যান ইউসুফ ছৈয়াল। ওই টাকা তাঁর নয়, যাবে এমপি ও সরকারি কর্মকর্তাদের পকেটে। টাকা দিলেই দ্রুত মিলবে ব্রিজ। চেয়ারম্যানের কথায় রাজিও হয়ে যান স্থানীয়রা। উচ্ছ্াসিত গ্রামবাসী অল্পসময়ে সংগ্রহ করেন এক লাখ টাকা। ওই টাকা চেয়ারম্যানকে দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে সাঁকো পরিদর্শনে আসেন কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। যারা বাঁশের সাঁকোটি পরিমাপ ও মাটি পরীক্ষা করেন। এরপর থেকে দুই বছর পার হলেও ‘ব্রিজ কিংবা টাকা কোনোটি পায়নি তারা।’ চেয়ারম্যান ইউসুফ ছৈয়ালকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হওয়া ভুক্তভোগীরা এমনটি জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীদের। ঘটনাটি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ২০নং চর রমনী মোহন ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো গাছের গুঁড়ি ও বাঁশে নির্মিত সাঁকোটিতে মানুষ উঠলেই নড়ে ওঠে। সাঁকোর বাঁশগুলো ফেটে গেছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্টে যাতায়াত করছে দুই পাড়ের মানুষ। তবে জোয়ার না থাকলে ঝুঁকি এড়াতে সাঁকোর নিচ দিয়ে চলাচল করে অনেকেই।.


স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় জেগে ওঠা বালুর চরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সাঁকোটি। বিভিন্ন সময় দুর্যোগ ও জোয়ারের পানির আঘাতে সাঁকোটির অবস্থা নাজুক। ফলে এলাকার নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সাঁকোটি পারাপারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। যদিও নিজেদের উদ্যোগে প্রায় এটি মেরামত করে থাকেন। তাছাড়া সদর উপজেলার চর রমনি মোহন ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ গোলদার কান্দির বোবার খালের ওপরের এই সাঁকো দিয়ে হাজারো মানুষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ জেলা শহরে চলাচল করে থাকে।.


ভুক্তভোগী ইয়াকুব ব্যাপারী বলেন, সাঁকোটি প্রতি বছর দুইবার মেরামত করতে হয়। সেখানে চেয়ারম্যানের সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায় না। উল্টো ব্রিজ করার কথা বলে আমাদের থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছেন। দুই বছর পার হলেও এখনো সেতু করে দেননি। আরও বলেন, এমপি ও সরকারি কর্মকর্তাদের খরচের কথা বলে দুই লাখ টাকা দাবি করেন চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে অর্ধেক টাকা স্থানীয়দের থেকে সংগ্রহ করা হয়। চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই টাকা তৎকালীন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ খালেক গোলদারের কাছে দেওয়া হয়। বাকি ১ লাখ টাকা ব্রিজের কাজ শুরু হলে পরিশোধ করার কথা ছিল।.


নুরজাহান বেগম বলেন, অনেক মানুষের যাতায়াত ও জোয়ারের পানির তোড়ে বেশিদিন ভালো থাকে না সাঁকোটি। গরিব মানুষ হওয়ায়, সাঁকোটি বারবার মেরামত করা সম্ভব হয় না। এজন্য ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাঙা সাঁকো দিয়ে চলাচল করি। সেতু না থাকায় যাতায়াত, চরে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে আনা-নেওয়া ও মালামাল বহনে ভোগান্তির শেষ নেই। শুধু বাঁশের একটি সাঁকো মানুষের একমাত্র ভরসা।.


চর কাছিয়া ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র রুবেল হোসেন বলেন, প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। বর্ষা এলে বেশির ভাগ সময় সাঁকোটি ভাঙা থাকে। তখন দূরের পথ ঘুরে স্কুলে যেতে হয়।.


ভুক্তভোগী কালু মাঝি বলেন, সেতুর জন্য গ্রামবাসীর থেকে টাকা উত্তোলনের পর সাঁকোর স্থানে আর আসেনি চেয়ারম্যান ইউসুফ ছৈয়াল। সম্প্রতি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে ওখানে (সমাজে) গিয়েছেন তিনি। তখন ভুক্তভোগীদের তোপের মুখে পড়েছেন চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি বলেছেন, এখানকার জন্য একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়েছিলো। তবে সাঁকোর চেয়ে ছোট হওয়ায় ওই ব্রিজটি অন্যত্র করা হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যদি, এই ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করো। তবে নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি (নৌকার প্রার্থী) পুনরায় মন্ত্রণালয় থেকে সেতু অনুমোদন করে আনবেন। এখন আমরা নয়ন এমপির অপেক্ষায় রইলাম।.


ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল সরকার বলেন, খালের উপর ব্রিজ না থাকায় সবার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওখানে একটি সেতু হলে খুব ভালো হয়। তখন দুই পাড়ের মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবে। চাষিরা নিজেদের জমিতে উৎপাদিত ফসল যানবাহনে করে গ্রামের বিভিন্ন বাজারসহ জেলা শহরে খুব সহজে নিতে পারবে। ফলে ঘুরবে তাদের ভাগ্যের চাকা।.


চর রমনি মোহন ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ খালেক (তৎকালীন ইউপি সদস্য) প্রথমে টাকা সংগ্রহের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল বলেন, মেঘনা তীরবর্তী হওয়ায় চর রমনী মোহন ইউনিয়নে ছোট-বড় অনেক খাল রয়েছে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ওইসব খালের ওপর একাধিক ছোট ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। কখনো একটি টাকাও নেননি। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের স্বল্প বাজেটে গোলদার কান্দির ওই সেতুটি করা সম্ভব নয়। তাই ব্রিজ করার কথা বলে তাদের (স্থানীয়দের) থেকে কোন টাকাও নেওয়া হয়নি, কাউকে নিতেও বলেনি। তাছাড়া ওইস্থানে সেতু এমপি কিংবা সরকারি বড় কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে করতে হবে। সেটি করার জন্য চেষ্টা করছি।
 . .

ডে-নাইট-নিউজ /

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ