ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মৃত্যুর ছয় মাসেও গঠন করা হয়নি প্যানেল চেয়ারম্যান
ডে-নাইট-নিউজ ;
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ০৬:১০ পিএম;
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মৃত্যুর ছয় মাসেও গঠন করা হয়নি প্যানেল চেয়ারম্যান
কমলনগরের চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন মাষ্টারের মৃত্যুর ছয় মাস পেরুলেও এখনো পর্যম্ত প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। প্যানেল চেয়ারম্যান না থাকায় চারিত্রিক সনদ, নাগরিকত্ব, জন্মনিবন্ধন বা এ ধরনের সনদ সংগ্রহ করতে ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সীমাহীন হয়রানির শিকার হতে হয়। এলাকার লোকজন ও ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিগত ১৭ই মে ২০২৪ ইং চরলরেন্স ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন মাষ্টার মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর দুইদিন পর ১৯ মে
ইউনিয়নটিতে চেয়ারম্যান পদটি শুণ্য ঘোষনা করে পরিপত্র জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরপর দীর্ঘ ছয় মাস অতিবাহিত হলেও জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে কাউকেই প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়নি। ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, চরলরেন্স ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ছয় মাস আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। আজও ইউনিয়নটিতে প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়নি। লোকজন জরুরী প্রয়োজনে কাগজপত্রে সই করাতে মাসের পর মাস হন্নে হয়ে ঘুরাঘুরি করছে।
এবিষয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে পরিষদের একজন সদস্য জানান, চেয়ারম্যান নুরুল আমিন মাষ্টার মৃত্যুর আগে ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুল খালেককে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করে একটি রেজুলেশন তৈরি করেন। ওই রেজুলেশন বইতে সদস্যরা স্বাক্ষরও করেন।কিন্তু এরপর কিছু সদস্য ১ নং ওয়ার্ড সদস্য নিজাম উদ্দিনকে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করেন । এই বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষ দ্বন্দ্ব করে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যে কারণে কেউই প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান, দুইজন সদস্যের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান পদের লড়াইয়ের কারণে ইউনিয়নের কয়েক হাজার সেবাপ্রত্যাশী মানুষ গত ছয় মাস ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এতে উপজেলা প্রশাসনেরও কোনো উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে, প্যানেল চেয়ারম্যান না থাকায় কার্যত পরিষদটিও অচল হয়ে পড়েছে। মো. রাকিব হোসেন নামে এক প্রবাসী এই প্রতিনিদির কাছে অভিযোগ করে জানান, দু’মাসের ছুটি নিয়ে তিনি দেশে এসেছেন। পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি একখন্ড জমি বিক্রি করেছেন। বিক্রীত জমিটি রেজিস্ট্রি দিতে ওয়ারিশ সনদের প্রয়োজন হওয়ায় এযাবত ৬ দিন তিনি পরিষদ কার্যালয়ে গিয়েছেন। কিন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে কেউ না থাকায় ওয়ারিশ সনদে সই করাতে পারছেননা। তিনি বলেন, ছুটি শেষের পথে অথচ জমিটি এখনো রেজিষ্ট্রি দিতে পারিনি। জানিনা এই ‘সইয়ের’ জন্য আর কত দিন এভাবে ঘুরতে হবে। একইভাবে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রেদওয়ান হোসেন জানান, পরিবারের অভাব গোছাতে প্রবাসে যেতে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন তিনি। কিন্তু মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলবসত বয়স কম হওয়ার কারণে চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র দরকার । এ পর্যন্ত বহুবার পরিষদে গিয়েছেন শুধু চেয়ারম্যানের ‘সইয়ের’ জন্য প্রত্যায়ন নিতে পারছেননা।
লরেন্স ইউপি কার্যালয়ের সিচিব সাইফুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের মৃত্যুর পর থেকে কর্তৃপক্ষ এখনো কাউকে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেননি। সেবাপ্রার্থীরা চেয়ারম্যানের সই নিতে না পারায় নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: ফিরোজ আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান না থাকার কারণে আমরা সাধারন মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। লোকজন জন্মনিবন্ধন সনদ, ওয়ারিশ সনদ ও মৃত্যু সনদের জন্য এসে ফেরত যেতে হচ্ছে।
এবিষয়ে ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবু বকর ছিদ্দিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ,জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রে সই করাতে নারী-পুরুষরা এসে পরিষদের কার্যালয়ে এসে ভীড় জমান। চেয়ারম্যানের সইয়ের জন্য দিনের পর দিন এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করে মানুষ। লোকজন আমাদেরকে গালমন্দ করে। এতে আমরা লজ্জিত ও চরম অসহায়ত্ববোধ করি। তিনি আরও বলেন, অনেক ইউনিয়নে চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে থাকার কারণে তাদের জায়গায় প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ এ ইউনিয়নটিতে চেয়ারম্যান মারা গেছে ছয় মাস হয়। এখনও প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করা হয়নি। বর্তমানে পরিষদের চেয়ারম্যানও নাই, প্যানেল চেয়ারম্যানও নাই। জনগণের ভোগান্তি লাগবে কর্তৃপক্ষেরও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেই।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবদুল খালেক জানান, উচ্চ আদালত তাকে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ (জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে রায় প্রদান করেছেন। রায়ের কপি হাতে পেতে কিছুদিন সময় লাগবে। অন্যদিকে নিজাম উদ্দিনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, ওই ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন নিয়ে আইনি জটিলতা রয়েছে। খুব শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান ।
উল্লেখ্যযে,স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৬১ নং আইনের (১) উপধারা মতে পরিষদ গঠন (চেয়ারম্যান নির্বাচিত) হওয়ার পর প্রথম অনুষ্ঠিত সভার ত্রিশ কার্য দিবসের মধ্যে অগ্রাধিকারক্রমে সদস্যগণ তাদের মধ্যে থেকে তিন সদস্যের ‘চেয়ারম্যান’ প্যানেল, নির্বাচন করবেন। তবে তিন সদস্যের গঠিত ওই চেয়ারম্যান প্যানেলের মধ্যে একজন সংরক্ষিত নারী সদস্য থাকতে হবে।আরও বলা আছে, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করতে না পারলে বা অনুপস্থিত থাকলে চেয়ারম্যানের প্যানেল থেকে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে একজন সদস্য চেয়ারম্যানের সব দায়িত্ব পালন করবেন। পদত্যাগ, অপসারণ বা মৃত্যুজনিত কারণে চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যান প্যানেলের যে কোনো সদস্য চেয়ারম্যানের সব দায়িত্ব পালন করবেন।
.
ডে-নাইট-নিউজ /
সারাদেশ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ
আপনার মতামত লিখুন: