আমরা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আমাদের ভোটটা ঠিকঠাক দিতে পারলেই হলো। ভোটের দিন সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। কারো চাপে না, কারো হুমকিতে নয়, আমরা ভোট দিব আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে। আর ভোট যাকেই দেই না ক্যান, তাও সবাই কবে এ্যারা নৌকাতে ভোট দিচ্ছে। ভোট নিয়ে আমাদের বদনাম আর সিল মারা হয়ে গেছে যে আমরা নৌকার লোক। এজন্য নৌকাতেই আমরা ভোট দিবো, যে যা পারে করুক। আমাদের নৌকার প্রার্থীর জন্য আমরা এলাকায় শান্তিতে বাস করি। কোনো হুমকি নেই, ধমকি নেই কারো। ভালো মানুষটা আবার জিতুক। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হলে ভাতা পারো আমরা এজন্য সবাই নৌকায় ভোট দিব।.
কথাগুলো অকপটে নির্ভয়ে বলছিলেন, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ১নং এলুয়ারি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম শ্রীরামপুর (ধামাহার) গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৃদ্ধা সুমি হেম্ব্রম (৬২), মাইনো সরেন (৬৫), মিনি টুডু (৬১), গৃহবধূ লিলি মুর্মু (২৯), লিলি হাঁসদা (২৫) ও এবারের প্রথম ভোটার কৃস্তিনা কিস্কু (১৮)।.
এবারের প্রথম ভোটার কৃস্তিনা কিস্কু বলেন, স্কুলে যাওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সাইকেল, টাকা, খেলার সামগ্রীসহ খাবার ও উপবৃত্তির টাকা দিয়ে সহায়তা দিয়েছেন। তারজন্যই আমাদের অনগ্রসর পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষা নিতে পারছে। একই সাথে স্কুল ও কলেজগুলোর যে ধরনের বড় বড় সুন্দর বিল্ডিং করে দিচ্ছে তাতে তো শেখ হাসিনার নৌকা ছাড়া আর কাকে ভোট দিতে মন চাইবে বলেন। ভোট আসলেই ছোট কাল থেকেই বাড়ীতে শুনে নৌকায় ভোট দেওয়ার কথা। এজন্য নয়, দেশের সার্বিক আরো উন্নতির জন্য আমিও প্রথম বারের ভোটার হিসেবে প্রথম বারেই নৌকা মার্কাতেই ভোট দিবো আমাদের মন্ত্রী ফিজার মহোদয়কে।.
উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্যপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গৃহবধূ নির্মলা টুডু (৪০) বলেন, যেসব গরীব মানুষের ঘরবাড়ী ছিল না, সেই মানুষগুলাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকা ঘরবাড়ী তৈরি করে লিখে দিয়েছে তাদের নামে। এতে অনেক আদিবাসী ঘরবাড়ী পেয়ে মাথা গুজার ঠাঁই পেয়েছে। শেখ হাসিনা না করে দিলে এগুলো কে করে দিত? আর এখানকার ফিজার মন্ত্রী তো একজন ভালো মানুষ। সাত বার এমপি হওয়ার পর এবার আটবারের এমপি বানাবো আমরা। তার দিয়ে কোনোদিন কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। উপকার করেননি এমন লোক এলাকায় খুব কম পাওয়া যাবে। এজন্য গ্রামের সকল আদিবাসী ভোটের দিন সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে ফিজার মন্ত্রীকে জিতাবে। কারণ নৌকায় ভোট না দিলেও অন্য কবে এরা তো নৌকায় ভোট দিছে। এ কারণে অন্য কোনো কিছু চিন্তা করার সময় নাই, আমরা নৌকার মানুষ, নৌকা হামার যান, নৌকাই হামার প্রাণ। .
শ্রীরামপুর (ধামাহার) গ্রামের আদিবাসী নেতা কমল কিস্কু ও লালদীঘি পার্বতীপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা যোহন টুডু বলেন, শ্রীরামপুর (ধামাপাড়া), পশ্চিম মহেশপুর, লালদীঘি পার্বতীপুর এই তিন মৌজার পাঁচ গ্রামের পাঁচশতাধিক নারী ও পুরুষ ভোটার রয়েছেন। ভোটের দিন শতভাগ ভোটর ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এখন পর্যন্ত ভোট বর্জন কিংবা ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বিএনপি কিংবা জামায়াতের পক্ষ থেকে কেউ কোনো প্রকার চাপ কিংবা আসেনি। হুমকি আর চাপ আসলেও কোনো কাজ হবে না। কারণ গ্রামের সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। তবে শতভাগ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। .
দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) নির্বাচনী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন অষ্টম বারের মতো আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী অ্যাড. নূরুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আম প্রতীকের শওকত আলী, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রাথী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. তোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগ কর্মী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রাথী হযরত আলী বেলাল। .
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের কার্যক্রম শেষ করতে পুলিশ সদস্যরা সার্বিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।.
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, ৫২ টি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। উপজেলার একটি পৌরসভাসহ সাত ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১লাখ ৫০ হাজার ৪১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭৪ হাজার ৮১৬ জন, নারী ৭৫ হাজার ২২৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) ১ জন রয়েছেন। মোট ভোটারের মধ্যে মুসলমান ভোটার ১লাখ ২৪ হাজার ২৮০ জন, সনাতন ধর্মালম্বী (হিন্দু) ২১ হাজার ৭০৯ জন এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) ৪ হাজার ৫২ জন রয়েছেন। ভোটের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন প্লাটুন বিজিবি, পুলিশ, আনসার সদস্যসহ একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এবং ২জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।. .
ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আপনার মতামত লিখুন: