ফুলবাড়ীতে সিষা বিষক্রিয়ায় ৩৫ টি গরু মৃত্যু প্রমাণিত ঘাস ,খড় পরীক্ষার রিপোর্টে মাত্রাতিরিক্ত সীসা শনাক্ত, গোখাদ্য সঙ্কটে বিপাকে খামারিরা। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ব্যাটারী কারখানার আশপাশের মাটি ঘাস ও খড়ের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে মাত্রাতিরিক্ত সীসার কারণে ৩৫ টি গরু মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে। এঘটনায় প্রমাণিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কৃষকদের মাঝে।.
এখন গবাদি পশুগুলোকে খড়-ঘাস খাওয়াতেও ভয় পাচ্ছেন ওই এলাকার কৃষক- খামারিরা। প্রতি বছর খড় মজুদ রেখে নিজেদের গবাদিপশুকে খাওয়ান তারা। কিন্তু এঘটনায় আগামী এক বছর এ খড় মজুদ করে না রাখতে পারায় গোখাদ্য নিয়ে
বিপাকে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। ঢাকার চিফ সায়েন্টিফিক অফিসারের কার্যালয় টেকনোলজি এন্ড জুরিসপ্রুডেন্স অনুবিভাগের ডা. রামমোহন অধিকারীর স্বাক্ষরিত একটি রিপোর্ট ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে পৌঁছলে বিষক্রিয়ার ব্যাপকতায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।.
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন সে পরীক্ষার রিপোর্টে ওই এলাকার ঘাসে ৩০ হাজার পিপিএম , খড়ে ৩০ হাজার পিপিএম এবং মাটিতে ৫ হাজার পিপিএম পাওয়া গেছে । সরেজমিনে পাকড়ডাঙ্গার ব্যাটারি কারখানা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,
কারখানার তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাকা ধান পড়ে রয়েছে। কৃষক ভয়ে বাড়িতে ধান কেটে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না। কেউ বা মাঠে ধান কেটে ফেলে রেখেছেন এবং মাড়ছেন। কেউ কেউ বাড়িতে খড় নিয়ে গেলেও আতঙ্কে গবাদিপশুর
নাগালের বাইরে রাখছেন; যাতে গবাদি পশু খড় ধান না খায়।.
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক খামারিরা বলেছেন, আমন ধানের খড় দিয়ে তাদের এক বছরের গবাদিপশুর খাবার প্রস্তুত হয়ে থাকে। এখন খড়ে বিষক্রিয়া হওয়ায় তাদের কপাল পুড়েছে! কী করে সামনের এক বছর গবাদিপশুকে খাওয়াবেন? মাঠের কতদূর পর্যন্ত
এই সীসার বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে তা তারা জানেন না। এই বিষয়টিও তাদের কাছে পরিষ্কার করার দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।.
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, কেউ গরুর মৃত্যুতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ধানের খড় ব্যবহার করতে না পারায়। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কারখানার সাথে লাগোয়া জমির মধ্যে উত্তরেদিকে আমজাদ হোসেনের দুই একর, মুকুলের এক বিঘা, ডা. আনোয়ারের দুই একর, পশ্চিমে আমজাদের পাঁচ বিঘা, তোফাজ্জলের তিনবিঘা, মমিনুলের এক বিঘা, মাহাবুরের দশ কাঠা, মুকুলের এক বিঘা, মকবুলের দেড়বিঘা, বাদশার এক বিঘা, জহুরুলের এক একর, দক্ষিণে সুলতান হোসেনের তিন একর, মতিবুল, মঞ্জুরুল, মতিয়ারের দশ কাঠা জমি রয়েছে।.
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান, কারখানা এলাকার খড় ঘাস এমনকি ধান পর্যন্ত খাওয়ানো যাবেনা। সে কারণে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি সতর্কীকরণ সাইন বোর্ড টনিয়ে দেয়া হয়েছে। কতদূর পর্যন্ত সীমানার মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, যতদূর পর্যন্ত এই সীসার ডাস্ট ছড়িয়েছে, ততদূর পর্যন্ত বিষক্রিয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চার সদস্যের অনুসন্ধানী দলের রিপোর্ট কবে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো জানিনা ; তবে রিপোর্ট এলেই জানতে পারবেন।.
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ওই এলাকার সিসাযুক্ত খড়গুলো পুড়িয়ে ফেলা হবে এবং বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। উলেক্ষ্য উপজেলার ফুলবাড়ী-মাদিলা সড়কের পাশে পাকড় ডাঙ্গা নামক স্থানে জমিতে একটি ব্যাটারি পুনরায় নতুনকরণ কারখানা ছিল। ওই কারখানার বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ার কারণে এলাকার ঘাস এবং খড় সিসা দূষণের শিকার হয়ে আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর ও বেতদিঘী ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামে হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনি শুরু হয়ে প্রায় ৩৫টি গরুর মৃত্যু হয়। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে কারখানাটি ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হয়।. .
ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আপনার মতামত লিখুন: