আল-আমিন খোকন রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি : তিন সন্তানের জননী অঞ্জনা বেগম (৩৫)। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘরের কাজ শেষে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা, পরিবারের সকলের জন্য রান্নাবান্না, এরপর মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে তাল-মিলিয়ে করেন কৃষি কাজ। .
দিনশেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আবারও ঘরের কাজ। ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব সময় পর্যন্ত অবসর নেই তার।তিনি বলেন, পুরুষের সাথে কাজ করতে কোন সমস্যা নেই। তবে মজুরী নিয়ে কথা থেকে যায়। পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করেও মজুরী তাদের অর্ধেকের চেয়ে কম। যেখানে পুরুষ কৃষক মজুরী পায় ৫-৬শ টাকা। আমরা পাই ২-৩শ টাকা। প্রতিবাদ করলে কর্ম হারাতে হয়। তিনি দুঃখ করে বলেন, কৃষি কাজ করে পুরুষের সমান হাজিরা পেলে আরও অনেক নারী কৃষি কাজে আগ্রহী হবেন। সুতরাং নারীদের কৃষি কাজে আগ্রহী হওয়ার জন্য মজুরী পুরুষের সমান করতে হবে। .
.
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ সাত্তার মেম্বার পাড়ার কাশেম আলী শেখের স্ত্রী করিমন বেগমের (৫৫) ৩ মেয়ে ও ২ ছেলে। স্বামী অসুস্থ। পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে হারিয়েছেন বসত ভিটা। হারিয়েছেন আবাদি জমি। বাধ্য হয়ে অন্যের জায়গা লিজ নিয়ে কোন রকম ঝুঁপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছেন। স্বামী অসুস্থ শরীর নিয়ে মাঝে মধ্যে কৃষি কাজ করেন। এ অবস্থায় অভাবের তাড়নায় কৃষি কাজ করেন করিমন বেগম।.
.
করিমন বেগম বলেন, স্বামী বাড়ীর ৭-৮ বিঘা আবাদি জমি ছিল। নদী ভাঙনের কারণে এখন কোন জায়গা জমি নেই। বাধ্য হয়ে এখন কৃষি কাজ করতে হয়। অঞ্জনা বেগম বলেন, প্রয়োজনের তাগিদে পুরুষদের পাশাপাশি কৃষি কাজ করি। এখন কৃষিকাজ করতে খারাপ লাগে না। তবে অনেক কষ্ট হয়। অন্যদিকে ঘরের কাজ করে তবেই কৃষিকাজ করতে হয়। সেই হিসেবে নারী কৃষক বলে কোন মূল্যায়ন পাইনি কখনো। পাবো কি না সেটাও জানিনা। তিনি বলেন, ৪ বিঘা জমিতে শুধু উস্তা লাগিয়েছি। অতি বৃষ্টিতে ২ বিঘা জমির উস্তা নষ্ট হয়েছে। অন্য ২ বিঘা জমিতে উস্তা খুব ভাল হয়েছে। বাজারে উস্তার ভাল দাম পেয়েছি। নষ্ট হয়ে যাওয়া উস্তার ক্ষতি উঠিয়েও অনেক লাভ হচ্ছে।.
.
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ সাত্তার মেম্বার পাড়ার আরশাদ মোল্লার স্ত্রী হাজরা খাতুন (৬০) বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে অনেক সুখে-শান্তিতে বসবাস করেছি। একাধিকবার নদী ভাঙনের কারণে সব কিছু হারিয়েছি। অর্থ কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে এই বয়সে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষি কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কাজ বেশি করি, কিন্ত মজুরী কম পাই। আমাদের মজুরী পুরুষের অর্ধেকের চেয়ে কম। তবে পুরুষের মত নারীরা মজুরী পেলে কোন নারী আর কাজের সন্ধানে বিদেশে যেতো না। দেশে থেকে কৃষি কাজ করতো। কৃষি উন্নয়ন করতে চাইলে নারী কৃষকের মূল্যায়ন অবশ্যই করতে হবে। নারী কৃষকের মূল্যায়ন না করে কৃষকের উন্নয়ন সম্ভব নয়।.
.
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান জানান, গোয়ালন্দ উপজেলায় অনেক নারী কৃষক আছে। তারা কৃষি কাজে পুরুষের চেয়ে অনেক সফল। অনেক নারী কৃষক আছে অন্যের জমিতে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করেন। এসকল নারীদের উৎসাহ তৈরি করতে পুরুষের সমান মজুরী করা প্রয়োজন।.
.
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালক এসএম সহীদ নুর আকবর জানান, রাজবাড়ী জেলার ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। রয়েছে অনেক নারী কৃষক। পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে কৃষি কাজ করে যাচ্ছেন অনেক নারী। অনেকে নিজের জমি চাষ করে ফসল উৎপাদন করছে। . .
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: