খাজাঞ্চি ইউনিয়ন বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত একটি ইউনিয়ন, যেটি গঠিত হয় ১৯৫৯ সালের তখনকার পূর্ব পাকিস্তান আমলে। এই ইউনিয়নের আয়তন ৬৭৫৪ বর্গকিলোমিটার বা একর। বিশ্বনাথ উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব সীমান্তে এর অবস্থান। চর্তুর সীমায় রয়েছে - পূর্বে কামাল বাজার ইউনিয়ন, পশ্চিম-উত্তরে লামাকাজি ইউনিয়ন, দক্ষিণে ৩নং অলংকারি ও রামপাশা ইউনিয়ন এবং উত্তর পূর্বে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়ন। .
খাজাঞ্চি ইউনিয়নে বর্তমান সময়ে মোট জনসংখ্যা ৩৩ হাজারের উপরে। সম্প্রতি তথ্য বলছে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের চেয়ে কম হচ্ছে পুরুষ এবং অর্ধেকের চেয়ে বেশি নারী জনসংখ্যা। ১৫৫০৮ জন পুরুষের বিপরীতে ১৮০৩৮ জন নারী জনসংখ্যার মধ্যে জনঘনত্ব ও বসবাসের হিসেব বলছে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫.০ জন নারী-পুরুষ বসবাস করছে।.
কৃষি প্রধান এবং শাকসবজি উৎপাদনে বিখ্যাত এই এলাকা এখন অনেকটাই প্রবাস নির্ভর হয়ে উঠছে। ঘরে ঘরে এখন এক-দুজন মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রবাসে কর্মরত রয়েছেন। প্রবাস নির্ভর হলেও কৃষির জৌলুশ এখন ও আগের মতই আছে। প্রচুর শাক সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি সমতল এই ইউনিয়নে ধান, মৎস ও পশু সম্পদের উৎসের ব্যপকতা এখনও আছে। .
আধুনিকতার ছোয়ায় যতটুকু জীবনমানের উন্নতি হওয়ার কথা - ততটুকু হয়নি। যোগাযোগ ও শিক্ষা ক্ষেত্রে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমান সময়ে এই ইউনিয়নের স্বাক্ষরতার হার দেখলে চমকে উঠতে হয়। সব মিলিয়ে এখনও স্বাক্ষরতার হার মাত্র ৪০.৭১ পার্সেন্ট। অনুন্নত গ্রামীণ জীবন, যোগাযোগ ও অবকাঠামো গত শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নতি না হওয়ার কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে এমন পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দেখেন বোদ্ধারা। শিক্ষার উন্নতি ছাড়া জাতীর উন্নতি সম্ভব নয় এমন নীতিবাক্যে মনযোগ দিয়ে অত্র এলাকার শিক্ষা ক্ষেত্রে নজর দেওয়ার তাগিদ জানান সচেতন মহল। .
.
সর্বমোট ৮১টি গ্রাম নিয়ে ৯ টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত এই ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মাত্র ২০ টি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩টি, আলীম মাদ্রাসা ২টি, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ৭টি, কিন্ডারগার্টেন ৭টি, ইবতেদায়ী ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫টি'র বেশি। তবে এশিয়া উপমহাদেশের বিখ্যাত কওমী মাদ্রাসা -জামেয়া ইসলামিয়া আব্বাসিয়া কৌড়িয়া ইসলামপুর মাদ্রাসা এই ইউনিয়নের ঐতিহ্য বহন করে চলছে শত বছর ধরে। ৮১ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই ইউনিয়নে মসজিদের সংখ্যা ৯৫ এর অধিক, ঈদগাহ রয়েছে ৪টি এবং মন্দির আছে ৭টির বেশি।.
.
উক্ত ইউনিয়নে মোট বাজারের সংখ্যা রয়েছে ৭টি। আটগ্রাম বাজার, নয়াবন্দর বাজার, রেলওয়ে ষ্টেশন বাজার, প্রীতিগঞ্জ বাজার, হাজিগঞ্জ বাজারের সাথে বড় দু'টি বাজারের স্থান দখল করে আছে মুফতি বাজার ও রাজাগঞ্জ বাজার। .
প্রায় ৯ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে এই ইউনিয়নে। একটি পূর্ণাঙ্গ রেলস্টেশন ও আছে। পশ্চিম প্রয়াগমহল নামে রয়েছে একটি ভুমি অফিসও।.
.
৯ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ নং ওয়ার্ডে গ্রাম রয়েছে ৮টি, ২ নং ওয়ার্ডে ৫টি, ৩ নং ওয়ার্ডে ৬টি, ৪ নং ওয়ার্ডে ৯টি, ৫নং ওয়ার্ডে ১৪টি, ৬নং ওয়ার্ডে ১৬ টি, ৭নং ওয়ার্ডে ৬টি, ৮নং ওয়ার্ডে ৪টি এবং তার ৯নং ওয়ার্ডে গ্রাম রয়েছে মোট ১৩টি। .
.
যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এই ইউনিয়নে আরএইচডি রোড আছে মাত্র প্রায় দেড় কিলোমিটার। এলজিইডি রোড আছে ৫টি'র বেশি যার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২২ কিলোমিটারের কমবেশি। কাচা রাস্তা রয়েছে ৩০টি'র বেশি যার দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। .
.
অত্র ইউনিয়নে নদী পথের সংখ্যা মাত্র ১টি হলে ও ছোট বড় খালে সংখ্যা প্রায় ১২ টির বেশি। সুরমা নদীর একটি শাখা নদী মাকুন্দা নদী নামে নাম ধারণ করে বয়ে গেছে ভাটির দেশে।.
.
দর্শনীয় স্থান ও সম্পদের তালিকায় আছে খাজাঞ্চি রেল ব্রীজ, রেলস্টেশন, শিতলীবাড়ি মন্দির, চন্দগ্রামের রাজরাজেশ্বর মন্দির, জমিদার বাড়ির নিদর্শন ও অন্যান্য প্রত্নতত্ত্ব। .
.
জ্ঞানে গুণে বা আলোকিত স্থানে এই ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ অতীত ও বর্তমানে দেশে বিদেশে ঐতিহ্য, খ্যাতি, যশ বহন করছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রয়াত কয়েকজন আলোকিত মানুষের তালিকায় রয়েছেন কৌড়িয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শায়খে কৌড়িয়া, খাজাঞ্চি ইউনিয়নের প্রথম চেয়ারম্যান পাকিছিরি নিবাসী মরহুম ছৈদউল্লাহ, শালিস ব্যাক্তিত্ব সাবেক চেয়ারম্যান পীর লিয়াকত হোসেন, ঘাসিগাঁও নিবাসী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম ছমরু মিয়া, এলাহাবাদ ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা এটি এম অলিউর রহমান, বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা আব্দুল খালিক, মাওলানা আব্দুস সালাম তেলিকোনি, মরহুম মাওলানা ইজ্জত উল্লাহ (রঃ) ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নুর।.
জীবিত আলোকিতদের তালিকায় আছেন পশ্চিম সিলেটের দ্বীনি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সৎপুর কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শফিকুর রহমান পাকিছিরি, ঘাসিগাঁও নিবাসী সাবেক ব্যাংকার মাসুক মিয়া, মাওলানা আব্দুল হাই জিহাদি, সাবেক চেয়ারম্যান ও আইনজীবী এডভোকেট আব্দুর রশীদ লাল মিয়া, সাংবাদিক ও লেখক মিজানুর রহমান মিজান, ক্রিড়া ব্যাক্তিত্ব কবির হোসেন কুব্বার, আইনজীবী পিযুস ভট্টাচার্য প্রমুখ গণ।.
.
এই ইউনিয়ন বিশ্বনাথ উপজেলার বড় ইউনিয়নের মধ্যে ১ম সারিতে অবস্থান করছে। সাংবাদিকতা পেশায় বর্তমানে ১৮ জন, আইন পেশায় ১৫ জনের অধিক, শিক্ষকতায় ৭০ জনের অধিক ও বিসিএস ক্যাডার সহ নানা পেশায় জড়িয়ে আছেন হাজার হাজার মানুষ। .
.
খাজাঞ্চি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ধাপে ধাপে সংরক্ষণ ও প্রকাশের উদ্যোগ প্রশাসনিক ভাবে গ্রহণ করা, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা সময়ে দাবী এমনটাই সচেতন মহলের আশা। . .
ডে-নাইট-নিউজ / মো. সায়েস্তা মিয়া
আপনার মতামত লিখুন: