• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

কমলনগরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে রমরমা ব্যবসা


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৬:০১ পিএম;
কমলনগরে  ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে রমরমা ব্যবসা
কমলনগরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে রমরমা ব্যবসা
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা মেঘনার ভাঙনে এ উপজেলার এক তৃতীয়াংশ এলাকা ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দেশের সবছেয়ে ছোট উপজেলা এটি। এ অঞ্চলের মানুষগুলো নদী ভাঙনের স্বীকার হয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরাঞ্চলের এসব সহজ সরল মানুষগুলোকে ভুলভাল ভুঝিয়ে একশ্রেণির লোক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে প্রতারণার ফাঁদ পেলেন। ছোট এ উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ১৯ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেই ৮ টি ডায়াগনস্টিক। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নাকের ডগায় মানহীন এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে নানান প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। 
 
 
 
সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একশ্রেণির অসাধু প্রভাবশালী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা করইতলা বাজার সহ গ্রামের বিভিন্ন হাটবাজার এলাকায় গড়ে উঠা ছোটবড় ১৯ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা চিকিৎসা সেবার নামে দরিদ্র, সহজ সরল মানুষগুলোকে জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা উপরমহলকে খুশি রেখে ডাক্তার-লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই তাদের রমরমা চিকিৎসা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে কিছু কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ না থাকায় চিকিৎসা সেবার নামে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সেবার নামে মানুষ ঠকানোর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেদারসে। 
 
 
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স এবং অদক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে চলছে এসব ভূয়া প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই ভালমানের ডাক্তার। নেই স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স, শ্রম অধিদপ্তর,ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নীরব থাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্য সেবার নামে কমলনগরে চলছে এক প্রতারণার ফাঁদ। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পুর্ন উদাসীন। 
 
জানা যায়, একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার ক্ষেত্রে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন/আয়কর প্রত্যয়নপত্র, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, শ্রম অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, নারকোটিক পারমিট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চুক্তিপত্রসহ বেশ কিছু কাগজপত্র ও অবকাঠামোগত বিষয় থাকতে হয়। এছাড়াও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিচালনার ক্ষেত্রে একজন টেকনোলজিস্ট ও দুজন টেকনিশিয়ান থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কমলনগর উপজেলায় এসব কিছুই নেই। শুধুমাত্র একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে অদক্ষ কিছু লোকজন বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। 
 
 
স্থানীয়রা জানান, উপজেলায় বেশীর ভাগ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই কোনো মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। নামমাত্র টেকনিশিয়ান দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা। কিছু কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ল্যাব পিয়ন, আয়া, বাবুর্চি দিয়ে এক্সরে, ইসিজি, রক্ত সংগ্রহ এবং টেকনিশিয়ান দিয়ে প্যাথলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, সেরোলজি ও হরমোনের কাজ করা হচ্ছে। যাদের নেই কোনো  প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা।  
 
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গড়ে উঠা ৮ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে  হাই কেয়ার নামের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই রেডিও গ্রাপার। নুন্যতম প্রশিক্ষণ নেই এমন লোক দিয়ে এক্স সহ নানা জঠিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা করানো হচ্ছে। 
 
স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার করইতলা বাজারে হাই কেয়ার, লাইফ লাইন ,নিউ উপকূল, ইনসাফ,গাইনি কেয়ার,দেশ মা মাটি, উপকূল,ফজুমিয়ারহাট বাজারে রয়েছে গ্রীন লাইফ,নিরাময়,মা ডিজিটাল,করুনানগর বাজারে রয়েছে-আযাদ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হাজিরহাট বাজারে আছে-নিউ মেঘনা, বিসমিল্লাহ-১, বিসমিল্লাহ-২ সহ এ উপজেলায় মোট ১৯ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে নিউ মেঘনা ও বিসমিল্লাহ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোন অনুমোদন নেই। বাকিগুলো থাকলেও অধিকাংশ মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসা সেবার মত গুরুত্বপূর্ণ এ সেক্টর চালচ্ছে। স্বাস্থ্য প্রশাসনের অবহেলা আর অবৈধ লেনদেনকে দায়ী করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
 
 
অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা.সোহেল রানা সরকারি হাসপাতালে ঠিকমত ডিউটি না করে হাই কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে মানহীন এ প্রতিষ্ঠানে বসে সারক্ষন রোগী দেখেন। এতে হাসপাতালে আসা সেবা প্রার্থীরা ডা. সোহেল রানার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। একজন সরকারি ডাক্তার কি ভাবে মানহীন এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসেন তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। এব্যাপারে ডা. সোহেল রানা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি তো হায় কেয়ারের মালিক নই। হায় কেয়ার কোন অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আপনার লেখেন আমার কোন অসুবিধা নেই।
 
বিসমিল্লাহ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন,আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল নীতিমালা মেনেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছি।
 
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান বলেন, কমলনগর উপজেলার ১৯ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে মাত্র দুটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোকে পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ছাড়পত্র দেয়নি। 
 
 
শ্রম অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক প্রকৌশলী শরীফ আহাম্মেদ আজাদ বলেন, এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধীনে থাকা শ্রমিকের স্বার্থগুলো মুলত আমরা দেখা শুনা করি। অন্য অভিযোগ নিয়ে তিনি সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলবেন বলে জানান। 
 
 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা.কাজী একরামুল হক বলেন, রেজিস্ট্রেশন ও নবায়নবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রাখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে। ম্যানেজ করে চলার বিষটি সত্য নয়। এবং যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
 
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আহাম্মদ কবীর বলেন,এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে তালিকা প্রেরণ করেছি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির স্বীকার না হয়, সে বিষয়ে মনিটরিং করছি। 
.

ডে-নাইট-নিউজ / লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ