লক্ষ্মীপুরে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু সম্ভব হয়নি। .
প্রায় দেড় মাস হতে চললেও লক্ষ্মীপুর জেলা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি।জেলার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ ( সাড়ে ৫ লাখের বেশি) এখনো বন্যার পানিতে বন্দী হয়ে আছে। ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেনি আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারিরা সবাই। জেলার শিক্ষা বিভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গত রবিবার থেকে পুরোপুরি চালু করার উদ্যোগ নিলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় গ্রহণকারী মানুষগুলো বাড়িতে ফিরতে না পারায় এবং অধিকাংশ রাস্তাঘাট,বিদ্যালয়ের মাঠ পানির নিচে তলিয়ে থাকায় বিদ্যালয় চালু ও পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানাগেছে।.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ৭৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো পানির নিছে ডুবে আছে। ৮৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো বন্যার কবলিত মানুষ বসবাস করছে। বিদ্যালয় এর মাঠ এবং শ্রেণিকক্ষ, পার্শ্ববর্তী রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় এখনো জেলার অর্ধেকেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করা যায়নি। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কবে নাগাদ জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি চালু করা যাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার। এ দিকে জেলার কতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজে পাঠদান শুরু করা হয়েছে সে তথ্য জানাতে পারেনি জেলা শিক্ষা অফিস। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় জেলা শহরসহ জেলার অর্ধেকের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত রোববার থেকে পাঠদান শুরু করার লক্ষ্যে খোলা হলেও ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি সন্তোষ জনক নয়। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার জামিরতলী আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নাসির উদ্দিন আল কামাল জানান, তার প্রতিষ্ঠানে অর্ধেকের বেশি ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিত রয়েছে। এলাকার অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানির নিচে থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা মাদ্রাসায় আসতে পারছে না। অপরদিকে সদর উপজেলার হাজিরপাড়া হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ে এখনো বন্যার্ত মানুষ বসবাস করতে থাকায় বিদ্যালয় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ ইউনূছ মিয়া মঙ্গলবার দুপুরে জানান, বন্যার পানি কমলেও পরবর্তী বৃষ্টিপাতের কারণে পানি আবার বেড়েছে। বর্তমানে ৩০শতাংশের বেশী মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। এখনো ৫ হাজার ৩০০ মানুষ অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করছে। আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী মানুষদেরকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। জেলার সদর উপজেলার১২টি ইউনিয়ন এবং কমলনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মানুষ এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পানি ধীরে নামার কারণে বন্যাপরিস্থিতির কাঙ্খিত উন্নতি হচ্ছেনা।.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রামগতি কমলনগর নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পলোয়ান জানান,জেলার ভুলুয়া নদী সহ অধিকাংশ খাল এবং নালা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও দখলমুক্ত না করায় বর্তমানে বন্যার পানি নামতে পারছে না। ফলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। তিনি ভুলুয়া নদীসহ জেলার খালগুলো দখলমুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছেন উক্ত রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড,জেলা প্রশাসক, ও উপজেলা প্রশাসনকে নদী এবং খালগুলো দখলমুক্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে জেলার ভুলুয়া নদী ও খাল গুলো দখলমুক্ত করার জন্য কমল নগর ও রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার নেতৃত্বে শত শত স্বেচ্ছাসেবক দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মনোহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী মোহাম্মদ আলী আকবর জানান, তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেও গত শুক্রবার ও শনিবারের বৃষ্টিতে তার বসত ঘর আবার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় তিনি আবারো আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তার মতো আরো কয়েকজন কি আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে এসেছেন। .
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পাঁচপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ হাফিজ জানান, আজ দেড় মাস ধরে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ বাড়িতে পানিবন্দি হয়ে আছেন। ঘরের মালামাল চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেননি। বর্তমানে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সাত সদস্যের তার পরিবারটি বর্তমানে অনাহারে অধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। একসময় তিনি মাছের ব্যবসা করলেও গত দেড় মাস ধরে তিনি বেকার জীবন যাপন করছেন। তার মত একই অবস্থা তার প্রতিবেশী অনেকেরই। বর্তমানে জেলার অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ কোন কাজ না থাকায় এবং আয় রোজগারের অভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবতা জীবন যাপন করছে বলে জানা গেছে।.
.
. .
ডে-নাইট-নিউজ / আব্দুল মালেক নিরব
আপনার মতামত লিখুন: