• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

ফুলবাড়ীতে সিসা বিষক্রিয়ায় গরু মৃত্যুর ঘটনায় গরু বিক্রির হিড়িক, থামছে না গরুর মৃত্যু ও আক্রান্তে


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:২৫ পিএম;
ফুলবাড়ীতে সিসা বিষক্রিয়ায় গরু মৃত্যুর ঘটনায় গরু বিক্রির হিড়িক, থামছে না গরুর মৃত্যু ও আক্রান্তে
ফুলবাড়ীতে সিসা বিষক্রিয়ায় গরু মৃত্যুর ঘটনায় গরু বিক্রির হিড়িক, থামছে না গরুর মৃত্যু ও আক্রান্তে

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আলোচিত অজ্ঞাত রোগে গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতির মুখ থেকে বাঁচতে স্বল্পমূল্যে গরু বিক্রি করছেন স্থানীয় খামারীরা। মৃত্যু ও আক্রান্তের ঘটনা থেমে নেই। প্রতিনিয়তই আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গরুগুলো। ইতোমধ্যে প্রায় ২৮ টি গরু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুরুতে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের অনীহা থাকলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদের পর নাড়া দিয়ে ওঠেছে তারা।
    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর, সূর্যপাড়া গ্রাম এবং বেতদীঘি ইউনিয়নের নন্দলালপুর, মহেশপুর গ্রামের মাঝখানে পাকড়ডাঙ্গার রাস্তার পাশে নির্মাণ করা হয়েছিল একটি ব্যাটারি কারখানা। এলাকায় গরু মারা যাওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে ওই স্থান ছেড়ে চম্পট দেয় কারখানাটি। তবে ওই স্থানে রয়েছে ব্যাটারির বিষাক্ত বর্জ্যসহ ঝাঁঝালো গন্ধ। আশপাশের জমিতে ওই বর্জ্যরে বিষক্রিয়াযুক্ত সিসা ছড়িয়ে পড়ায় সেই জমিগুলোর ঘাস-খড় খেয়ে মৃত্যু ঘটছে গরুগুলোর।
    বাসুদেবপুর গ্রামের বাদশা হোসেন জানান, তার গরুসহ পাশপাশের গ্রামের প্রায় ২৮ টি গরু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার তিন মাসের বাছুর রেখে মারা যায় বাদশা হোসেনের একটি গাভী গরু। সেই আতঙ্কে তিনি বাকি দুটো গরু বিক্রি করেছেন। বাদশা হোসেনের গোয়াল এখন গরুশূন্য। সম্বল বলতে শুধু এখন মাতৃহারা তিনমাসের বাছুরটি।
জানা যায়, আক্রান্ত গরুর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় বাসুদেবপুর, সূর্যপাড়া গ্রামের গৃহস্থ-কৃষকরা ক্ষতির মুখ থেকে রেহাই পেতে বাধ্য হয়ে বিক্রি করছেন গোয়ালের গরু। গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত গ্রামের প্রায় ৩০/৩৫ টিরও বেশি গরু বিক্রি করেছেন ভুক্তভোগীরা। বাদশা হোসেনের ২টি, মন্টু ১টি, জহুরুল ১টি, মিনার ১টি, আনোয়ার ২টি, হাফিজ ৩টি, মুকুল ২টি, মিজান জামাই ১টিসহ আরো অনেকে বিক্রি করেছেন পাশাপাশি অনেকে নিয়েছেন বিক্রির প্রস্তুতি। 
নন্দলালপুর, মহেশপুর গ্রামের সুলতান হোসেনের ৭ টি গরুর মধ্যে ৩ টি আক্রান্ত হলে ৭টি গরুই তিনি বিক্রি করে দেন। এছাড়াও একই গ্রামের মুক্তার হুজুর ৪ টি, মোশাররফ ১টি, বেলালের ৩টি, ইউনুসের ১ টি, এবং আজাহারের ১টি গরুর মৃত্যু ঘটে। অপরদিকে,  মোস্তফার ১টি গরু অসুস্থ হলে তিনি  জবাই করেন। আতাউর রহমানের ১ টি আক্রান্ত হলে হোমিও চিকিৎসা চালাচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, গত ২০/২৫ দিন ধরে গরু আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গৃহস্থ কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে গেলেও তিনি কোনোপ্রকার পদক্ষেপ নেন’নি। তিনি নিশ্চিন্তে ছুটিতে আছেন। তাকে ফোন করা হলে তিনি বলছেন ‘আমি ছুটিতে আছি আপনার আমার অফিসে যোগযোগ করুন। ’ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এতো ক্ষতির মুখোমুখি হতোনা কৃষকরা। 
এবিষয়ে ওই ব্যাটারি কারখানার সত্ত্বাধিকারী মো. আক্তারুল ইসলামের সাথে তার মুঠোফোনে (০১৭৪৪-২১২৭২৮) একাধিকবার ফোনকল করা হলে মুঠোফোনটি সুইচঅফ পাওয়া যায়। 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন মো. নেয়ামত আলী বলেন, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা তার মায়ের অসুস্থতার কারণে ছুটিতে আছেন। গরু মারা যাওয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানের কৃষকদের সচেতন করাসহ ওই এলাকার ঘাস ও খড় পশুকে না খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ওই ব্যাটারি কারখানাটির বর্জ্য ও ফসলি জমির নমূনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি সিসা বিষক্রিয়ার করণেই ঘটেছে।  
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ওই এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।#.

গরুর মৃত্যুপূর্ব উপসর্গ:
প্রথমে গরু ঝিমমেরে না খেয়ে থাকে। পাগলের মতো মাথা মোচড়াতে থাকে। দাঁত শব্দকরে কামড়াতে থাকে। মুখে ফেনা বের করে। ছটপট করতে করতে ১/২ ঘন্টা কিংবা ১ দিনের মধ্যেই গরু মারা যায়।
কারখানার মালিক কে এবং যে জায়গা বেছে নিল :
ফুলবাড়ী উপজেলার ৬ কি.মি. দক্ষিণে মাদিলা হাট যেতে মাঝপথে পাকড়ডাঙ্গা। রাস্তার পাশেই এই ব্যাটারি কারখানাটি।উত্তর দক্ষিণে দুইর্বগ কি.মি. এবং র্পূব পশ্চিমে পাঁচ র্বগ কি.মি.  জুড়ে জনশূন্য আবাদি জমি। বাসুদেবপুর  থেকে মহেশপুরের দূরত্ব দুই কি.মি.। এই ৪ গ্রামের মাঝখানে নির্জন এলাকায় গত ইরি ধান কাটার সময় (মে মাস) কারখানাটি স্থাপিত। মালিক মো. আক্তারুল রংপুরে বাড়ি।
বর্জ্যরে বিষক্রিয়ায় মাছের মৃত্যু :
কারখানাটির পাশদিয়ে যে খাড়ি বা ক্যানেল প্রবাহিত হয়ে গেছে তাতে এবার কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকের ধারণা এই বিষক্রিয়ায় মাছের মৃত্যু হয়েছে।
যেভাবে কারখানাটির পলায়ন:
গরুর মৃত্যু সংবাদটি চারিপাশসহ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে ধান কাটার অজুহাতে ২৯/৩০ ডিসেম্বর রাতারাতি মালামাল সরাতে থাকে। জেনারেটর, হাওয়া মেশিন, শ্যালো মেশিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বাসুদেবপুরের ফরিদ, আরিফুলের বাসায় রেখে পরে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাতের আধাঁরে শরিফ, জিয়ারুল,আরিফুলের  সহযোগিতায় মালিক মালামাল নিয়ে যায় চম্পট দেয়।
 . .

ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

সারাদেশ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ