• ঢাকা
  • শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

পাথরঘাটায় এমপির লোক পরিচয়ে সন্ত্রাসী তাপসের উত্থান 


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: শনিবার, ০৮ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১:২৯ এএম;
পাথরঘাটায় এমপির লোক পরিচয়ে সন্ত্রাসী তাপসের উত্থান 
পাথরঘাটায় এমপির লোক পরিচয়ে সন্ত্রাসী তাপসের উত্থান 

বরগুনা ২ আসনের সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মনির সন্ত্রাসী গ্রুপের লোক জহির আলীম তাপস নামের এই সন্ত্রাসীর উত্থান হয়েছিলো বিএনপি সরকারের সময়ে। পাথরঘাটার সেই সন্ত্রাসী তাপস এবার নতুন পরিচয়ে এলাকায় তার প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করছে। এলাকার লোকজন অভিযোগ করে বলছেন বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার দলের সাংসদ শওকত হাসানুর রহমান রিমনের লোক পরিচয়ে নতুন করে প্রভাব বিস্তার করে গ্রামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে তাপস। তাপসের বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের রূপধন অঞ্চলের পশ্চিম জালিয়াঘাটা গ্রামে। বিখ্যাত সুদখোর কাদের হাওলাদারের ছেলে তাপস কখনো এমপির লোক কখনো আওয়ামী লীগ নেতা রূপ ধারণ করে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছে।.

অনুসন্ধানে জানা গেছে এই সন্ত্রাসী তাপস ২০০০ সালের গোড়ার দিকে দুইবার পরীক্ষা দিয়ে কোনমতে এসএসসি পাস করে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। সেসময়কার বিএনপির সাংসদ নুরুল ইসলাম মনির লোক পরিচয়ে তাপস তখনই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলো। বিএনপির সাংসদ নুরুল ইসলাম মনির ভাই জামাল এই তাপসের বাবাকে তখন সুদের ব্যবসা শিখিয়েছিলো। সুদের কারবারি করতে করতে একপর্যায়ে তাপসের বাবা কাদের হাওলাদার এলাকায় সুপরিচিত একজন সুদখোর হিসেবে পরিচিতি পায়। তাপসের দাদা হতদরিদ্র হোসেন হাওলাদার প্রতিবেশী জমিদার এন্তাজ খানের বেতনভোগী কৃষি কাজে নিয়োজিত কর্মচারী ছিলো। হতদরিদ্র এই পরিবার টিকিয়ে রাখছে সংসারের বড় ছেলে তাপসের চাচা মজিদ হাওলাদার।.

মজিদ হাওলাদার তাপসের মাকে পরিবারপরিকল্পনা বিভাগে চাকুরী দিয়ে তাপসের মা বাবাকে আর্থিক ভাবে সচ্ছল করে দেয়। ধীরে ধীরে কাদের হাওলাদার সচ্ছল হলেও তার ছেলে তাপস লেখাপড়া বাদ দিয়ে স্কুল জীবন থেকেই হয়ে ওঠে বখাটে দস্যু। তাপসের চাচাতো ভাই জাকির ছিলো কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি ক্ষমতা হারানোর পরে এই সন্ত্রাসী তাপস চাচাতো ভাইয়ের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে পদপদবির জন্য যোগাযোগ করে। জাকিরের চাচা ও চাচাতো ভাই তাপস প্রকাশ্যে বিএনপি সন্ত্রাসী গ্রুপের লোক হওয়ায় জাকির তার চাচাতো ভাই তাপসকে পাথরঘাটার রাজনৈতিক সমাজে চাচাতো ভাইকে পরিচয় দিতো না।.

জাকির মারাযাওয়ার পরে তাপস নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে কয়েকবছর ধরে গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে প্রভাব খাটিয়ে এখন আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর কারনে অতিষ্ঠ এলাকার বাসিন্দারা তাপসের নামে উপজেলার আওয়ামী লীগ ছাড়াও সকল সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ সুলতানা নাদিরাসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাপসের পরিচয় জানতে চাইলে তারা তাপসকে অচেনা লোক হিসেবে উল্লেখ করছে।.

পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, তাপসকে আমরা চিনিনা। আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে সে কি ধরনের অপকর্মে যুক্ত আছে তা আমরা ক্ষতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন এমন বহু তাপসেরা আছে যারা আওয়ামী লীগের বদনাম করার জন্য দলে প্রবেশ করতে চায়। এমন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ সর্বদা সতর্ক আছে। তিনি বলেন দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক ঐতিহ্যের নির্দশন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবীত ব্যাক্তিরা ঐতিহ্যবাহী এই মহান সংগঠনের সাথে যুক্ত আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়-আন্তর্জাতিক সকল ফোরামে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে তার বিরুদ্ধে "জিরো টলারেন্স" নীতির পক্ষে মত দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কানাডার ফেডারেল কোর্টের মতে বিএনপি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’। শুনেছি সেই সন্ত্রাসী সংগঠনের কর্মী তাপস। তারা পারিবারিক ভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপির চিহ্নিত লোক।.

এই লোক কেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছি।  খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে পাথরঘাটা উপজেলার ৮টি শাখা আওয়ামী লীগের অফিসে তাপসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। রায়হানপুর ইউনিয়ন, নাচনাপাড়া ইউনিয়ন, চরদুয়ানী ইউনিয়ন, পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন, কালমেঘা ইউনিয়ন, কাকচিড়া ইউনিয়ন, কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ও পাথরঘাটা পৌর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদকের নিকট অভিযোগ জমা দিয়ে তাপসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছে ভুক্তভোগীরা। তাপসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বর্ননা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে পরামর্শ দিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন বলেন, সন্ত্রাসীদের অর্থ, অস্ত্রশস্ত্র ও নৈতিক সমর্থন না দেওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।.

সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎপাটন করার সংকল্পে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে এই আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ অনুপ্রবেশকারি কিংবা সন্ত্রাসী কোন লোকের আশ্রয় দেয় না। জঙ্গি সন্ত্রাসের ব্যপারে আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিষয়ে পদক্ষেপ নেব। আমি তাকে সুপারিশ করবো, প্রয়োজনে তাপসকে আইনের হাতে তুলে দিতে আমি পাথরঘাটা থানায় ওসির নিকট সুপারিশ করবো। .

কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন পল্টু বলেন তাপসকে আমি চিনি, সে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার ডাকনাম তাপস হলেও কাগজপত্রে তার নাম জহির আলীম। লোকের কাছে শুনছি সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়াও গ্রামের নানান অপকর্মের সাথে যুক্ত। তাপস বিএনপির কর্মী। তার মা পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী। ওর পিতা কাদের হাওলাদার গ্রামে সুদের ব্যাবসা করে। তিনি বলেন বিএনপির এক লোক কাকচিড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। ফারুক হোসেন সেন্টু নামের সেই সদস্যের ছায়াতলে তাপস ছাড়াও কিছু দাঙ্গাবাজ জালিয়াঘাটায় মাদক এবং চোরাকারবারি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোককে বহুবার অনুরোধ করছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।.

ইউনিয়ন সভাপতি বলেন লোকের কাছে শুনছি ইয়াবা চোরাকারবারির সাথেও যুক্ত আছে এই তাপস। কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির প্যাডে লিখত উল্লেখ আছে- এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাইতেছে যে, কাকচিড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিম জালিয়াঘাটা গ্রামের নিবাসী কাদের হাওলাদারের ছেলে মো: জহির আলীম তাপস বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কিংবা তার সহযোগী সংগঠনের কোথাও কোন পদে জড়িত নাই। তাহার নামে অভিযোগ সে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিচয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। তার অপকর্মের দায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর বর্তায় না।.

তাপসের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০২২ সালের নভেম্বরে জালিয়াঘাটা গ্রামের সত্তারের ছেলে হাবিব মিস্ত্রিকে ৮০০ পিস ইয়াবাসহ আটক করেছিলো পাথরঘাটার ফরেস্ট পুলিশ। হাবিবকে গ্রেফতারের কারনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মিছিল দিয়ে ব্যানারে সরকার এবং পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লোগান লিখে হাবিবের পক্ষে জালিয়াঘাটা সড়কে পুলিশবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলো তাপস গ্রুপ। পরবর্তীতে জালিয়াঘাটা গ্রামে পুলিশ অভিযান চালালে সন্ত্রাসী তাপস গ্রুপের লোকজন পালাতক ছিলো। হাবিব জামিনে মুক্তি পেলেও মামলা এখনও চলমান আছে।. .

ডে-নাইট-নিউজ /

অপরাধ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ