প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ীর সেই সাহস, ফুলবাড়ীর সেই শক্তি, সেই প্রেরণা, ফুলবাড়ীর সেই শহীদদের প্রেরণা এবং যারা লড়াই করেছেন। ২০০৬ গণঅভ্যুত্থানে ফুলবাড়ী ছেড়ে পালিয়েছিল এশিয়া এনার্জি। কিন্তু তারা এখনো ল-নে বসে ফুলবাড়ীকে দেখিয়ে শেয়ারবাজারে ব্যবসা করছে। তারা ইতোমধ্যে একটি চিনা কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়েছে। সেই ব্যবসা যাতে নির্বিঘেœ চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য ফুলবাড়ী আন্দোলনের বিভিন্ন নেতার নামে মামলা দায়ের করেছে। ২০০৬ সালের বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর তৎকালিন দেয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এশিয়া এনার্জিসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। ফুলবাড়ী আন্দোলন শুধুমাত্র কয়লা রক্ষা না। এ আন্দোলন ছিল এখানের মানুষের জীবনজীবিকা রক্ষার, প্রাণীসম্পদ রক্ষার, বাংলাদেশকে রক্ষার। এ আন্দোলনের মূল দাবি ছিল, জনগণের সম্মতি ছাড়া কোনো কিছু করা যাবে না। উন্নয়নের নামে কোনোপ্রকার ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যাবে না। এখন যদি কেউ ভাবে, এই আন্দোলন আর নাই, তাহলে সেটা ভুল।.
.
১৭ বছর পার হয়েছে কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষ এখনো জাগ্রত আছে। যদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো বিদেশি কোম্পানী এখানে আবারো ষড়যন্ত্র করে আবারো যেকোনো সময় বিষ্ফোরন হবে। এটি যাতে না হয় সেজন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাবো। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই আমি সংশ্লিষ্ট সকল রাজনৈতিক দলকে আহবান জানাবো যে ক্ষমতায় আসুক। তাকে এই ৬দফার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি শুধু এই অঞ্চলের মানুষের দাবি নয়, এটি পুরো বাংলাদেশের মানুষের দাবি। ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থান বিশ্বের প্রাণপ্রকৃতি বিনাশী প্রকল্প থেকে রক্ষা কররে সেই আন্দোলন। তাই ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থানের দাবি মানে বিশ্ব গণঅভ্যুত্থানের দাবি। আমরা ক্ষমতাশীন দলসহ সকল রাজনৈতিক দলকে এই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকার বিশেষ দাবি জানাচ্ছি।’.
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৬ সালে এশিয়া এনার্জি যদি ফুলবাড়ীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করত তবে দেশের উত্তরবঙ্গের পানি সম্পদ নষ্ট হতো। এই এলাকা তিন ফসলি জমির ভয়ংকর পরিণতির মধ্যে যেত। এলাকার মাটি, পানি নষ্টসহ মানুষকে ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। লাখ লাখ মানুষ ঘর ছাড়া হতো, উদ্বাস্তু হতো। সেই ভয়ংকর অবস্থা থেকে ফুলবাড়ীর গণঅভ্যুত্থান শুধু ফুলবাড়ীকে নয়, বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে।’
শনিবার (২৬ আগষ্ট) দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে “ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী ট্র্যাজেডি” দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে উপরোক্ত কথা বলেছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। .
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেছেন, ‘এশিয়া এনার্জি ফুলবাড়ীর কয়লা সম্পদ লুটপাট করতে আবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে। খনি বিরোধী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য আন্দোলনকারি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করেছে। নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কারসহ তাদের সুবিধাভোগীদের গ্রেফতার এবং ৬ দফা ফুলবাড়ী সমঝোতা চুক্তির পূর্ণবাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী) সেই সময় বলেছিলেন ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। কিন্ত তারা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এশিয়া এনার্জির মতো জালিয়াতি, টাউট, বাটপার কোম্পানিকে দেশ থেকে অবিলম্বে বহিস্কার করতে হবে।’.
দিবসটি উপলক্ষে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ী পৌর মেয়র ও আমরা ফুলবাড়ী বাসীসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সকালে ২৬ আগস্টে নিহতদের স্মরণে পৌরশহরে শোক র্যালী প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে।.
সকাল ১১ টায় তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ফুলবাড়ী ছোট যমুনা ব্রিজ সংলগ্ন শহীদ বেদি চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির উপজেলা শাখা আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল। .
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের বিল্পবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকম-লীর সদস্য মোশাররফ হোসে নান্নু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম প্রমুখ।.
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পৌরমেয়র মাহমুদ আলম লিটন, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবলু, উপজেলা শাখা তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব জয় প্রকাশ গুপ্ত, সদস্য হামিদুল হক, সদস্য মো. আব্দুল কাইয়ুম, জেলা শাখা সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক এসএম নূরুজ্জামান জামান, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিকদার, গণফ্রণ্ট নেতা কমল চক্রবর্তী, বিরামপুর শাখা তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম, পার্বতীপুর শাখা তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক হাফিজুর রহমান প্রমুখ।.
এদিকে ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মাহমুদ আলম লিটনের নেতৃত্বে সকালে শোক র্যালি শেষে ২৬ আগস্টে নিহতদের স্মরণে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
অপরদিকে আমরা ফুলবাড়ী বাসীর ব্যানারে সাবেক মেয়র মুরতুজা সরকার মানিকের নেতৃত্বে সকালে শোক র্যালীসহ শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন এবং উন্মক্ত পদ্ধতি কয়লা খনির বিরুদ্ধে শপথ বাক্য পাঠ করান।
এছাড়াও দোকান কর্মচারি ইউনিয়ন, মটরশ্রমিক ইউনিয়ন, হোটেল কর্মচারি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে।
.
.
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: