লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি : জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা আ.লীগের সহসভাপতি ও চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। একসময়ের আলোচিত রাজাকারপত্র হয়ে যান আ.লীগের শীর্ষ নেতা। দলের পদ ভাগিয়ে নিয়ে হলেন ইউপি চেয়ারম্যান। সেখান থেকে বনে জান চরে গড়ে উঠা বিভিন্ন ডাকাত বাহিনীর গডফাদার। হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এক সময়কার দাপুটে এ নেতার বিরুদ্ধে জলদস্যু ও ভূমিদস্যুদের গডফাদার, দালালী, পরিষদে আসা সামাজিক সুরক্ষা প্রাপ্তদের তুচ্ছ কথায় মারধর, বিভিন্ন মামলার তদবিরবাজী, ভূমিহীনদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, ভিজিডি খাদ্যশস্য নিতে আসা জেলেদের মারধর, দরিদ্র মহিলাদের ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে প্রতারণা সহ ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
জানা যায়, মেঘনার বুকে জেগে উঠা (নতুন চর) চরগজারিয়া, তেলির চরের চাষাবাদকারী সাধারণ ভূমিহীনদের কাছ থেকে চাষাবাদ অথবা বসবাসের নিমিত্তে মৌসুম ভিত্তিক চাঁদা আদায় করা হয়। চরে দখল কৌশল সহ যেকোন বিষয়ে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করতেন। মেঘনার ওপাড়ে জেগে উঠা চরগজারিয়ার চরাঞ্চলকে নিজের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার ও আর্থিক সুবিধা সহ সকল নিয়ন্ত্রণ দেখবাল করার জন্য প্রত্যক্ষ ভাবে দেখাশুনা করতেন শেখ ফরিদ, শেকা ডাকাত, খোকান ডাকাত এবং ফকরা ডাকাত নামের কয়েকটি ডাকাত বাহিনী। আর মেঘনার এপাড় থেকে এসব ডাকাত বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ডাকাত সর্দারদের দিয়ে সাধারণ ভূমিহীনদের কাছ থেকে জমি চাষাবাদ কিংবা বসবাসের ক্ষেত্রে আদায় করে মৌসুম ভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা। অন্যথায় তাদের উপর নেমে আসে নারকীয় বর্বরতা। চরাঞ্চলের গরু-মহিষের চারণভূমি ইজারা দিয়ে লিটন চৌধুরী বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেন বলে জানা যায়। নতুন জেগে ওঠা লম্বাখালী নতুন আবদুল্লার চরের চাষাবাদের ভূমি বন্টন করে সেখান থেকে তিনি বিরাট অংকের টাকা হতিয়ে নেন। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দ্বীপ চরবাসী জানান, চোর ডাকাতদের সকল অপকর্ম উপরে বসে ম্যানেজ করেন “লিটন চৌধুরী”। তিনি প্রায়ই চোর ডাকাতদের নিয়ে নৌবিহারে যেতেন। এমন একটি ছবিতে দেখা যায় নৌযানের চেয়ারে বসে আছেন লিটন চৌধুরী লাল গেঞ্জিপরা দাড়িয়ে আছে শেকু ডাকাত, তার ডান পাশে বসে আছে বর্তমান চরাঞ্চলের মূর্তিমান আতংক ও নিয়ন্ত্রক শেকু ডাকাত, কালো শার্ট পরা দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তি খোকান ডাকাতের ডান হাত বিশ্বস্ত সহযোগী ফকরা ডাকাত। লিটন ও তার বাহিনী ডাকাত, ভূমিদস্যু, জলদস্যুদের জ্বালায় অতিষ্ট ওই চরাঞ্চলে বসবাসকারীরা সহ পুরো রামগতিবাসী।.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। যে মুখ খুলে তার বিরুদ্ধে নেমে আসে মামলা, হামলা ও নির্মম নির্যাতন। এরকম একজন ভুক্তভোগী চরআবদুল্লা ইউনিয়নের ইউনুস মাঝির ছেলে আবদুর রব মাঝি। সে বাদী হয়ে লিটন চৌধুরীর বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার বরাবরে ন্যায় বিচারের আশায় খোকন ডাকাত, শেকু ডাকাত ও লিটন চৌধুরীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আবদুর রব ভূষা মালের ব্যবসার পাশাপাশি তার ৩০টি গরু ও ৫০টি মহিষের বাথান রয়েছে। গত ১৭ আগষ্ঠ দুপুরের দিকে চরগজারিয়ার কামাল বাজারে শেকু ও খোকন ডাকাতের নেতৃত্বে তার বাথান ঘরে হামলা করে এবং গরু প্রতি ৫০০/- টাকা চাঁদা দাবি করে। পুরো চরে ২০/২৫ হাজার গরু ও মহিষের বাথান রয়েছে। এসব গরু ও মহিষ লালন পালন করতে হলে তাদেরকে চাঁদা দিতে হবে। এই হারে তারা চাঁদা আদায় করে থাকে। নেতাদের কাছে বিচার দিলেও পাওয়া যায়নি ন্যায় বিচার। এ চরে স্থানীয় এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে পালন করতেন লিটন চৌধুরী।.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চরের খোকন ও শেকু ডাকাতের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জনের বহিরাগত ডাকাত দল রয়েছে। তারা ভোলা, নলেরচর, হাতিয়া, স্বন্দীপ, রামগতি ও নোয়াখালীর সুবর্ণচর থানায় দায়ের হওয়া অসংখ্য মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী। এদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
এক সময়ের চিহ্নিত রাজাকার পরিবারের সন্তান লিটন চৌধুরীর সাম্রাজ্য শুধুমাত্র নদী কিংবা চরাঞ্চলের মধ্যে সীমাবন্ধ নেই। তার সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটেছে রামগতিতে একমাত্র খাসজমিতে ভরপুর চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের মাটির দিকে। সেখানে তার সাম্রাজ্য বিস্তারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে কাজ করেন হোরণ ডাকাত । চরপোড়াগাছা ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকা, স্টীল ব্রীজ ও কোডেক কলোনী এলাকায় তিনি সরকারের খাস জমিতে দোকান-ভিটা বন্দোবস্ত দিয়ে নদী ভাঙ্গা অসহায় মানুষকে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। স্টীলব্রীজ এলাকায় ক-খ গ্রুপের মহিলাদের ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার নামে তাদের কাছ থেকে বিরাট অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। যে স্থানটি দেখিয়ে তিনি চাঁদাবাজি করছেন, সে স্থানটি ৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে লিটন এসব অপকর্ম করে গেছেন।.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সকালে হঠাৎ উপজেলার রামদয়াল বাজারে অবস্থিত চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদে আসলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা ধাওয়া করলে তাদের তোপের মুখে ইউনিয়ন পরিষদ ছেড়ে পালালেন লিটন চৌধুরী। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সূত্র জানায়,লিটন চৌধুরীর বাবা মুজাহারুল হক চৌধুরী ১৯৬০ সালে মুসলিমলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান ও শান্তি কমিটির আঞ্চলিক নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে তার মেঝো ভাই খবিরুল হক চৌধুরী মুসলিমলীগের চেয়ারম্যান ও শান্তি কমিটির দায়িত্ব পালন করেন। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
তার দুই বোন জামাই সাবু উকিল ও সারু উকিল বৃহত্তর নোয়াখালী শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন। তার বড় বোন ও ভগ্নিপতীকে মুক্তিযোদ্ধারা স্বপরিবারে হত্যা করে। যুদ্ধোত্তর এই পরিবার বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়। লিটন চৌধুরীর রামগতি থানা বি এন পির সহ সভাপতি ছিলেন। নিজের অবস্থান ও পরিবারকে রক্ষার্থে সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা সিএসপি আবদুর রব চৌধুরীর হাত ধরে আ’লীগে যোগ দেন লিটন চৌধুরী। ২০০৮ সালে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অবঃ)আব্দুল মান্নান মান্নানের কুলা মার্কার ভোট করে নৌকা থেকে ছিটকে পড়েন। ২০১৪ সালে এসে আবার নৌকা প্রতিকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে ভোট করে আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুনের ডান হাত হিসেবে রামগতির চর গজারিয়ায় একক আধিপত্য বিস্তার করেন তিনি। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
এছাড়া সাধারণ এক জেলেকে মারধরের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। সে মামলায় তার সাজাও হয়েছে। সচেতন সমাজের দাবী,রামগতির চরগজারিয়ার ডাকাত বাহিনীর গডফাদার জাকির হোসেন লিটন চৌধুরীর অতিতের কার্যক্রমের তদন্তপূর্বক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে রামগতি উপজেলাকে চুরি,ডাকাতি,ভূমিদস্যুতা মুক্ত করা হোক। এবিষয়ে জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সামাজিক ভাবে হেয় করার জন্য এসব করা হচ্ছে। আমি কখনো এসব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলামনা। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রামগতি থানার ওসি মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন বলেন, চরগজারিয়ার বিভিন্ন ডাকাত বাহিনীর নামে অসংখ্য মামলা চলমান। লিটন চৌধুরীর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। ডাকাত বাহিনীর সাথে তার সখ্যতা থাকতে পারে। আমি এই থানায় আসার পর মুলত পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। কাজ করার সুযোগ পায়নি। তার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।.
. .
ডে-নাইট-নিউজ / নাসির মাহমুদ
আপনার মতামত লিখুন: