• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

রামগতি-কমলনগরে ঘুষে চলছে ৬০ অবৈধ ইটভাটা


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৫৩ পিএম;
রামগতি-কমলনগরে ঘুষে চলছে ৬০ অবৈধ ইটভাটা
রামগতি-কমলনগরে ঘুষে চলছে ৬০ অবৈধ ইটভাটা
লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলায়ই গড়ে উঠেছে ৬০ টি অবৈধ ইটভাটা। ফসলি জমি নষ্ট করে এসব অবৈধ ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। ইটভাটায় পোড়ানো কাঠের কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অনুমোদনহীন এসব ইটভাটা বন্ধে স্থানীয়রা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসলেও জেলা-উপজেলা প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়নি। বরং ইটভাটার কয়েকজন মালিক জানালেন,তারা প্রশাসনকে টাকা দিয়েই এসব অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করছেন।
 
 
এমনি একজন ভাটার মালিক কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরবসু এলাকার আকাশ ব্রিকস ও তোরাবগন্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাগলা গ্রামের মাদিনা ব্রিকসের মালিক আরিফ। তিনি দুটি অবৈধ ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, আমরা হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে ভাটা চালাই। স্থানীয় প্রশাসন আমাদেরকে এখন পর্যন্ত কিছুই বলেনি।
 
অন্যদিকে কমলনগর উপজেলায় বৈধ ভাটা ৬ টি ও অবৈধ ১৪ ইটভাটা রয়েছে। অবৈধ ইটভাটাগুলো- তোরাবগন্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাগলা গ্রামে মদিনা ব্রিকস, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে হাসিনা ব্রিকস, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এলএমবি ব্রিকস, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রহিমগঞ্জে তাহেরা ব্রিকস, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এমআরবি রহিমা ব্রিকস, ৭ নম্বর ওয়ার্ড মদিনা ব্রিকস, ৮ নম্বর ওয়ার্ড নবাব ব্রিকস ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে গুলশান ব্রিকস ও চরকাদিরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে সুমাইয়া ব্রিকস, আল্লারদান,৫ নম্বর ওয়ার্ডে রহিমা ব্রিকস, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরবসু এলাকায় আকাশ ব্রিকস, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাই ভাই ব্রিকস, হাজিরহাট ইউনিয়নের মিয়াপাড়া মা ফাতেমা ব্রিকস ও চরকালকিনি ১ নম্বর ওয়ার্ডে শামিম ব্রিকস সহ মোট ১৪ টি অবৈধ ইটভাটা চলছে। 
 
রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের চরআফজল গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডজুড়ে ইটভাটার ছড়াছড়ি। এ গ্রামে গড়ে উঠা ভাটাগুলো হলো–এডব্লিউবি, এসবিএম, এফএবি, এডব্লিউবিটু, টিবিএল, এসিবি, আরবিএম, এবিএম, বিবিএম, এএমআরই, এসএসবি, এআরবি, এফএমবি, পিবিএম, এসএবি, এমএসবি, এএমএ, বিবিএল, এমবিএল, জেএসবি, এমপিবি, ফাইভস্টার ও ফোরস্টার।
 
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ভাটার চারপাশে থাকা ফসলি জমিতে বেড়ে ওঠা ধান, সয়াবিন, বাদামগাছসহ বিভিন্ন রবিশস্য ঝুঁকিতে পড়েছে।ইট তৈরিতে ব্যবহৃত মাটির সবটাই যাচ্ছে ফসলি জমি থেকে। তাদের অভিযোগ, কৃষিজমি রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ, নজরদারি নেই পরিবেশ অধিদপ্তরেরও।
 
রামগতির চরআফজল গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিনের ভাষ্য, একটি ইটভাটা থেকে অন্যটির দূরত্ব বেশি নয়। সব ভাটা স্থাপন করা হয়েছে ফসলি জমির মাঝখানে। এভাবে চলতে থাকলে তারা ফসল ফলাবেন কী করে? ফসলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় অবৈধ ইটভাটার দাপটে রামগতি উপজেলা মরুভূমিতে রূপান্তরিত হবে বলে মনে করেন একই গ্রামের কলেজছাত্র শরীফুল ইসলাম। 
 
বাসিন্দারা বলছেন, ইটভাটা বাড়তে থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক ও নদী ভাঙনকবলিত এলাকার গ্রামীণ সড়ক এক বছরও টিকছে না। মাটি আনা হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত গ্রামীণ সড়ক দিয়ে। ফলে এসব সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে পরিবেশগত ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। 
 
চরআফজলের আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের কথায়, এক গ্রামে এতগুলো ইটভাটা ভাবতেই অবাক লাগে। ভাটার পাশেই বসতবাড়ি, হাটবাজার ও গাছপালার বাগান। নতুন ভাটার কারণে গ্রামে আর বসবাসের পরিবেশই থাকবে না।
 
 
 
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৯ থেকে জানা গেছে, একটি ইটভাটা স্থাপনের আগে সরকারের ১০টি দপ্তরের নজর পার হতে হয়। এ আইনের উদ্দেশ্য ছিল, ২০২০ সালের মধ্যে পোড়া ইট শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। তবে এ অঞ্চলে উল্টো প্রতিবছরই ভাটার সংখ্যা বাড়ছে।
 
বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং লোকালয়ের অন্তত এক কিলোমিটারের মধ্যে ভাটা স্থাপনের বিধিনিষেধ রয়েছে। তাছাড়া আবাদি জমিতে ভাটা তৈরি, কৃষিজমির মাটি ব্যবহার, এলজিইডির সড়ক ব্যবহার ও কাঠ পোড়ানোতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এর কিছুই মানছেন না স্থানীয় ভাটার মালিকরা।
 
তিশা ব্রিকস লিমিটেডের (টিবিএল) মালিক ছানা উল্যাহ উপজেলা ব্রিকস ফিল্ড মালিক সমিতি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর সাধারণ সম্পাদক। তিনি স্বীকার করেন, উপজেলায় অনেক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। ছানা উল্যাহর ভাষ্য, আমরা অনেকে বৈধ কাগজপত্রের জন্য আবেদন করেছি। এখন আপাতত  প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চালাচ্ছি।
 
সংগঠনের সভাপতি হাজি খলিল উল্যাহ বলেন, এ অঞ্চলের অধিকাংশ ইটভাটা অবৈধ। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের মালিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। প্রশাসন অভিযান চালালে কী করবেন- এমন প্রশ্নে বলেন,চেয়ে চেয়ে দেখব। আর কী করব?। বিভিন্ন দিবস পালনের নামে প্রশাসন ও পুলিশ আমাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। 
 
 
 
লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুনর রশিদ বলেন, রামগতি-কমলনগর উপজেলায় কৃষি জমি নষ্ট করে গড়ে উঠেছে প্রায় ৬০টির মত অবৈধ ইটভাটা। আমাদেরকে অবহিত না করে কি ভাবে তারা ইটভাটাগুলো স্থাপন করছেন এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
 
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলায় ৪০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র দুটির। তবে কয়েকটির মালিকপক্ষ আবেদন করেছে। 
 
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, এ উপজেলায় ১৪ টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে। কোন অবস্থাতেই অবৈধ ইটভাটা চলতে পারবেনা।
 
লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাজিব কুমার সরকার বলেন,পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে এসব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
 
.

ডে-নাইট-নিউজ / লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি

সারাদেশ বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ