চেয়ারম্যানের দ্বারে কান্না করেও প্রধানমন্ত্রীর
উপহারের ঘর পান’নি শরিফা বেগম
শরিফা বেগম একটা বাজে মেয়ে -ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ মাস্টার
শরিফা বেগম। বয়স ৩৪। গত ২১ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনাজপুর বিয়ে হয় দরিদ্র ঘরের এই শরিফা বেগমের। বিয়ের পর থেকেই নেশাগ্রস্থ স্বামীর ঘরে নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাকে। এক প্রতিবন্ধীসহ তিন সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তারপর আরো বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা। এভাবেই প্রাণ ভয়ে ছাড়তে হয় স্বামীর ঘর।
বর্তমানে শরিফা তিন সন্তান নিয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৬ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে বাবা শহিদুলের ঝুপড়ি ঘরেই থাকছেন। পিতার ঘরটিও অন্যের জায়গায় নির্মিত। তাই কোনোভাবেই দুশ্চিন্তার শেষ দেখছেন না শরিফা বেগম।
শরিফার বেগমের বড় ছেলে শরিফুল ইসলাম (১৯) শারীরিক প্রতিবন্ধী সে স্থানীয় গোয়ালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে, মেয়ে আলফা বেগম চতুর্থ এবং ছোট ছেলে শিশু শ্রেণিতে অধ্যায়ণরত। অনেক মিনতি করে মিলেছে প্রতিবন্ধী ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটি।
জানা যায়, স্বামী পরিত্যক্তা শরিফা বেগমের ভাগ্যে জুটেনি স্বামী পরিত্যক্তা ভাতার কার্ড। মিলেনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়িটিও। অন্যের বাসাসহ ফসলি জমিতে কাজের সাড়া পেলেই ছুটে যান তিনি। সেখান থেকে যা রোজগার হয় তা দিয়েই কোনো মতো আহার জুটিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা করান তিনি। সম্প্রতি একটি গাভী গরু এলাকার এক পরিবার থেকে আদি নিয়েছেন শরিফা বেগম।
প্রতিবেশি আবু বক্কর ও সাইদুল ইসলাম বলেন, শরিফা বেগমের বাপ-দাদারাও অর্থাভাবে অন্যের জমিতে ঝুপড়ি বানিয়ে থেকে আসছেন। শরিফা বেগমের বাবা অন্যের সহযোগিতা নিয়ে ধুমধামে বিয়ে দেন তার। মাদকাসক্ত জামাইয়ের নির্যাতনে সংসার হয়নি। বর্তমানে সে তার বাবার বাড়িতেই থাকছে এবং নিজেই রোজগার করে চলছে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ঘর দিলো সেখানে শরিফাও আবেদন করে কিন্তু স্থানীয় চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় মিলেনি ঘর।
শরিফা বেগমের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ছোট থেকে অভাবের সংসারে মেয়েকে বড় করে সুখের আশায় বিয়ে দেই। কিন্তু সুখ আর জুটলো না। এমনিতেই আমরা অন্যের জায়গায় থাকি। তারপরও মেয়েসহ নাতী-পুতিদের নিয়ে আরো মাথায় বোঝা বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘর যদি মেয়েকে দেয়া হতো তাহলে সে সেখানে সুখে থাকতে পারতো। আমি চেয়ারম্যানের নির্বাচনের সময় আজিজ চেয়ারম্যানের বিপক্ষ প্রার্থীর পেছনে খাটার জন্য আজিজ চেয়ারম্যান আমাদেরকে কোনোপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা করে না।
শরিফা বেগম বলেন, স্বামী ছেড়ে দেয়ার পর থেকেই বাবার ঝুপড়ি বাড়ীতে এসে আশ্রয় নিয়েছি। অনেক আকুতি-মিনতি করে প্রতিবন্ধী ছেলের ভাতার কার্ড করিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীনদেরকে ঘর দিলো। কিন্তু সেই ঘর কপালে জুটলো না। বহুবার আবেদন করেছি। কয়েকবার চেয়ারম্যানের দ্বারে গিয়ে কান্নাকাটি করেছি। তবুও ঘরের তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়েছে আজিজ চেয়ারম্যান। কারণ আমার বাবা তার বিপক্ষ প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনে কাজ করেছে। চেয়ারম্যান আমাকে বলেছে, ‘তোর বাবা আমার বিপক্ষে কাজ করেছে নির্বাচনে। যখন তোর বাবার পক্ষের প্রার্থী চেয়ারম্যান হবে তখন সুবিধা ভোগ করিস।’ পরে বলেছে আমি ফুলবাড়ীর ভোটার না, তাই ঘর দিবেন না। আমি এখন ফুলবাড়ীর ভোটার হয়েছি। তাও ঘর দিবেন না বলেছেন আজিজ চেয়ারম্যান।
৬ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আজিজ মাস্টার বলেন, শরিফা বেগম একটা বাজে মেয়ে। সে এখনো তালাকপ্রাপ্ত হয়নি। এছাড়াও সে ফুলবাড়ীর ভোটার না। তার ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। তারপরেও সে আমার বিরুদ্ধে কথা বলে। আপনারা কি লেখবেন লেখেন। তার সাথে কথা বলেন, বুঝতে পারবেন সে ভালো মেয়ে না বাজে মেয়ে। আমি বিএনপিসহ যারা আমার বিপক্ষে ভোট করেছে তাদেরকেও ঘর দিয়েছি। তাকে দিতে আমার সমস্যা কি?
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, এখন তো আর প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়ার সুযোগ নেই। যদি তাকে কেউ জায়গা দেয় তবে সে জায়গায় ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের বরাদ্দ আসলেই ঘর করে দেয়া হবে।
.
ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আপনার মতামত লিখুন: