বিগত দিনে অনেকেই বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।অনেকে ধারদেনা করেও বই ক্রয় করে পড়তেন।অনেকের এমনও নেশা ছিলো সারা রাত জেগে বই পড়ে কাঠিয়ে দিতেন।এক সময় তথা আমি যখন নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করি,তখন আমাদের বন্ধুমহলের একটি গ্রুপ ছিলাম।যারা একত্রিত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা হয়েও বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলাম, যা আজ শুধু স্মৃতির পাতায়ই অনুভব,অনুধাবন করি হৃদয়ের শেষপ্রান্তে।আমরা পালাক্রমে উপন্যাস,গল্প,সিরিজ বই কিনে পাঠে মগ্ন থাকতাম।বিকেল বেলা সমবেত হতাম সকলেই নদীর তীরে।আমরা আলাপ আলোচনা করতাম পাঠ্য বইয়ের বাহিরের বই নিয়ে যেমন,তেমনি আমরা অত্যন্ত একাগ্রতার সহিত মনোনিবেশ করতাম পাঠ্য বইয়ের বিভিন্ন গল্প,প্রবন্ধ,কবিতা নিয়ে।একে অপরকে জিজ্ঞাসার মাধ্যমে শিখে নিতাম লেখাটির অন্তর্নিহিত মর্মকথা,তথ্য ও তত্ত্ব অনুসন্ধিসুনেত্রে।আজ সেসব শুধুই স্মৃতি।আমি বিভিন্ন ভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি সে ধরণের প্রথা বা মনমানসিকতা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে নেই।আর তা হলেও যৎকিঞ্চিৎ।ধর্তব্যের মধ্যে আগের তুলনায় নেই বললেই চলে।যাক এবার আসছি আমি মুল প্রসঙ্গে।.
.
.
বিগত ১৮/১/২০২৫ খ্রিস্টাব্দে চলে গেলাম আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত জিবলু রহমানের শ্রীহট্র প্রকাশ কর্তৃক ব্যতিক্রমী ধরণের আয়োজিত ৭ম বই মেলায়।মেলাটি দীর্ঘ সাত বৎসর ধরে তিনি আয়োজন করেন তিনির বাসায় মাসব্যাপি এ বই মেলার।আমি আরো একবার গিয়েছিলাম বৎসর দুয়েক আগে।বেলা দুইটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে মেলা।লোক সমাগম কম।কিন্তু তিনি অতি ধৈর্যশীল,যত্নবান,মিশুক স্বভাবের অধিকারি।একজন প্রকৃত লেখকের যে সকল গুণ থাকা অপরিহার্য,জিবলু সাহেবের মধ্যে তার সবকটি গুণের সমাহার রয়েছে আমার দৃষ্টিতে।কথাবার্তা অত্যন্ত ধীরস্থির ভাবে নম্রতার সহিত বলার অভ্যাস পরিলক্ষিত হয়েছে আমার কাছে।কয়েকবার দেখা হয়েছে আমার সামসুর রহমান বৃত্তি চলমানতায়।যাক তিনি আমার বাবার স্মৃতি জাগরুক রক্ষার্থে প্রতিষ্ঠিত এবং মানুষকে বই পাঠের প্রতি আগ্রহী করে তোলার মনমানসিকতায় মুলত: আমার পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত।গত ২০২৩ সালে জিবলু রহমান ১০০ পাঠাগারকে ৬লক্ষ টাকার বই প্রদান করেন।এ প্রকল্পাধীন আমার চান মিয়া স্মৃতি পাঠাগারটিকেও তিনি বই প্রদান করেন।আমি প্রথমেই বলেছিলাম জিবলু রহমানের পরিচালিত একক বই মেলাটি ব্যতিক্রমী একটি বই মেলা।এ কথাটি বলার কারন হল-জিবলু রহমান বই মেলায় প্রতিবারই পুরনো দিনের অনেক জিনিষপত্রের,হাতিয়ারসমুহ, প্রদর্শনীর সংযুক্তি ঘটান বর্তমান সময়ের মানুষকে সে সকল দ্রব্যের সাথে পরিচিতি করার আগ্রহ নিয়ে।আমার কাছে বিষয়টি অতীব প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগি বলে মনে হয়।এ সকল দ্রব্যের সাথে পরিচিতি ঘটানোর নিমিত্তেই জিবলু সাহেবের বাডতি আয়োজন।জিবলু রহমানের এ জাতীয় আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক প্রতি বৎসর,প্রতিটি মেলায় এ আমার হৃদয়জ আর্তি ও প্রত্যাশা।.
.
.
তিনির এ বই মেলায় রয়েছে অতীত দিনের পুরনো সামগ্রীর মধ্যে মাটির তৈরী থালাবাসন,জগ,চায়ের কাপ-পিরিচ,বাঁশের তৈরী সাকোঁ, হুক্কা,টেপরেকর্ডার ,লাঙল,জোয়াল,মই,মুরগের খোয়াড,টুকরী,কলেরগান,ক্যামেরা,হারিকেন,হারিকেনের ফিতা,টাইপ মেশিন,বিভিন্ন প্রকার মাছ ধরার জাল,কুপি বাতি,কুডেঘর,ভিডিও ক্যামেরা,পুরনো টেলিভিশন,রাজসিংহাসন,দোলনা,বাঁশের ঝাপি,একতারা,মাটির চুলা,পোস্টবক্স ইত্যাদিসহ আরো অনেক কিছু।পাশেই রয়েছে বই মেলা।প্রদর্শনীটি চলবে ১০ জানুয়ারী থেকে ১০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সিলেটের দাডিয়াপাড়ায়।সবার জন্য উম্মুক্ত।তিনির প্রকাশনীটি সফল ও সার্থক হয়ে উটুক আগামীর অগ্রযাত্রায় নিরন্তর কাম্য। তিনি হোন দীর্ঘজীবি ও সুস্থ,সুন্দর মননশীলতায় আগামীর পথ চলায়।আমিন।.
. .
ডে-নাইট-নিউজ / মিজানুর রহমান মিজান
আপনার মতামত লিখুন: