• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ; ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

ফুলবাড়ীতে চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়ক মেলা ৩০ ফুট দণ্ডে শূন্যে ভাসলেন অরবিন্দ চন্দ্র রায়


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:১৬ পিএম;
ফুলবাড়ীতে চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়ক মেলা ৩০ ফুট দণ্ডে শূন্যে ভাসলেন অরবিন্দ চন্দ্র রায়
ফুলবাড়ীতে চৈত্রসংক্রান্তিতে চড়ক মেলা ৩০ ফুট দণ্ডে শূন্যে ভাসলেন অরবিন্দ চন্দ্র রায়

 .

প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :.

চারিদিকে হাজার হাজার মানুষ, সবার দৃষ্টি ৩০ ফুট উচ্চতার একটি কাঠের দণ্ডের দিকে। আস্ত একটি গাছের উপর বাঁশ দিয়ে একটি চরকি বানানো হয়েছে। বাঁশের দুইপ্রান্তে দঁড়িতে ঝুলে শূন্যে ঘুরছেন দুইজন ব্যক্তি। একজন জনের দঁড়ি ধরে ঝুলে ঝুললেও অপর জনের পিঠের চামড়ায় গাঁথা লোহার বড় দুটি বড়শির কলের সাথে দড়ি বাঁধা। চলছে চারিদিকে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি। বাজছে ঢাকঢোল। ঘুরানো হচ্ছে কাঠের দণ্ডটি। আর তাতেই ঝুলে চারিদিকে গোল চক্কর খাচ্ছেন অরবিন্দ চন্দ্র রায় (৪৪) নামের এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে থাকা ফুল-জল, আবির, কলা, বাতাসা, নকুলদানা ইত্যাদি ছিটিয়ে দিচ্ছেন অগণিত ভক্ত-দর্শকের দিকে।.

 .

শনিবার (১২ এপ্রিল) গোধূলীলগ্নে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার চাঁদপাড়া শ্মশার কালী মন্দির চত্বরে এই দৃশ্য দেখা মেলে।.

 .

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূঁজা উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্রমাসের শেষে এই পিঠ ফোঁড়া বা চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। চড়ক উৎসবটি দেখতে সেখানে বিভিন্ন বয়সী কয়েক হাজার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভক্ত ও দর্শনার্থী সমবেত হন।.

 .

 .

অরবিন্দ রায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌরএলাকার উত্তর কৃষ্ণপুর গ্রামের মতিলালের ছেলে। যেখানেই চড়ক হয়, সেখানেই পিঠের চামড়ায় গাঁথা লোহার বড় দুটি বড়শির কলের গেঁথে দঁড়িতে বেঁধে শূন্যে ভাসতে দেখা যায় এই অরবিন্দ রায়কে।.

         .

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বড়শিতে বিদ্ধ মানুষকে ঘোরানোর আগে সারা দিন ধরে নানা আঁচার পালন করা হয়। মানুষ ঘূর্ণনের জন্য মাঠের মাঝখানে বসানো মাটিতে পোঁতা হয় কাঠের দণ্ডটি। অনেকটা লাঙলের জোয়ালের মতো, কয়েকটি বাশ এত্রিত করে এর ওপর লম্বালম্বিভাবে বসানো। বাঁশের মাথায় ঝোলানো থাকে মাটি পর্যন্ত কয়েকটি লম্বা দঁড়ি। কাঠের দণ্ডের ঠিক নিচে একদল মানুষ শক্ত হাত দিয়ে ঘোরান দঁড়িগুলো। এটাই চড়ক পূঁজার মূল আকর্ষণ।.

 .

এই উৎসবকে ঘিরে সেখানে দুপুর থেকে মেলা বসে। মেলায় হরেক রকম খাবার এবং বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রীর পরসা বসে। মেলাকে ঘিরে ফুলবাড়ীসহ আশেপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে সমবেত হয়ে স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ নেন।.

 .

স্থানীয় দর্শক চন্দ্রনাথ বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও চড়ক মেলা দেখতে এসেছি। আমাদের সনাতন ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এমন আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ।.

 .

চড়ক পূঁজার উৎসবে আসা দিপালী ও শেফালী রানী বলেন, এই চড়ক মেলা উপলক্ষে আমাদের পুরো গ্রাম উৎসবে মেতে ওঠে। সবাই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয় স্বজনদের আমন্ত্রণ জানায়। তারাও মেলায় আসেন। মেলাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।.

         .

 .

গাইবন্ধা থেকে আসার মাহাবুব নামের এক ব্যক্তি জানান, এখানে আত্মিয়র বাড়ি এসেছিলাম। শুনলাম পিঠ ফোঁড়া চড়ক মেলা হবে। আমাদের ওইদিকে এসব হয়না তাই থেকে গেলাম মেলা দেখার জন্য। তিনি আরও বলেন, সত্যি এ এক অবাক করা ব্যাপার, কারণ কীভাবে একজন মানুষের পিঠে ওই বড় বড় বরশি বিঁধে দিয়ে ৩০/৩৫ ফিট উচ্চতায় ঝুলিয়ে ঘোরানো হচ্ছে।.

 .

উৎসব আয়োজক কমিটি চাঁদপাড়া মন্দির কমিটির সভাপতি সুরজিত চন্দ্র রায় বলেন, চৈত্র মাসের শেষে চড়ক কালী পূঁজা বা নীল পূঁজার আয়োজন করা হয়। শতবছরের পুরোনো এ পুজো পুর্ব পুরুষদের আমল থেকে হয়ে আসছে। এই পূঁজো ও চড়ক উৎসবকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী মেলা বসেছে। এতে কয়েকে হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে।.

 .

 .

বড়শিতে ঝুলে থাকা অরবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে এই কাজ করছেন তিনি। তাঁর পিঠে অগণিত ছিদ্র রয়েছে। প্রত্যেকবার পিঠের ভিন্ন ভিন্নস্থানে ছিদ্র করে বড়শির কল লাগানো হয়। এটি করতে বেশ সাধনার প্রয়োজন।. .

ডে-নাইট-নিউজ /

খেলাধুলা বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ