লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট বাজারে খাস জমিতে দুই পরিবারকে ২৫ টি দোকান ভিটি বন্দোবস্ত দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।এই নিয়ে গোটা এলাকাব্যাপী চলছে সমালোচনার ঝড়। দুই পরিবারের সদস্যরা এতোগুলো ভিটি বন্দোবস্ত নেওয়ার পরেও এখনো প্রায় ১৫ টি ভিটির জমি অবৈধ দখল করে রেখেছেন তারা। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ১১ তারিখে ফজুমিয়ারহাট এলাকার ফজলে এলাহী শামিম,বেলাল হোসেন,উম্মে হানী হিরন,আব্দুল মালেক,হেলাল উদ্দীন ও মোঃ মোস্তফা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন যে,ঐ এলাকার হোসেন হাওলাদার ও তার ছেলে আকবর হোসেন আরজু হাওলাদার, হারুনুর রশীদ হাওলাদার,আক্তার হোসেন বিপ্লব হাওলাদার,শাহাদাত হোসেন শামীম হাওলাদার,আব্বাস উদ্দিন সুমন হাওলাদার,শওকত হাওলাদার এবং হোসেন হাওলাদারের দুই স্ত্রীর নামে ১০টি ভিটি বন্দোবস্ত দেন উপজেলা ভূমি অফিস। হোসেন হাওলাদারের কয়েকজন ভাতিজার নামে আরো ৭ টি ভিটি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এছাড়া বসির উল্লাহ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদুল্লাহ মিয়া ও তার এক ছেলে,দুই ভাই-স্ত্রী-ভাতিজা সহ তাদের এক পরিবারের নামে প্রায় ১০ টি দোকান ভিটি বন্দোবস্ত দেন ভূমি অফিস।.
এসব দোকান ভিটি একসনা বরাদ্দ নিয়ে তারা লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আবার ঐ দোকানগুলো অন্য লোকজনের নিকট বিক্রি করে দেন। সরকারী জমি একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। উপজেলা প্রশাসনের দুর্বল নজরদারির অভাবে সরকারী জমি যে যেভাবে পারছেন,দখল করে তা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছে। সরেজমিনে উপজেলার ফজুমিয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ফজুমিয়ারহাট বাজারটি সরকারের খাস জমিতে অবস্থিত। অসহায় ভুমিহীনদের মাঝে এই সব জমিগুলো বন্দোবস্ত দেওয়ার বিধান থাকলেও ফজুমিয়ারহাটে এই নিয়ম মানা হয়নি।এলাকার স্বচ্ছল এই পরিবারের লোকজন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাজারের এক তৃতীয়াংশ দোকানঘর বন্দোবস্ত নেন তারা।এক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে এসব দোকানঘরগুলো বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। বাকী দোকান ভিটিগুলো বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য পাঁয়তারা করছেন এই দুই পরিবারের লোকজন। অথচ ফজুমিয়ারহাট বাজারটি ঐ এলাকার জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ বাজার।এই বাজারে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াত বা চলাচল। দীর্ঘদিন থেকে বাজারে একটি টলঘর ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণের দাবী তুলে আসছেন এলাকাবাসী ও বাজার ব্যাবসয়াীরা। বাজারের ব্যবসায়ী,ক্রেতা-বিক্রেতাদের দাবী উপেক্ষা করে সরকারের এসব খাস জমিগুলো টাকার বিনিময়ে দুইটি প্রভাবশালী পরিবারকে ২৫ টি দোকান ভিটি বন্দোবস্ত দিয়েছেন ভূমি অফিস। টলঘর ও পাবলিক টয়লেটের জায়গা না রেখে এসব জমি বন্দোবস্ত দেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা ও ক্ষোভ। তারা এবিষয়ে জেলা প্রশাসকের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,হাওলাদার পরিবার ও মোহাম্মদুল্লাহ মিয়া পরিবারের ছেলে মেয়ে ভাই ভাতিজা সহ দুই পরিবারের আত্মীয় স্বজনের নামে ২৫ টি ভিটি বন্দোবস্ত নিয়েও তারা আরো প্রায় ১৫ টি ভিটির জমি দখল করে রাখেন। অন্যদিকে ফজুমিয়ারহাট বাজারের অবৈধ দোকান ভিটিগুলো স্থানীয় এসিল্যান্ড পুদম পুষ্প চাকমার নেতৃত্বে উচ্ছেদ করার পর আবার অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে ঐ জমিতে দোকান ভিটি নির্মাণ করা হয়।এই নিয়ে প্রশাসনের এই উচ্ছেদ অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়! গরীব অসহায় পরিবারগুলোকে বঞ্চিত করে উপজেলা ভূমি অফিস এসব প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে মেয়ে স্ত্রী সহ আত্মীয় স্বজনদের নামে সরকারী খাস জমিতে দোকান ভিটি বন্দোবস্ত দেওয়া নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা।স্থানীয়দের প্রশ্ন এতোগুলা দোকান ভিটি এই দুই পরিবারের নামে কি ভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়? অথচ ভুমিহীন অসহায় ব্যবসায়ী মানুষগুলোেকে উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে এসব অনিয়ম করা হয়ে বলে দাবী করেন স্থানীয়রা। এসব ভিটিগুলো নেওয়ার পরেও অতিরিক্ত আরো ১৫ টি ভিটির জায়গা মোহাম্মদুল্লাহ মিয়া ও হাওলাদার পরিবার দখল করে রেখেছেন। অভিযুক্ত হোসেন হাওলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মোহাম্মদুল্লাহ মিয়ার ছেলে মনিরুল ইসলাম রিপু জানান, এখানে আমাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি রয়েছে। সরকারী জমিতে আমাদের নামে কয়েকটি ভিটি আছে। বাকী ভিটিগুলো নেওয়ার জন্য আমরা আবেদন করে রেখেছি। আমরা সার্ভেয়ারকে বলেছি আমাদের রেকর্ডিয় জমিগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। তিনি আমাদের কোন কথায় শুনতে রাজি নয়। ফজুমিয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা ও কমলনগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ভিপি নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন,দুই পরিবারের নামে এতোগুলা দোকান ভিটি বন্দোবস্ত কি ভাবে দেওয়া হয় তা আমারও প্রশ্ন। এই ভিটিগুলো পাওয়ার যোগ্য গরীব অসহায় ব্যবসায়ীরা।কিন্ত তারা পননি। পেলেন রাগব বোয়ালরা। দিনের বেলা প্রশাসন এসে উচ্ছেদ করে।আর রাতের বেলায় আবার দোকান নির্মাণ করা হয়।এই হলো আমাদের প্রশাসনের অবস্থা। তিনি এসব অবৈধ দোকান ভিটি দখলমুক্ত করে গরীব অসহায়দের মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়ার দাবী জানান। স্থানীয় চরকাদিরা ইউনিয়ন ভুমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন,এগুলো আমি আসার আগেই বন্দোবস্ত দিয়েছেন। দুই পরিবারের নামে কেন এতো দোকান বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে?সেজন্য ডিসি স্যারের অফিস থেকে এসব বন্দোবস্ত নথিগুলো পেরত পাঠানো হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি পুদম পুষ্প চাকমার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন,সরকারী জমি দখল করে কেউ পার পাবেনা। এক পরিবার একটির বেশী দোকান ভিটি পাবেনা।গরীব ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এবিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
.
.
ডে-নাইট-নিউজ / নাসির মাহমুদ (লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি):
আপনার মতামত লিখুন: