মাত্র ১০০ কোটি টাকার জন্য এক বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে হবিগঞ্জের বৃহত্তম সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৩৩০ মেঘাওয়াট। এক বছর আগে অগ্নিকান্ডে এর ৩টি ট্রান্সফরমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকেই এটি বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হলেও এটি সংস্কারে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। এদিকে মাত্র ১৬ মেঘাওয়াট চাহিদার এ জেলায় বিদ্যুতের অভাবে লোডশেডিং হচ্ছে দিনের ৩ ভাগের একভাগ। আবার কখনও লোডশেডিং হয় দিনের অর্ধেক সময়। .
এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলে। ব্যবসায়ী মহিবুর রহমান টিপু বলেন, আমরা ঠিকই বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছি। কিন্তু বিদ্যুৎ পাচ্ছিনা। প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় বিদ্যুৎ যাচ্ছে। ব্যবসা করতে পারছিনা। সন্তানরা পড়তে পারছেনা। স্কুলে যেতে পারছেনা। আমার সন্তানকে স্কুল থেকে পৌনে ৩টায় আনার কথা। কিন্তু দেখা গেলো বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচন্ড গরমের কারণে স্কুল ছুটি দিয়ে দেয় ১টার সময়।.
লোডশেডিংয়ে আমরা অতিষ্ট হয়ে উঠছি। ইজিবাইক চালক সজিব মিয়া বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে ইজিবাইক চার্জ দিতে পারিনা। তাই দিনে তেমন গাড়ি চালাতেও পারিনা। রোজগারও করতে পারিনা। সংসার চালানো নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। কামাল আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের ভয়াবহ অবস্থা। লোডশেডিংয়ের কারণে শিশু ও বয়স্কদের খুব সমস্যা হয়। আমার আম্মা বৃদ্ধ মানুষ।.
লোডশেডিং আর গরমের কারণে তাকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। বার বার বিদ্যুৎ যাওয়া আসার কারণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। মাঝে মাঝে বলে ১ ঘন্টা করে লোডশেডিং করবে। কিন্তু দেখা যায় ১৫ মিনিট দিয়ে ৪৫ মিনিট বন্ধ রাখা হয়।ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ঘন্টায় ঘন্টায় বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণে ব্যবসা করতে পারছিনা। কাস্টমারকে ঠিকমতো ডেলিভারি দিতে পারছিনা।.
নির্মাণ শ্রমিক লিলু মিয়া বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কাজ করতে পারছিনা। শ্রমিকদের অধিকাংশ সময় বসিয়ে রেখে টাকা দিতে হচ্ছে। দিনের বেশির ভাগ সময় বসা থাকে। কিন্তু টাকাতো ঠিকই দিতে হচ্ছে। এতে আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি। হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমান শামীম বলেন, জেলার সরকারি সবচেয়ে বড় ৩৩০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি একটি অনাকাংখিত ঘটনায় বিকল হয়ে ১ বছর ধরে পড়ে আছে। অথচ এ জেলা শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত একটি জেলা।.
এটি বিকল থাকার কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি দ্রুত সংস্কার করে পূণরায় চালু করলে জেলার বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণেও এটি ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাকরি। শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী শফি উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৩৩০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূণঃসংস্কার কাজ প্রক্রিয়াধিন আছে। আশা করা যায় অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এটি চালু করা সম্ভব হবে।.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি সূত্র জানায়, এটি সংস্কার করতে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কেটি টাকা ব্যয় হবে। এ টাকা আসলে সরকারের জন্য খুব বেশি নয়। একটু স্বদিচ্ছা প্রয়োজন। এটি চালু হলে ১ থেকে ২ মাসের মধ্যেই এ টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলেও সূত্রটির দাবি।
শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হয় ৩৩০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের ১ মার্চ। গ্যাস থেকে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। .
এখানে রয়েছে ২টি গ্যাস টারবাইন ও ১টি স্টিম টারবাইন। ২টি টারবাইনে ১১০ মেঘাওয়াট করে ২২০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় গ্যাস থেকে। বাকি ১১০ মেঘাওয়াট ১টি স্টিম টারবাইনের মাধ্যমে উৎপাদন হয়। এটিতে ব্যবহার করা হয় ২২০ মেঘাওয়াটের পুড়া গ্যাসের তাপ। এখানে আর নতুন গ্যাসের প্রয়োজন হয়না। এটি কম্বাইন্ড সাইকেল না করলে ২২০ মেঘাওয়াটের পুড়া গ্যাসের তাপ পুরোটাই বাতাসে ছেড়ে দিতে হতো। এমন সাশ্রয়ী একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ১৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালের ২৯ মে আগুন লেগে এর ৩টি ট্রান্সফরমারই পুড়ে যায়। .
এরপর থেকেই এটি বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে এখানে চলছে ৬০ মেঘাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি কেন্দ্র। ৩৩০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১টি বড় ট্রান্সফরমার এবং ২টি ছোট ট্রান্সফরমার (অক্সিলারী) আগুনে পুড়ে গেছে। এগুলো সংস্কার করে পূণরায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে ৮০ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো খরচ হতে পারে।.
ডে-নাইট-নিউজ / উজ্জ্বল আহমেদ, হবিগঞ্জ॥
আপনার মতামত লিখুন: