লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের মানুষের আতঙ্কে দিন কাটছে। গত ২৫ এপ্রিল রাতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম কে পোদ্দার বাজার এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। এর পর থেকে পোদ্দার বাজারসহ পুরো ইউনিয়নে সরকার দলীয় ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ জনপদের মানুষের মধ্যে নেমে আসে চরম আতঙ্ক। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশি টহল সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এর পরও মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। .
শুক্রবার দিন ও রাতে সরেজমিনে বশিকপুর এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুুষ, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে জোড়া খুনের পর থেকে পোদ্দার বাজারে ক্রেতা বিক্রেতাদের উপস্থিতি খুব কম। এছাড়া রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে অনেকে। .
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আমির হোসেন জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে সন্ত্রাসীদের হাতে ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি বালাইশপুর গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উল্যা, একই গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা মো: ফয়সাল, আওয়ামীলীগ নেতা মো: সোলায়মান, ফতেহধর্মপুর গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: হারুন, নন্দীগ্রামের আওয়ামীলীগ কর্মী মো: আহসান উল্যা, ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা মো: রতন ও চৌধুরী মিয়া, রশিদপুর গ্রামের ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মো: আলাউদ্দিন, বিরাহিমপুর গ্রামের ছাত্রলীগ নেতা মো: রোমান, বশিকপুর গ্রামের রিয়াদ, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও রোকনপুর হাবিবুর রহমান বাবুল কে গুলি ও কুপিয়ে করে নৃশংস ভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। .
এছাড়া যুবলীগ কর্মী রোকনপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম হিরু, কাশিপুর গ্রামের যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি মনির হোসেনের পায়ে গুলি, বিরাহিমপুর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: খোকন, বশিকপুর গ্রামের ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মানিকের পা ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। এছাড়া আরও অনেক নেতাকর্মী কে গুলি করে ও মারধর করে আহত করে। তিনি আরও বলেন, এখানে রয়েছে শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতার না হলে বশিকপুর শান্ত হবেনা। আমরা বর্তমানে আতঙ্কে আছি, জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যেন স্বদেশে পরবাসে রয়েছি। খুনের সাথে যারা জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবী করছি।.
বশিকপুর গ্রামের একজন প্রবীন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বশিকপুরে হত্যাকান্ডের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বর্তমান থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ৫টি খুনের হত্যা মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখানে রয়েছে শতার্ধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। জীবন বাঁচানোর তাগিদে পোদ্দার বাজারের অনেকে এদের চাঁদা দিয়ে থাকে। .
বশিকপুর ইউনিয়নের বাসিন্ধা কেন্দ্রিয় যুবলীগের উপপরিবেশক বিষয়ক সম্পাদক সামছুর রহমান পাটোয়ারী জানান ১৯৯৮ সাল থেকে বশিকপুর হত্যাকান্ড শুরু হয়। এ পর্যন্ত ২৪ খুনের ঘটনায় ঘটেছে এলাকায় ১২ জন পঙ্গত্ব বরণ করেছে। কেউ পা হারিয়েছে কেউ চোখ হারিয়েছে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও নির্মূল না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ নিবে। .
বশিকপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান খোকন জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতার আসার পরে বশিকপুরে কাসেম জিহাদী বাহিনী গঠন করে। গড়ে তোলেন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী এর পর থেকে ্ওই ইউনিয়নে শুরু হয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। খুন হয় ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক মো: সেলিম, ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: জাহাঙ্গীর আলম খোকন, ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো: ই¯্রাফিল, যুবদল কর্মী মো: ইউসুফ, মো: মোরশেদ, কামাল,৭নং ওয়ার্ড যুবদল কর্মী সুমন এবং রিয়াদ। আহত হয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৫০ নেতাকর্মী। .
সম্প্রতি জোড়া খুনের মামলার ১নং আসামী করা হয়েছে কাসেম জেহাদীকে। আধিপত্য বিস্তার, ইউপি নির্বাচন, দলীয় কোন্দলে আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার অস্ত্র উদ্ধার খুনির উপযুক্ত বিচার না হলে সন্ত্রাসের জনপদে শান্তি ফিরে আসবে না।.
পোদ্দার বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: হারুন জানান, পোদ্দার বাজারে জোড়া খুনের পরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক নেমে আসে। বর্তমানে বাজারে লোকজন তেমন আসছে না। কেনা বেচা খুব কম, ট্রাকের চালকেরা মাল নিয়ে বাজারে আসতে চায়না ভয়ে। ঈদের মৌসুমে এই হত্যাকান্ড দোকানিদের মারাতœক ক্ষতি হয়েছে।.
বশিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান জানান চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আবুল কাসেম জেহাদী তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে তার ছোট ভাই সাবেক যুবলীগ নেতা নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব নিহত হয়েছে। আর যেন কোন লাশ না পড়ে তিনি প্রশাসনের সু দৃষ্টি কামনা করেন।.
জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু জানান, মাসিক আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন সভায় আমি বরাবর বলে আসছি সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা দরকার। যদি না করা যায় তা হলে খুন খারাপি অসামাজিক কার্যকলাপ দেখা দিবে সমাজে। প্রশাসন তৎপর না হওয়ায় বশিকপুরে এই ঘটনা ঘটেছে। বশিকপুরের হারুন, আলাউদ্দিন ও জোড়া খুনের ঘটনা সব একই সূত্রে গাঁথা। এই খানে লাদেন বাহিনী ছিল। তার অনুসারীরা এখনো আছে তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে। বশিকপুরে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মানুষ আতঙ্কিত। তিনি প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, প্রশাসনকে তৎপর ও স্থানীয় জনগণকে প্রশাসনকে সহযোগীতা করার মাধ্যমে বশিকপুরে সন্ত্রাস দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন।.
জেলা পুলিশ সুপার মো: মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন ঘটনার পরে সাদাপোশাক, ডিএসবি, ডিবি পুলিশ এলাকায় অবস্থান করছে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে একজন উপপরিদশক ছিলো গতকাল থেকে সেখানে একজন পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বশিকপুরের চেয়ারম্যানসহ জনগণের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কাজ করছে।.
তিনি আরও বলেন, হত্যার ঘটনায় মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে, মানুষ প্রতিবাদী হচ্ছে। এটা পুলিশের তৎপরতার কারণে সম্ভব হচ্ছে। পুলিশ সুপার আরও বলেন আমি গতকাল এলাকায় গিয়েছি মানুষের সাথে কথা বলেছি। বর্তমানে যে সমস্যা আছে তা কেটে যাবে। আমরা জোড়া খুনের মামলার ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যদের ধরতে চেষ্টা করছি। .
ডে-নাইট-নিউজ / আব্দুল মালেক নিরব:
আপনার মতামত লিখুন: