• ঢাকা
  • রবিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ২০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

গ্রাম বাংলার সেই পাচুনাপিত মারচে লিউস কিস্কু


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫০ পিএম;
গ্রাম বাংলা,  সেই পাচুনাপিত,   মারচে লিউস কিস্কু
গ্রাম বাংলার সেই পাচুনাপিত মারচে লিউস কিস্কু

চুল কাটালে এক আনা, চুল দাঁড়ি দুই আনা, একসাথে দুই করালে, মালিশ বিনামূল্যে। গ্রামবাংলায় আগে এমনি ডেকে ডেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুল-দাঁড়ি কাটতেন সে সময়ের নাপিতরা। যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। এখন এমনি চিত্র শুধুই দেখা মিলে ঠাঁকুমার ঝুঁলি কাটুনে। বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নাপিতদের দেখা মিলে শুধুই বাহারি সাজে সজ্জিত সেলুনে। গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে কিছু নাপিত দেখা গেলেও তারা আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজের সন্ধান করেন না। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া পুরনো সেই দৃশ্যে দেখা গেলো মারচে লিউস কিস্কুকে। না তিনি সেই যুগের কোনো নাপিত নয়, তিনি বর্তমান আধুনিক যুগেরই একজন নাপিত। বংশপরম্পরায় নাপিত না হলেও, জীবিকার তাগিদে বেঁছে নিয়েছেন এই কর্ম।.

 .

তিনি ঠাঁকুমার ঝুঁলি কাটুনে দেখা সেই দৃশ্যের মতোই গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাটছেন চুল, দাঁড়ি-গোফ। সঙ্গে নিয়ে যান একটি চুল-দাঁড়ি কাটা যন্ত্রের ব্যাগ ও একটি প্ল্যাস্টিকের চেয়ার। সেসব নিয়ে সারাদিনে প্রায় ৪-৫টি গ্রামে ঘুরেন তিনি। আর ঘুরে ঘুরে যা কাজ করে অর্থ পান তা দিয়েই চলে এই ভ্রাম্যমান নাপিতের সংসার।.

 .

মারচে লিউস ‍কিস্কুর বয়স মাত্র ৩৮ বছর। তিনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামের মৃত চরকা কিস্কুর ছেলে। স্ত্রী বাহামনি মুর্মু ও একবছর বয়সী ছেলে মতিরাম কিস্কুকে নিয়ে তার সংসার। অভাবের এই সংসারে বাহামনি মুর্মুও বসে নেই, তিনিও ডাক পেলে ছুটের কৃষিকাজে।.

 .

জানা যায়, বংশীয় পেশা কৃষি ও গৃহস্থের কাজ হলেও ২৫ বছর বয়সে নাপিতের কাজ শেখেন মারচে লিউস কিস্কু। এরপর নিজেই একটি বাঁশবেঁড়া চালা দিয়ে বড় একটি আয়না টানিয়ে বাড়ির সামনের মোড়ে শুরু করেন সেলুন ব্যবসা। কিন্তু গ্রামে লোকজন কম। বাহিরে কেউ আসে না সেখানে কাজ করাতে। তাই সারাদিন যা আয় হচ্ছিল তা দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে তার। তাই পরে শুরু করেন ভ্রাম্যমান চুল-দাঁড়ি কাটার ব্যবসা। সকাল হলেই একটি চুল-দাঁড়ি কাটা যন্ত্রের ব্যাগ ও একটি প্ল্যাস্টিকের চেয়ার নিয়ে ছুঁটেন এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টি গ্রাম ঘুরে করেন কাজের সন্ধান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার নানা বয়সী পুরুষের চুল-দাঁড়ি কেটে মোটামুটি যা রোজগার হয়, তা দিয়েই চলছে এখন তার সংসার।.

 .

উপজেলার বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামের মানেস হেম্ব্রমের খোলাতে (উঠাঁনে) গ্রামের লোকজনের চুল কাটার সময় দেখা মেলে মারচে লিউস কিস্কুর। রাজেন কিস্কু নামের একজন গ্রাহকের চুল কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি। চুল ও দাঁড়ি কাটার অপেক্ষায় রয়েছে আরো দুইজন শিশুসহ চারজন।.

 .

মারচে লিউস কিস্কুর গ্রাহক মানেস হেম্ব্রম বলেন, আগে আশপাশের হাটে কিংবা ফুলবাড়ী শহরে গিয়ে চুল ও দাঁড়ি কাটতে হতো। এতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হতো বাড়ীর শিশু-কিশোরদের চুল কাটা নিয়ে। কিন্তু এখন মারচে লিউস কিস্কু সেলুনের কাজ শেখে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুল ও দাঁড়ি কাটার কাজ করায় তার যেমন আয়ের পথ হয়েছে, তেমনি গ্রামের মানুষেরও অর্থ ও সময় দুটোই বেঁচে যাচ্ছে।.

 .

পাতরাজ কিস্কু নামের গ্রামবাসী বলেন, আগে ফুলবাড়ী পৌরশহরের সেলুনে গিয়ে চুল ও দাঁড়ি কাটতে হতো। এতে অনেক বেশি টাকা ব্যয় হতো। এছাড়াও ছিল যাতায়াত ভাড়া। কিন্তু মারচে লিউস কিস্কুর এখন গ্রামে এসে চুল ও দাঁড়ি কেটে দেওয়ায় যাতায়াত ভাড়ার অর্থ যেমন বেঁচে যাচ্ছে তেমনি অল্প টাকায় নিজের চুল ও দাঁড়িয়ে কেটে নেওয়া যাচ্ছে।.

 .

মারচে লিউস কিস্কু বলেন, ছোটকাল থেকেই কৃষি কাজে তার মন বসতো না তার। এজন্য তিনি ভিন্ন পেশার খোঁজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন সেলুনের কাজ শিখবেন। যোগাযোগ করেন ফুলবাড়ী পৌরশহরের এক সেলুনের দোকানে। কাজ সেখানে বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন ওই সেলুন মালিক। কিন্তু টাকার অভাবে সেখানে কাজ শেখা হয়নি মারচে লিউস কিস্কুর। এর ছয়মাস পরেই তার বন্ধু লেজারুস কিস্কু ভারতের মুম্বাই থেকে সেলুনের কাজ শিখে ফিরে আসে গ্রামে। পরে সেলুনের দোকান দেন উপজেলার আটপুকুর হাটে। সেই বন্ধুর কাছে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার এই দুইদিন কাজ শেখেন মারচে লিউস কিস্কু। ছয় মাস কাজ শেখার পর নিজের গ্রামের মোড়ে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার বসিয়ে শুরু করেন সেলুনের ব্যবসা। কিন্তু এতে তেমন আয় রোজগার না হওয়ায় শুরু করেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে চুল ও দাঁড়ি কাটার কাজ। এতে বড়দের চুল কাটার মজুরি ৩০ টাকা. দাঁড়ি কাটা ২০ টাকা এবং বাচ্চাদের চুল কাটা ২০ টাকা নিয়ে থাকেন। তবে অনেকেই এর চেয়ে কমও মজুরি দিয়ে থাকেন। এতে করে দিনে গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়ে থাকে। এছাড়াও তার স্ত্রীও কৃষি কাজ করায় সেখান থেকেও বাড়তি আয় আসে। সব মিলিয়ে স্বামী-স্ত্রী ও এক ছেলে  নিয়ে তাদের সংসার সাচ্ছন্দেই চলে যাচ্ছে। .

.

ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ ফুলবাড়ী প্রতিনিধি

বিনোদন বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ