সপ্তাহ পার না হতেই কোটচাঁদপুরের সিটি ক্লিনিকের পর এবার মহেশপুরে গ্রামীণ প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারের ভুল অপারেশনে বিথী খাতুন নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর লাশ এ্যম্বুলেন্সে উঠিয়ে রাস্তার মাঝ পথে নেমে পালিয়ে যায় দুই চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিক। শনিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।.
বিথী খাতুন মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামের আলী কদরের মেয়ে। সিজারের পর বিথীর একটি ছেলে সন্তান হেেয়ছে। এ ঘটনায় মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকটির অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে দেন। বিথী খাতুনের পিতা আলী কদর জানান, মেয়ের প্রসব ব্যাথা উঠলে শনিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে পাশ^বর্তী গ্রামীন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের মালিক জুলফিক্কার আলী নরমাল ডেলিভারি সম্ভব না জানিয়ে সিজার করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। .
রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপারেশন শুরু করেন ডাক্তার মাসুদ রানা। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও অপারেশন শেষ না হওয়ায় সন্দেহ হলে জোর পূর্বক অপারেশন রুমে গিয়ে দেখেন রোগী অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। আলী কদর অভিযোগ করেন, ওটিতে গিয়ে দেখি ডাক্তারের স্থানে অজ্ঞানের চিকিৎসক ডাঃ ফরহাদ ও কোটচাঁদপুরের জাহাঙ্গীর নামে এক এসিসট্যন্ট জোরে জোরে বিথী খাতুনের বুকে চাঁপ দিচ্ছেন। অপারেশন থিয়েটারে বিথী খাতুন মারা গেলে নাটক সাজিয়ে ক্লিনিক মালিক জুলফিক্কার তাকে যশোর হাসপাতালে নিতে বলেন। .
এ সময জুলফিক্কার নিজেই এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মৃত রোগীকে ভিতরে উঠিয়ে সিজার করা দুই ডাক্তার ও জুলফিক্কার যশোর রওনা হন। এরপর কোঁটচাদপুর শহরে পৌছালে কৌশলে এ্যাম্বুলেন্স থেকে তারা সবাই পালিয়ে যান। যশোরের চৌগাছা পৌছালে বিথী খাতুনের সঙ্গে থাকা স্বজনদের সন্দেহ হলে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। মহেশপুরে গ্রামীণ প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক জুলফিক্কারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তার মুঠোফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। কথা হলে মহেশপুরের এসবিকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফান হাসান চৌধূরী লুথান বলেন, অজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তিনি দায়ী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। .
এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহমুদ-বিন- হেদায়েত বলেন, ওই ক্লিনিকে যে সব কথিত চিকিৎসক অপারেশন কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের সুনিদ্দিষ্ট কোন ঠিকানা নেই। তারা কোথায় থাকেন তারও কোন হদিস মেলেনি। এরা মোবাইল পেয়ে ক্লিনিকে আসেন অপারশেন করতে। তিনি বলেন, অহরহ অপচিকিৎসা প্রদানের অভিযোগ ওঠায় এমন দুই চিকিৎসক ডাঃ সোহেল রানা ও ডাঃ আনিছুর রহমানকে চিঠি দিয়ে অপারেশন না করতে বলেছি। কিন্তু তারা চিঠিও গ্রহন করেনি, অপারেশনও বন্ধ করেনি।.
এই অবস্থায় মাসুদ রানা নামে আরো একজন চিকিৎসকের আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি মহেশপুরে গ্রামীণ প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারে অপারেশনের পর বিথী নামে এক প্রসুতি শনিবার রাতে মারা গেছেন। খবর পেয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ওই ক্লিনিকের ওটি সিলগালা ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন মহেশপুরের এসিল্যান্ড শরীফ দেওয়ান। .
তিনি বলেন গ্রামীন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার নুন্যতম কোন পরিবশে পায়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মাহমুদ-বিন-হেদায়েত আরো জানান, দায়ী চিকিৎসক মাসুদ রানাকে ফোন করে রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে তার বিএমডিসি সনদ দেখাতে বলেছি, কিন্তু বিকাল পর্যন্ত অপক্ষো করেও তিনি আসেননি। মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছক একাধীক চিকিৎসক অভিযোগ করেন, মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরে যারা অপারেশন করতে আসেন সে সকল কথিত চিকিৎকদের অপারেশনের কোন অভিজ্ঞতা নেই। .
কোটচাঁদপুরের জাহাঙ্গীর নামে এক ওটি সহকারী অপারশেন করেন এবং ওটি চার্জ চিকিৎসকের সঙ্গে সমান ভাগ করে নেন। আর এসব চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছে ডাঃ আনিছুর রহমান, ডাঃ মাসুদ রানা ও ডাঃ সোহেল রানা। এদের কারো বিএমডিসির সনদ নেই বলে অভিযোগ। কম টাকায় এদের পাওয়া যায় বলে মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরের ক্লিনিক মালকরা এদের ডেকে থাকেন। আর এদের হাতেই প্রসুতি রোগী একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে। গত সপ্তায় কোটচাঁদপুরের সিটি ক্লিনিক, মহেশপুরের যাদবপুরের স্বপ্নছোঁয়া ক্লিনিক ও নেপার মোড়ে একতা ক্লিনিকে অপারশেনের পর এক প্রসূতিসহ দুই নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। .
এছাড়া ভৈরবা বাজারে শিহাব প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় জবজাতক কন্যা শিশুর হাত ভেঙ্গে দেয়। এই চার ক্লিনিকেও অপারশেন করেন খুলনার বাগেরহাট এলাকার কসাই খ্যাত চিকিৎসক সোহেল রানা। এসব বিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ শুভ্রা রানী সাহা জানান, কথিত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে গেলে ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বাধা দিচ্ছেন।.
ফলে আমরা কিছুই করতে পারছি না। তিনি বলেন, আবার রোগীর স্বজনরা মামলা করতে গেলে রাজনৈতিক প্রভাব ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে মামলাও হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, মহেশপুরে গ্রামীণ প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী থাকায় শুধু ওটি বন্ধ করা হয়েছে। মহেশপুরের আরো কিছু ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে তিনি যোগ করেন।. .
ডে-নাইট-নিউজ / আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
আপনার মতামত লিখুন: