• ঢাকা
  • সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

শরনার্থী শিবিরে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা 


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০২:৪১ পিএম;
শরনার্থী শিবিরে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা 
শরনার্থী শিবিরে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা 

দিদারুল আলম জিসান: আধিপত্য বিস্তারে নিজেদের শক্তি বাড়াতে প্রতিযোগিতা করে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গা হিসেবে ছদ্মবেশে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এসব সন্ত্রাসীর কাছে অত্যাধুনিক এম-১৬, একে-৪৭ ও মরণঘাতী গ্রেনেড পর্যন্ত রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ক্যাম্পের ঘরে ঘরে এখন অবৈধ অস্ত্র। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে সরেজমিনে অনুসন্ধানে এমন আশঙ্কাজনক তথ্য উঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে প্রায় প্রতিদিনই খুন-গুম ঘটছে। গত ছয় মাসে অন্তত ১০০ লাশ ক্যাম্পে ঘরে ঘরে পড়েছে ক্যাম্পে। আর এসব খুনোখুনিতে অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত গোয়েন্দা ও পুলিশ। কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফে রয়েছে ৩৪টি ছোটবড় রোহিঙ্গা ক্যাম্প।.

 .

এর মধ্যে উখিয়াতেই আছে ২৬টি। জানা গেছে, বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে ১০ হাজার রোহিঙ্গা ভয়ংকর কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গারা ততই ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।.

 .

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুন, অপহরণ, মাদক, ডাকাতি, অস্ত্র পাচার, জাল টাকাসহ ১২ ধরনের অপরাধের অভিযোগে প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো না কোনো কাম্প থেকে তাদের গ্রেফতার করছে। ভয়ংকর অপরাধ করার পাশাপাশি ভাড়াটে হিসেবে খুন, গুম, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতিতেও তারা জড়িয়ে পড়ছে এবং গ্রেফতার ও আইনি ব্যবস্থা নিয়েও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ইয়াবা, আইস ও নানা মাদক কেনাবেচার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। তারা নিজেদের মধ্যে অপরাধীদের বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ তৈরি করছে এবং ক্যাম্পে আধিপত্য ধরে রাখতে নিজেদের মধ্যের বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরেই অন্তত ৩০টি সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে এবং প্রতিটি বাহিনীতে ৩০ থেকে ১০০ পর্যন্ত সদস্য রয়েছে।.

চলমান মাদক কারবারসহ অন্যান্য অবৈধ কর্মকান্ড এরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পগুলো অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে এবং তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে গোলাগুলি ও খুনোখুনির মতো ঘটনা ঘটছে। গোয়েন্দারা বলছেন, মিয়ানমার থেকে মাদকের চালান রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় আসার কারণে এগুলো এ দেশের মাদক পাচারের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। এসব ক্যাম্প হয়ে প্রতিদিন শত কোটি টাকার ইয়াবা ও নতুন মাদক ক্রিস্টাল মেথ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ক্যাম্পে প্রতিদিন কয়েক শ কোটি টাকার বেশি ইয়াবার লেনদেন হয়। আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ লাখ পিস ইয়াবা প্রতিদিন হাতবদল হচ্ছে। মূলত ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে ও বাইরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে। জানা গেছে, স্বাধীনতার আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের অনেকের এ দেশে ব্যবসায়িক সূত্রে আসা-যাওয়া ছিল। তবে সামরিক নিপীড়ন শুরু হওয়ায় আশির দশক থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমাতে থাকে। ২০১৭ সালের আগে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু হলে মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিতে রাজি হয় বাংলাদেশ সরকার। সে সময় এক বছরে চলে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় ৩৪টি স্বীকৃত ক্যাম্পে ১১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছে। এসব রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে জায়গা দেওয়ার সময় তাদের সঙ্গে আনা সামগ্রী সরকারের পক্ষে যথাযথভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানবিক কারণেই তখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলি থেকে তাদের পিঠ বাঁচানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছে সরকার। তবে তারাই এখন হয়ে উঠেছে সরকারের মাথাব্যথার কারণ। একে তো তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে নানা কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়েও এখনো সফলতা মেলেনি, পাশাপাশি তারা নষ্ট করছে উখিয়া-টেকনাফের শান্তিময় পরিবেশ। গোলাগুলি ও হামলায় প্রায় মাসেই রক্তাক্ত হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিবেশ।.

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুরুর দিকে দেশি অস্ত্র যেমন ছুরি, চাকু, রামদা দিয়ে কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। সেই ক্যাম্পে এখন নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি। সশস্ত্র রোহিঙ্গা দলগুলো দেশ-বিদেশের আধুনিক অস্ত্রের মজুদ বাড়াচ্ছে। আর এ কাজে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধেও। বিদেশি বিভিন্ন চক্র তো রয়েছেই, তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও অর্থের বিনিময়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।.

 .

সরেজমিনে জানা যায়, মিয়ানমারের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারী অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকছে। কৌশলে সেসব অস্ত্র ঢুকে যাচ্ছে ক্যাম্পে। পাহাড় লাগোয়া ক্যাম্পগুলো অস্ত্রধারীদের অভয়ারণ্য। সেখানে বাংকার করে তারা অবস্থান নিয়ে থাকে। বিভিন্ন সুড়ঙ্গ তৈরি করে অস্ত্রৈর ভান্ডার করে রেখেছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত এখনো অরক্ষিত। এসব জায়গা দিয়েই ওই দুটি দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্ত্র আসে। তারপর বিভিন্ন কৌশলে সেগুলো পৌঁছে যায় ক্যাম্পে। তবে এসব অস্ত্রের প্রধান উৎস মিয়ানমার। এ ছাড়া কিছু স্থানীয় দুর্বৃত্তের সহায়তা নিয়েও পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের কারখানা বানিয়ে তারা সংগ্রহ করছে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও নানা ধরনের দেশি অস্ত্র।.

 .

 .

সীমান্ত ও ক্যাম্প নিয়ে কাজ করেন উচ্চ পর্যায়ের এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে মাদক চালানের সঙ্গে অস্ত্র আসছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মাদকের মূল হোতারা মাদক পাচারকালে ব্যবহারের জন্য তাদের বহনকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র। আবার অনেকে মাদক বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করছে রোহিঙ্গাদের। সেই সুবাদে ক্যাম্পে তারা যে কোনো কর্মকান্ডে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে। এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ’.

 .

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা বলছেন, ‘ক্যাম্পে মাদকসহ নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসার আধিপত্য কেন্দ্র করেই এ সংঘাত। এ গ্রুপগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের যোগাযোগ থাকার দাবি করেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে এর পেছনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ইন্ধন থাকার অভিযোগ তোলেন। তাদের দাবি, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অস্ত্রের প্রধান উৎস মিয়ানমার। তা ছাড়া সহায়সম্বল ফেলে ছয় বছর আগে বাংলাদেশ আসা রোহিঙ্গাদের হাতে কীভাবে এত অস্ত্র এলো? সে সময় আমরা অনেকে বলেছিলাম, তারা মিয়ানমার থেকে আসার সময় ইয়াবার চালানের সঙ্গে অস্ত্রও এনেছিল। বর্তমানে ক্যাম্পের অবস্থা দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার। ’ নাম না বলার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাহাড়ি এলাকায়। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের গুদামও সেখানে। রাতে জনপদে নেমে আসে ডাকাতিসহ খুন-খারাবি করতে। এমনকি পেশাদার এসব খুনি চুক্তিতে খুন করে। হত্যা শেষে আবার চলে যায়। এমনকি একজনের কাছেই আছে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র। কিছু বিদেশি, কিছু দেশি। ক্যাম্পে অত্যাধুনিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এখন সন্ত্রাসীদের হাতে হাতে। তবে তাদের সঙ্গে কিছু স্থানীয় লোকজনও জড়িত রয়েছে। ’ র‌্যাব ও পুলিশ জানায়, ‘ক্যাম্পে সন্ত্রাসী দলের অস্ত্র এগুলো। খুন-জখম, মাদক-মানব পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ-দোকান বাণিজ্য এবং আধিপত্য বিস্তারের জন্যই এসব অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলে তারা। মূলত সমুদ্র, উপকূল, সীমান্ত জল-পাহাড়ি জনপদ দিয়ে ক্যাম্পে অস্ত্র ঢুকছে। তবে এক প্রকারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেছে মিয়ানমার থেকেও অস্ত্র আসে। পাশাপাশি অস্ত্র তৈরির কারিগর এনে ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ি জনপদে অস্ত্র নির্মাণ করছে তারা। বলতে গেলে সীমান্তের সব রুট দিয়ে মাদক চালানের সঙ্গে অস্ত্র ঢুকছে। ’.

 .

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরবরাহের জন্য গহিন পাহাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অস্ত্র তৈরির অস্থায়ী কারখানাও। সেখানে চারপাশে পাহারা বসিয়ে লেদ মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের সহায়তায় দেশি প্রযুক্তিতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ নানা ধরনের দেশি অস্ত্র তৈরি করা হয়। গোয়েন্দাসূত্র জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকার সীমান্ত দিয়ে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অস্ত্র আসে। বিশেষ করে মিয়ানমারের কাছাকাছি কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো হওয়ায় নাফ নদ, সমুদ্র উপকূল ও পাহাড়ি এলাকা দিয়ে ক্যাম্পে অস্ত্র ঢুকছে। এ ছাড়া ক্যাম্পসংলগ্ন পাহাড়ি জনপদে কারিগর নিয়ে এসে তৈরি করা হচ্ছে দেশি অস্ত্র। বিশেষ করে সাতকানিয়া, বান্দরবান, রাঙামাটি, নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা-আলী কদম, আনোয়ারা, বাঁশখালী, পতেঙ্গা, সীতাকুন্ড, ঘুমধুম, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত হয়ে ক্যাম্পের সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অস্ত্রগুলো। এসবের কিছু ধরা পড়লেও অধিকাংশই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। . .

ডে-নাইট-নিউজ /

সারাদেশ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ