প্রকৃতির এ বৈরী আচরণ প্রচ- খরায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মাঠ পুড়ে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন চাষে সময়মতো জমিতে হাল দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। বরেন্দ্র সম্পূরক সেচ চালু না হওয়ায় নিজ উদ্যোগে শ্যালো মেশিন বসিয়ে জমিতে পানি দিতে কৃষকের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। .
তবে সম্পূরক সেচ দ্রুত চালু করতে বরেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। .
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নসহ পৌরসভায় চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন রোপণ করা হয়েছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৭১৮ মেট্রিকটন। গতবছর ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়। সেবছর ফসল উৎপাদন হয়েছিল ৫৪ হাজার ৩১৯ মেট্রিকটন। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা জমিতে হাল চাষ করতে পারছেন না।.
সোমবার (২৪ জুলাই) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক মাস আগে যেসব জমিতে পানি ছিল, সেসব জমিতেও এখন বৃষ্টি না হওয়ায় ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। খাঁ খাঁ করছে মাঠের পর মাঠ। প্রথমদিকে বৃষ্টিময় আবহাওয়া দেখে বিভিন্ন এলাকায় ধান রোপণ করলেও টানা কয়েক দিনের প্রখর রোদে মাটি শুকিয়ে ফেটে গেছে। রোপণ করা ধানের গাছগুলোও পানির অভাবে বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। এমন খরার কারণে সেচপাম্পের ওপর নির্ভর করতে হবে কৃষকদের। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়বে ধানের উৎপাদন ব্যয়। তবে, কিছু এলাকায় নালা এবং পুকুরের পানি সেচ দেয়াসহ শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দিয়ে সামান্য পরিমাণ জমিতে ধান রোপণ শুরু হয়েছে।.
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক, জলিল মিয়া, শফিকুল ইসলাম, মানিক মিয়াসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, খরায় মাঠ পুড়ে চৌচির হয়েছে। জমিতে হাল দেওয়া যায়নি। বৃষ্টি হলে এত দিন জমি তৈরি করা হতো, সময়মতো রোপা আমন ধান রোপণ করা সম্ভব হতো।.
উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের দাশপাড়া গ্রামের কৃষক মদন রায় বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে আমন চাষের আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। ফলে জমিতে সম্পূরক সেচের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ করতে হচ্ছে। এতে ফলন খরচ বেড়ে যাবে। .
আলাদীপুর ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের কৃষক জগেশ চন্দ্র রায় ও মোহনী কান্ত রায় বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই আমন ধান আবাদে হতে হচ্ছে অনেকটা সেচনির্ভর। স্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ এবং ট্রাক্টর দিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।.
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, প্রচ- খরার কাররণে কৃষকরা জমিতে হাল চাষ দিতে পারছেন না। সম্পূরক সেচ চালু করতে ইতোমধ্যে বরেন্দ্রকে চিঠি দেয়া হয়েছে। উপজেলায় ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন রোপণ শেষ হয়েছে। তাপমাত্রা বেশি থাকলে সুগন্ধি ধানে সুগন্ধি ভাব কমে যাবে। তাই ১৫ থেকে ২০ দিন পরে ব্রি-ধান ৩৪ জাতের ধান রোপণ করা হবে।. .
ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আপনার মতামত লিখুন: