নাসির মাহমুদ (লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি): লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর ভিড়,অনুপস্থিত মেডিকেল অফিসার, চিকিৎসা দিচ্ছেন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার। এই উপজেলার তিন লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । বেশীরভাগ অসহায় ও গরিব লোকজনই এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। শীতকালীন ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শিশুসহ নারী-পুরুষের ভিড় দেখা গেছে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে।
কিন্তু হাসপাতালের বেশীরভাগ মেডিকেল অফিসারের(এমবিবিএস) অনুপস্থিত থাকায় বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) ডাক্তারের থেকে।
এতে রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। তবে মানসম্মত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা মেডিকেল অফিসারদের (এমবিবিএস) নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এ সময় আসমা নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ডাক্তার হাসপাতালে নেই কিন্তু প্রাইভেট চেম্বারে গেলে ঠিকই পাওয়া যাবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ১০ জন মেডিকেল অফিসার ও পাঁচজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছেন। এর মধ্যে তিনজন মেডিকেল অফিসার ছুটিতে আছেন ও দুইজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সাব সেন্টারে এবং তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগ ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের(সেকমো) রুমের সামনে রোগীদের অনেক ভিড়। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন সেকমো ডা: রাশেদ, ডা: দাউদ সিদ্দিকী ও ডা: সাইফুল ইসলাম।
অন্যদিকে মেডিকেল অফিসারদের বহির্বিভাগে উপস্থিত হয়ে দেখা যায়, মেডিকেল অফিসার ডা:একরামুল হক, ডাঃ ফাতেমাতুজ যাহরা, ডাঃ নিকেশ মজুমদার, ডা: ইয়াসমিন খান, ডা: প্রিন্স দাস ও ডা: আতা রাব্বি সহ রোগী দেখার কক্ষগুলাতে তাঁদের উপস্থিতি নেই। কোন কক্ষ তালাবদ্ধ আবার কোনটিতে দরজা খোলা রেখে তাদের এসিস্ট্যান্টকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ডাক্তার কোথায় জানতে চাইলে ডা: প্রিন্স দাসের এসিস্ট্যান্ট মো: রুবেল বলেন,স্যার (ডাক্তার) স্বাস্থ্য কর্মকর্তার রুমে মিটিংয়ে আছেন। তবে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তার রুমে গিয়ে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ রয়েছে ডাক্তারেরা হাসপাতালে রোগী না দেখে অন কলে ডায়াগনস্টিক ও ল্যাবে গিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন।
মরিয়ম নামে এক রোগী বলেন, কয়েকদিন আগে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ডা: একরামুল হকের কক্ষে গেলে তা বন্ধ পাই। পরে ল্যাবের একজনের পরামর্শে দেশ মা মাটি নামে একটি ল্যাবে যাই। পরে ল্যাব কর্তৃপক্ষ ফোন করলে ডাক্তার একরামুল হক ল্যাবে আসেন। এবং নির্ধারিত ফি নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেন তিনি।
হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা নুরজাহান বেগম,জান্নাত বেগম ও লাইজু বেগম সহ বেশ কয়েকজন জানান,সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসে প্রাইভেট চেম্বারে গিয়ে দেখাতে হয়েছে। ডাক্তারেরা হাসপাতালে রোগী না দেখে প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন। এতে টেস্ট আর ভিজিটের টাকা সহ মোটা অংকের টাকা খরচ হয়। পরে ঔষধ কেনার আর টাকা থাকেনা আমাদের।
এ বিষয় জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মীর আমিনুল ইসলাম মঞ্জু জানান, ডা: একরাম অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় রোগী দেখার সময় কম পান। অন্যান্যরাও হাসপাতালে রোগী দেখছেন। তারপরেও খোঁজ নিয়ে কোন সমস্যা থাকলে তা দেখবো।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সব্যসাচী নাথ জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। ডাক্তাররা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন জানি। তারপরেও খোঁজ নিবো।
.
আপনার মতামত লিখুন: