.
.
.
মো. সায়েস্তা মিয়া, বিশ্বনাথ প্রতিনিধিঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষার পরিবেশ যেখান থেকে তদারকি করা হয় সেখানের মেরুদণ্ড যদি ভাঙ্গা হয়- তাহলে মেরুদণ্ড গড়বে কে? এমন বিস্তর প্রশ্ন নিয়ে চলছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর। জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম এমনটি জানা গেছে অফিস সূত্রে। .
.
.
.
.
.
.
.
উপজেলায় মোট ১৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেখভাল করেন মাত্র ১ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার। তিনি একাধারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার সামলাচ্ছেন বিশ্বনাথ পৌর সভার ২ টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব ও। সম্প্রতি পৌরসভা ভেঙে দেওয়ার ফলে এমন দায়িত্ব পড়েছে তাঁর কাঁধে। অফিস সূত্রে জানা গেছে সরকারি বিধি মোতাবেক উপজেলার এই অফিসে কর্মরত পদ সংখ্যা সর্বমোট ১২ টি। রয়েছে ১টি প্রধান শিক্ষা অফিসার ও ৭টি সহকারী শিক্ষা অফিসারের পদ। দপ্তরি, ইউডি,এলডি ও হিসাব সহকারীর পদ আছে ৪টি কিন্তু ১টি পদে একজন আছেন কর্মরত। দপ্তরি ও চতুর্থশ্রেনির কোন কর্মচারী না থাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে অফিস বিল্ডিংয়ে। ময়লা আবর্জনা আর মাকড়সার জালে পুরো দুতলা বিশিষ্ট ভবন দেখলে মনে হয় এ যেন এক পরিত্যক্ত স্থাপনা। পরিস্কার ও আবর্জনা অপসারণে সাপ্তাহিক ভাবে পালাক্রমে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কর্মরত দপ্তরিদের আনা হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসে ঝাড়ু ও পরিস্কারের কাজ করাতে। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সহকারী পদে থাকা মাত্র ১জন শিক্ষা অফিসার দিয়ে একটি উপজেলার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা কিভাবে সম্ভব এমন প্রশ্ন উঠছে। এছাড়া প্রধান কর্মকর্তার চাকুরির মেয়াদ শেষ হলে তিনি গিয়েছেন অবসরে। উপজেলার সকল বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের বেতন রয়েছে বন্ধ। নতুন শিক্ষা অফিসারের আগমন নিয়ে চলছে জটিলতা। গেল ২০ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার শিক্ষা অফিসার মাহমুদুল হককে বিশ্বনাথে বদলির আদেশ জারী করে প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর। গতকাল ১০ নভেম্বর বিশ্বনাথে তার কর্মস্থলে যোগদান করার কথা থাকলেও তিনি যোগদান করেননি। বিশ্বনাথ উপজেলায় তার আগমন ঠেকাতে ইতিমধ্যে ইনকিলাব সংসদ বিশ্বনাথ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের মত নানা কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও নাস্তিকতার কারণ উল্লেখ করে বিশ্বনাথ থেকে অপসারণ করার দাবী করছেন আন্দোলনকারীরা। এতে করে বিশ্বনাথে তার আগমন ও যোগদান নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রবিবার (১০ নভেম্বর) অফিস চলাকালীন সময় সকাল ১০ ঘটিকায় সরজমিন পর্যবেক্ষণে গিয়ে শিক্ষা অফিসের কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া না গেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ সুহেল রানা উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের একটি স্কুল ভিজিটে রয়েছেন। একজন কর্মকর্তা কম্পিউটারের কাজে ব্যস্থ। মাকড়সার জাল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা পরিস্কারের কাজ সামলাতে ফ্লোর ঝাড়ু দিচ্ছেন এক ব্যাক্তি। কথা হয় ঝাড়ু দেওয়া ব্যাক্তি সুনুল হকের সাথে। তিনি রামপাশা ইউনিয়নের পালেচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি পোস্টে কর্মরত আছেন। তিনি জানান- তারা বিভিন্ন স্কুলের ৯ থেকে ১০ জন দপ্তরি মিলে এক সপ্তাহ করে উপজেলা শিক্ষা অফিসের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে থাকেন। এজন্য বাড়তি কোনো বেতন ভাতা দেওয়া হয় না তাদের। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত থাকা অবস্থায় নিজ প্রতিষ্ঠানের কাজ ফেলে উপজেলা অফিসের কাজ করা, এটার বৈধতা রয়েছে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কর্তৃপক্ষ যেটা বলেন আমরা সেটা করি। তবে এই অফিসে সরকারি ভাবে কেউ না থাকায় পুরো অফিসটি অপরিষ্কার থাকে সবসময়। .
.
.
.
.
.
.
.
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জনবল সংকটের কারণে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষার মান বজায় রাখা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবক এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবিলম্বে শুন্য পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। কান্দিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রীর অভিভাবক সুমন মিয়া সহ বিভিন্ন স্কুলের একাধিক অভিভাবক এই দাবী জানান।.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
এব্যাপারে খাজাঞ্চি ইউনিয়নের জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুশ শহীদ বলেন - সরকারি বিধি মোতাবেক ১ জন শিক্ষা অফিসার ও ৭ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার যেখানে থাকার কথা সেখানে ১ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার দিয়ে একটি উপজেলার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা কিভাবে সম্ভব? কোন কাজ নিয়ে অফিসে গেলে সময় মতো করা যায় না। এছাড়া শিক্ষা অফিসার না থাকায় আমাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বিশ্বনাথ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নানা সমস্যার কথা, শুন্য পদে জনবল নিয়োগ, শিক্ষার মান বজায় রাখা ও করণীয় বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যা গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে অবগত করা হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার মোঃ সুহেল রানা। এসব বিস্তর সমস্যার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, দ্রুত জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে, তা না হলে পুরো উপজেলার শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়তে পারে। আমি একা- একদিকে গেলে একটি কাজ হয়, অন্যটি পড়ে রয়। সহকারী শিক্ষা অফিসারের শুন্য পদে, অফিসে দপ্তরি ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ না দিলে এই ভুতুড়ে পরিবেশ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এছাড়া তিনি জানান- যারা এক সপ্তাহ করে উক্ত অফিসকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ করেন তাদের যাতায়াত ও খাওয়া ধাওয়ার খরচ প্রদান করা হয়। কিন্তু এভাবে কাজ করানো বৈধ নয়। . .
ডে-নাইট-নিউজ / মো. সায়েস্তা মিয়া
আপনার মতামত লিখুন: