আদি বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। আদি উৎসবের মধ্যে পলো দিয়ে মাছ শিকার করা একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন বিশ্বনাথের গোয়াহরি গ্রামের মানুষ। ঐহিত্যের ধারাবাহিকতায় আজ সম্পন্ন হল বিশ্বনাথের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের বড়বিলে পলো বাওয়া উৎসব।.
.
গ্রাম বাংলার পুরোনো একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব হচ্ছে পলো বাওয়া। একসময় গ্রামজুড়ে র্বষা মৌসুম বা শীতের শেষে শীতকে উপক্ষো করে বাঁশ দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি পলো দিয়ে নদী-নালা ও খালবিলে সারিবদ্ধভাবে মাছ শিকার করতে দেখা যেতো মানুষদের। কিন্তু কালের বির্বতনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই পলো বাওয়া উৎসব। কমে গেছে হাওয়র-বাওয়র, বিল খালে সংখ্যা। মিঠা পানিতে উৎপাদিত মাছের পরিমান দিনদিন কমছে। মাছ কমুক তাতে কি উৎসবে ভাটা পড়বে? অবশ্যই না। ঐতিহ্য বিলুপ্ত হোক তা অবশ্যই কাম্য নয়। যে সকল ঐতিহ্য বিলুপ্ত হচ্ছে তা ঠিকিয়ে রাখতে চলছে তৎপরতা। বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সিলেটের বিশ্বনাথে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মাছ ধরার উৎসব ‘পলো বাওয়া পালিত হয়েছে।.
.
.
বুধবার ১৫ (জানুয়ারী) পহেলা মাঘ আবহমান কাল ধরে চলে আসা নিয়ম অনুসারে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলে পলো বাওয়া উৎসব সম্পন্ন হল। পলো বাওয়া এই উৎসবে সকাল ১১টা থেকে সবাই এক সঙ্গে বিলে নেমে পড়েন মাছ শিকার ধরতে। এতে গোয়াহরি গ্রামের সৌখিন কয়েকশত ছোটবড় মাছ শিকারী অংশ নেন। পঞ্চায়েতী সিদ্ধান্ত মোতাবেক গোয়াহরি গ্রামের মানুষ ছাড়া অন্য গ্রামের কেই এই পলো বাওয়ায় অংশগ্রহন করার সুযোগ নেই।.
.
.
এই উৎসবে দুর-দুরান্তের নানা বয়সের লোকজন, শিশু থেকে বৃদ্ধ, যে যার মতো পলো বাওয়া উৎসব দেখতে সমবেত হন।। বেলা ১১ ঘটিকায় পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে বিলের মধ্যে নানা বয়সের মানুষ মাছ ধরতে নামেন। বিলের পারে বসে তাদের মাছ ধরা দেখতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন বিভিন্ন বয়সের উৎসব উপভোগে আসা মানুষজন । ঝপাশ-ঝপাশ শব্দের তালে মুখরিত হয় বিলে চারপাশ। স্বল্প পানি ও কচুরিপানা না থাকায় মাছ শিকার নিয়ে ঘরে ফিরছেন অনেকেই। অনেকের ভাগে জুটেনি বড় মাছ। শিকার করা মাছের মধ্যে ছিল বোয়াল, শোল, , কার্প, বাউস, গনিয়া, ও রুইসহ বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ। মাছ শিকারে অংশ নেন প্রবাস থেকে আসা গ্রামের অনেক বাসিন্দাও।.
.
.
স্থানীয় গোয়াহরি গ্রামের মুরব্বি ছুরত খান, তারিজ আলী বলেন, এই উৎসব আনুমানিক তিনশত বৎসর ধরে চলে আসছে। মাঘ মাসের প্রথম দিনে প্রতি বৎসর গ্রামবাসী ঐকবদ্ধ ভাবে উৎসব মূখর পরিবেশে এ ঐতিহ্য পালন করে আসছেন। তবে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না, মাছ পাওয়া না গেলেও আনন্দ ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে পঞ্চয়াতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই উৎসব পালন করি আমরা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দূর দূরান্তের আত্মীয়-স্বজনও আমাদের গ্রামের বাড়ীতে আসেন। আমরা চাই ভবিষ্যতেও এই ধারা চলমান থাকুক। মিডিয়ার কল্যাণে দেশ বিদেশে এই উৎসবের আমেজ পৌছে দেওয়া, উপভোগ করার আহবান রাখেন মিডিয়া কর্মীদের কাছে।.
.
পলো বাওয়া উৎসব দেখতে দূর-দূরানন্তের এবং আশে পাশের গ্রামের শত শত মানুষ বিলের পাড়ে উপস্থিত হয়ে উৎসব উপভোগ করেন।.
ডে-নাইট-নিউজ / মো. সায়েস্তা মিয়া ,বিশ্বনাথ প্রতিনিধি
আপনার মতামত লিখুন: