কমলনগরে সরকারের ভিডব্লিউবি (ভলনারেবল উইমেন বেনিফিট-সাবেক ভিজিডি) দুই বছর (২০২৪-২০২৫) মেয়াদি কার্ডের তালিকাভুক্তি কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। অথচ ওই তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করার নামে জনপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে অতিগোপনে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি কাক-পক্ষীকেও বলা যাবে না-এমন শর্তসহ নাম শতভাগ তালিকাভুক্ত করার গ্যারান্টি থাকায় গোপনেই চলছে এর কার্যক্রম।.
.
গোপন একটি সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারম্যানরা অদৃশ্যে থাকলেও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা একশ্রেণীর দালাল এলাকার প্রবাসী পরিবারের সদস্যসহ গরিব ও বিধবা নারীদের ভিজিডি কার্ড করে দেওয়ার নামে ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহের পাশাপাশি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ইউপি সচিব, উদ্যোক্তা, গ্রামপুলিশ সদস্য, প্যানেল চেয়ারম্যানসহ মেম্বাররাও (ইউপি সদস্য) এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে সূত্রটি। একদিকে হাজিরহাট, চরফলকন, পাটারীরহাট, সাহেবেরহাট ও চরমার্টিন ইউপির চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে আছেন। অন্যদিকে, চরকালকিনি ও তোরাবগঞ্জ ইউপির দুই চেয়ারম্যান এলাকায় উপস্থিত থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিশেষ কায়দায় দালালরাও করছেন একই ধরনের কাজ। চরকাদিরা ইউনিয়নের চিত্রও একই বলে জানা গেছে। নাম গোপন রাখার অনুরোধে চরকালকিনি ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ, মতিরহাট কোডেক পুনর্বাসন প্রকল্পের কয়েকজন জানান, চেয়ারম্যানের অতি বিশ্বস্ত কয়েকজন গোপনে অনেকের কাছ থেকে ভিজিডির কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ৮ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিচ্ছে। টাকা গ্রহণে বিশেষ ওয়াদা ও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তবে বিশ্বস্ত ও একান্ত লোক ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় না বলে জানান তারা। একইভাবে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের সরকারি পুকুরপাড় এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি কাউকে না জানানোর শর্ত দিয়ে ভিজিডির কার্ড করে দেওয়ার নামে ওই এলাকার অন্তত ১৫ জন নারীর থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে সরেজমিন গেলে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আঁচ করা গেলেও টাকা গ্রহণকারী দালালের নাম বলতে রাজি হয়নি কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরমার্টিন ইউনিয়নের এক সচেতন রাজনীতিবিদ জানান, তার জানা মতে এক ব্যক্তি ভিজিডির কার্ড করে দেবে বলে অনেকের কাছ থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা করে নিয়েছেন।.
.
ওই ইউনিয়নের প্রতিজন মেম্বারকে ১৪টি করে ভিজিডি নামের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিএনপিকে ১৭টি, জামায়াতকে ১০টি, জেএসডিকে ৯টি করে নামের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে অন্তত ১০ জন নারীর দেখা মেলে। এর মধ্যে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও বিধবা মিনোয়ারা বেগম, কুলছুম ও নাছিমা বেগম এবং হাজিরহাট ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ছেমনা বেগম ,পারুল আক্তার ও জরিনা বেগম কর্মকর্তাকে অভিযোগ করে বলেন, ভিজিডির কার্ড করে দেবে বলে এলাকার মেম্বারদের মনোনীত এক নারী দালাল ও গ্রামপুলিশ সদস্যদের দিয়ে তাদের প্রত্যেকের কাছে ১০ হাজার করে টাকা চেয়েছেন। তাই টাকা না দিয়ে তারা কর্মকর্তার অফিসে ছুটে এসেছেন। তাদের মধ্যে মিনোয়ারা বেগম উচুকণ্ঠে বলেন, আমি একজন বিধবা নারী দুটি সন্তানসহ স্বামী আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমি ভিজিডি কার্ড পাই না, অথচ যাদের টাকা আছে স্বামী বিদেশে থাকে তারা টাকার বিনিময়ে কার্ড পাবে, তা হয় না। এ বিষয়ে কয়েকজন গ্রামপুলিশ সদস্য, মেম্বার, প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তারা টাকা গ্রহণের বিষয়টি কেউ স্বীকার করেননি। উল্টো এখনো কার্যক্রম শুরু না হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন। উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, দুবছরের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ২ হাজার ২০৩টি ভিজিডির নাম বণ্টন করা হয়েছে। আবেদন কার্যক্রম শুরু হবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। কেউ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও সূচিত্র রঞ্জন দাস জানান, ভিজিডির নাম শতভাগ যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হবে। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কেউ টাকা গ্রহণের বিষয় প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।.
ডে-নাইট-নিউজ / নাসির মাহমুদ (লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি) :
আপনার মতামত লিখুন: