লাটাহাম্বার চালক মনিরুল ইসলাম ঝিনাইদহ শহরের আবুল কালাম পেট্রোল পাম্পে তেল ভরছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি অবৈধ যানবাহন নিয়ে কি ভাবে শহরে ঢুকলেন ? তিনি হেসে জানালেন “আমরা মাসিক দিই। ঝিনাইদহের খাজুরা এলাকায় আমাদের অফিস আছে। সেখান থেকে ওরা প্রতিমাসে টাকা নিয়ে আসে”।.
মনিরুলের মতো শত শত অবৈধ যানবাহনের চালক প্রতিদিন বিধি নিষেধ অমান্য করে অবৈধ যান নিয়ে সড়ক মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন আজীবনের মতো। সারা জেলায় এধরণের অবৈধ যানবাহনের সঠিক সংখ্যা নিরুপন করা সম্ভব না হলেও ঝিনাইদহ বিআরটি কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে প্রায় ত্রিশ হাজার অবৈধ যানবাহন ঝিনাইদহের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে চলাচল করছে।.
রাস্তায় অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে পরিবহন সেক্টরে নেমে এসেছে অশনিসংকেত। সড়কগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। সড়কে এখন শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ অবৈধ যানবাহনের দখলে চলে গেছে। অবৈধ যানের চালকরা ট্রাফিক আইন ও সংকেত না মানার করণে বৈধ যান চালকদের নানমুখী বিপদ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। .
এদিকে অবৈধ নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটিতে মালামালা টানার কারণে ট্রাক ও বাসের আয় রোজগার কমে এসেছে। বাসের পরিবর্তে যাত্রীরা এখন অটোভ্যান, অটো রিক্সা, ইজিবাইক, থ্রিহুইলার ও লেগুনে যাতায়াত করছে। ঝিনাইদহ বাস মিনিবাস মালিক সমিতি সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় মোট ৩০৬টি বাস রয়েছে। .
এর মধ্যে ঝিনাইদহ বাস মালিক সমিতির নিয়ন্ত্রনে ১৭৮টি, কালীগঞ্জে ৯৮টি ও মহেশপুরে ৩০টি যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। এছাড়া ট্রাক ও মিনি ট্রাকের সংখ্যা জেলায় ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার বলে ঝিনাইদহ ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের একটি সুত্র জানায়। মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল নিয়ে ঝিনাইদহ বাস মিনিবাস পরিচালনা কমিটির সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু বলেন, আমরা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বার বার অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলছি। মহামান্য হাই কোর্টও রায় দিয়েছে জাতীয় মহাসড়কে এ সব অবৈধ গাড়ি চলবে না। কিন্তু কেন যে বন্ধ হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। .
এসব অবৈধ গাড়ির কারণে মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বা যাত্রীরাও এ থেকে পরিত্রান চাই। তিনি বলেন, বাস মালিকরা প্রতি বছর সরকারকে মোটা অংকের কর দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কথা ভাবা হচ্ছে না। বরং আগের চেয়ে সড়ক মহাসড়কে আরো বেশি অবৈধ যান চলাচল করছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যাতে পরিবহন শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন। ঝিনাইদহ ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দাউদ হোসেন বলেন, এখন ট্রাকের পরিবর্তে রাস্তায় লাটা হাম্বার নামে একটি অদ্ভুত যানবাহন চলে। ফলে ট্রাকে মালামাল পরিবহন কমে এসেছে।.
তিনি বলেন, ট্রাকের যন্ত্রংশ ও নানা খাতে বিআরটিএর ফি বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই ট্রাক মালিকরা দিশেহারা, তার উপর সড়কে অবৈধ লেগুনা, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক, অটো ভ্যান, আলমসাধু, লাটা হাম্বার ও করিমন গাড়ি চলার কারণে মালিক শ্রমিক সবাই পথে বসছে। ঝিনাইদহ বিআরটিএ’র কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, জেলায় এখন বৈধ যানবাহনের চেয়ে অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বেকশি। এই সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার হবে বলে তিনি দাবী করেন। .
তিনি বলেন এ সব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তারপরও চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। ঝিনাইদহ হাইওয়ে পুলিশের ওসি মিজানুর রহমান বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত সড়ক মহাসড়কে অভিযান চালানো হচ্ছে। আলমসাধু, ভটভটি ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন আটক করা হচ্ছে। াশাপাশি তাদের সচেতনতাও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই সেক্টরের সঙ্গে সবাই একসঙ্গে কাজ না করলে পুলিশের পক্ষে একা অবৈধ যানবাহন বন্ধ করা সম্ভব নয়। . .
ডে-নাইট-নিউজ / আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
আপনার মতামত লিখুন: