ঘরে ভাত নাই পড়নে কাপড় নাই, প্যারালাইসিস আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসা চলে না, ভাড়াটে ভ্যানে করে স্বামীর ভিক্ষা করা রোজগারে ভ্যানওয়ালার ভাড়া দিয়ে যা থাকে তা দিয়ে ওষুধের খরচ চলে।
অসুস্থ স্বামীর ভিক্ষাভিত্তির সামান্য উপার্জন দিয়ে খেয়ে না খেয়ে বড় কষ্টে জীবনযুদ্ধে টিকে আছে চার সদস্যের এ পরিবারটি। দু’বছরের কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে কাশেমের স্ত্রীর আর্তনাদ আর চোখের পানিতে পুরো গ্রাম নিথর নিস্তব্ধ।সরেজমিনে অসুস্থ কাশেমের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, অসুস্থ কাশেম পেশায় ছিলেন ভ্যান চালক। ভ্যান চালিয়ে দুই ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে মোটামুটি ভালোই দিন চলছিল তার। কয়েক বছর আগে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ৮ ও ১০ বছরের দুই পুত্র সন্তান প্রাইমারী স্কুলে পড়াশোনা করতো আর কোলের কন্যা সন্তানের বয়স এখন ১৯ মাস। এরই মধ্যে সর্বনাশা মেঘনার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেন উপজেলার চর লরেঞ্চ এলাকার চৌধুরী বাজারের ব্যবসায়ী নিজাম হোটেলের মালিক নিজাম উদ্দিনের পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে।.
গত এক বছর আগে হঠাৎ করে, প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন কাশেম। ধার-কর্জ করে চিকিৎসা চালাতে গিয়ে অবশেষে উপার্জনের একমাত্র সম্বল ভ্যান গাড়িটিও বিক্রি করে দেন। প্রথমে প্রতিবেশীদের করুণায় কোনমতে ডাল-ভাতের ব্যবস্থা হলেও এখন আর আগের মতো প্রতিবেশীদের সাহায্য মেলেনা। মেলেনা ওষুধের খরচও। এদিকে ছোট্ট দুই ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়, এক ছেলেকে চায়ের দোকানের কাজে দিয়ে, আরেক ছেলেকে সাথে নিয়ে ভ্যানগাড়িতে শুয়ে ভিক্ষা করে জীবন বাচানোর পথ বেছে নেন কাশেম। এরই মধ্যে “মরার উপর খারার ঘাঁ” কাশেমের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, আশ্রিত থাকা বাড়ির জমির অংশ নিয়ে মালিক ও তার ভাইদের সাথে বিরোধ চলছে, বাড়িওয়ালা কোথাও বাসা খুজে নিতে বলেছে। অসুস্থ স্বামী আর সন্তান নিয়া এখন আমি কই যামু। এ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় দু’চোখ দিয়ে পানি জড়ছিল তার। কান্না করে একটাই আবেদন তার, যেন আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি সরকারি ঘরে মাথা গোঁজার ঠাই হয় তাদের। তাহলে অন্তত স্বামীর করা ভিক্ষায় কোনভাবে জীবনটা বাঁচবে।
প্যারালাইসিস আক্রান্ত কাশেমের আকুতি,সরকারী ঘরে ঠাই পাওয়া,সাথে বিত্তবান ও দানশীলরা একটি হুইলচেয়ার দিয়ে সাহায্যে এগিয়ে আসলে খুবই উপকৃত হবে সে এবং তার পরিবার।
আশ্রয়দাতা নিজাম উদ্দিন বলেন, বাড়িটার অংশ নিয়ে ভাইদের সাথে বিরোধ থাকায় ওদের চলে যেতে বলেছি। তবে পরিবারটি খুবই অসহায়, আমি যখন যা পারি সাহায্য সহযোগিতা করি। পরিবারটিকে সম্ভব হলে একটা সরকারি ঘর পাইয়ে দিয়েন, আল্লাহ আপনার ভালো করবে।
প্রতিবেশীরা জানায়, এখানে আশ্রয় নেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় কাশেম প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়। লোকজনের দেয়া সাহায্য সহযোগিতায় কোনো রকম খাবার জুটলেও চিকিৎসা ব্যয় চলে না। এখন থাকার জায়গার সমস্যা। একটি সরকারী ঘর হলে অসহায় এই পরিবারটি উপকৃত হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পুদম পুস্প চাকমা বলেন,অসহায় পরিবারটি ঘরের জন্য আবেদন করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, পরিবারটির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সরকারী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
.
.
ডে-নাইট-নিউজ / নাসির মাহমুদ (লক্ষ্মীপর জেলা প্রতিনিধি)
আপনার মতামত লিখুন: