নাম সবুজ সর্দার। বয়স ১৮। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার বাড়ি। তিনি সদ্য এসএসসি পরীক্ষা পাশ করেছেন। আকাশে বিভিন্ন বিমান ও ড্রোন উড়া দেখে কৌতুহলের শেষ ছিল না তার মাঝে। অদম্য ইচ্ছা শক্তির প্রয়াস ঘটিয়ে ৪৫ দিনে আকাশে উড়ালো নিজের তৈরি বিমান।
৩০ মিনিট ধরে রিমোর্ট কন্ট্রোলের নিয়ন্ত্রণে বিমানটি আকাশে উড়ায় সবুজ। তার এই দৃশ্যটি অনেকের কাছে কৌতূহলের সৃষ্টি করে। রোজ ভিড় জমছে উৎসুক জনতার। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে তার বিমান উড্ডয়নের দৃশ্যটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
সবুজ সর্দার ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পলিশিবনগর মহেশপুর গ্রামের রিকশা-ভ্যান চালক একরামুল সর্দারের ছেলে।
সবুজ কৌতূহলবশত ছোটবেলা থেকে আকাশে বিমান উড়ানোর বিষয়টি নিয়ে ভাবতো। যেই ভাবা সেই কাজ। এসএসসি পরীক্ষা পাশ করার পড়ে মাত্র ৪৫ দিনে তার আবিষ্কৃত ছোট বিমানটি তৈরি করে সফলভাবে আকাশে উড়িয়েছেন এই মেধাবী শিক্ষার্র্থী সবুজ সর্দার।
জানা যায়, সবুজ সর্দার ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি) সমাপ্ত করেছেন। তিনি বর্তমানে দিনাজপুর উত্তরণ পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের তড়িৎ বিষয়ে প্রথমবর্ষে অধ্যায়ণরত রয়েছেন। দারিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া এই মেধাবী শিক্ষার্থী নিজের ইচ্ছাশক্তির প্রয়াসেই কৌতূহল থেকে তৈরি করেছেন এই বিমানটি। তিনি আগে থেকেই পরিত্যক্ত খেলনা সামগ্রীীর যন্ত্রাংশ সংগ্রহের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরি করতেন।
সরেজমিনে দেখা যায়. চারিদিকে সবুজ ধান ক্ষেত। তার মাঝেই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট্ট সাদা একটি বিমান। যা দেখতে ভিড় জমিয়ে আছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ।
মহেশপুর গ্রামবাসী ছাবেদা বেগম ও আতিকুর রহমান বলেন, সবুজ ছোট বেলা থেকেই বেশ মেধাবী। পরিবারে দারিদ্র বাবাকে আর্থিক সহযোগিতা করতে সে পাঠাকপাড়া বাজারে একটি দোকানে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে। মেকানিংক্যাল বুদ্ধিতে সবসময় কিছু না কিছু ছোট খাটো আবিষ্কার করতো সে। বর্তমানে তার আবিষ্কৃত চালক বিহীন বিমানটি উড়ছে আকাশে। সে আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরো কিছু চমক দিবে দেশবাসীকে।
সবুজ সর্দারের বাবা একরামুল সর্দার ও মা শেফালী বেগম বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি অভাবের তাড়নায় সবুজ একটি দোকানে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করতো। প্রায় সময় পড়ালেখার পাশাপাশি পরিত্যক্ত জিনিসপত্র দিয়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক জিনিস তৈরি করতো সে। প্রথমদিকে তার কর্মকা- দেখে বিরক্ত হতাম। এখন আনন্দ পাই। টিফিনের টাকা ও রোজগারের টাকা জমিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ কিনে বিমানটি বানিয়েছে সে। সবুজ এখন অনেকের কাছে ঈর্শার পাত্র। তার তৈরি বিমান আকাশে উড়ছে।
সবুজ সর্দার বলেন, ছোট থেকেই বিমানের প্রতি একটি কৌতূহলী কাজ করতো। আমি চেষ্টা করতার পরিত্যক্ত জিনিসপত্র দিয়ে কিছু না কিছু তৈরি করতে। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অনলাইনে অর্ডার দিয়ে একটি ছোট বিমান তৈরি করেছি। যার তৈরিতে সময় লেগেছে ৪৫ দিন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এটি এক চার্জে প্রায় ৩০ মিনিট আকাশে উড়তে সক্ষম। বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করতে রয়েছে একটি রিমোর্টকন্ট্রোলার। যা প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত কাজ করে। বিমানটির অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে ককসিট দিয়ে। পুরো বিমানের বডি তৈরি করতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে হয় বিভিন্ন দোকান থেকে। পড়ালেখার পাশাপাশি হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে বিমানের প্রয়োজনীয় অংশের ব্যয় নির্বাহ করি। এই বিমানটি নজরদারিসহ কৃষিক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরো বলেন, কৃষি কাজকে সহজ করতে কিটনাশক প্রয়োগে ব্যবহারের জন্য একটি ড্রোন আবিষ্কার করতে চাই। এমন প্রযুক্তি তৈরিতে বেশ ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। তাই সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশবাসীকে আরো চমৎকার উদ্ভাবন উপহার দেবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তার এই সাফলতা আসলেই প্রশংসনীয়। সে সহযোগিতা পেলে বিজ্ঞানে বেশ ভূমিকা রাখবে।
.
ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আপনার মতামত লিখুন: