লক্ষ্মীপুরে অন্য হাসপাতালে সিজারের জন্য মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (মাতৃমঙ্গল) থেকে জোরপূর্বক শিল্পি আক্তার নামে এক প্রসূতিকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরপরে ওই হাসপাতালের সামনের রাস্তাতেই স্বাভাবিকভাবে প্রসূতি ছেলে সন্তান জন্ম দেন।.
বুধবার (১৮ মে) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ঐ হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন, স্বজনরাই সিজারের জন্য রোগীকে নিয়ে যায়। শিল্পি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড সমসেরাবাদের জোড়দিঘিরপাড় এলাকার ফল দোকানের শ্রমিক আজগর হোসেনের স্ত্রী। তারা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড তেরবেকি এলাকায় বাসা ভাড়া থাকেন।.
প্রসূতির মা নুরজাহান বেগম জানান, প্রসব ব্যাথা উঠলে শিল্পিকে সদর হাসপাতাল সংলগ্ন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। মাগরিবের নামাজের আগে তার ব্যাথা বেড়ে যায়। সেখানে দায়িত্বে থাকা স্টাফ রৌশন আরা ইফতার করতে যান। এ সময় কর্তব্যরত আয়া শারমিন আক্তার স্বাভাবিক প্রসব হবে না বলে প্রসূতিকে বাইরে সদর হাসপাতাল কিংবা কোন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে সিজার করতে চাপ দেয়। একপর্যায়ে প্রসূতিকে বের করে দেওয়া হয়। এতে বের হতেই রাস্তায় পড়ে যায় প্রসূতি।.
পরে রাস্তাতেই প্রকাশ্যে প্রসূতি এক ছেলে সন্তান জন্ম দেন। প্রসূতি শিল্পী রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বলেন, ‘মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নার্স ও ডাক্তাররা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি। তারা আমাকে অনেকগুলো চড়থাপ্পড় দেয়। ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করছি। তবুও তাদের মন গলেনি। সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে তারা আমাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। হাসপাতাল থেকে একটু অদূরে রাস্তায় ছেলে হয়।.
মামাতো বোন রুনা আক্তার বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমি সেখানে যাই। বাচ্চা মাথা দেখা যাচ্চে বললেও আয়া শারমিন তাদের প্রতিষ্ঠানে আমার বোনকে রাখতে রাজি হয়নি। আয়া বারবারই বলছিলো বাইরে কোনো হাসপাতালে নিয়ে সিজার করাতে। কিন্তু কোনো হাসপাতাল নেওয়ার সুযোগ হয়নি। রাস্তাতেই আমার বোন সন্তানের জন্ম দেয়। নবজাতকের অবস্থা ভালো নয়। মা ও নবজাতক এখন সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’ অভিযুক্ত আয়া শারমিন রাত ৯টার দিকে গণমাধ্যমকর্মী ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. আশফাকুর রহমান মামুনের উপস্থিতিতে জানান, প্রসূতি ব্যাথার সহ্য না করতে পেরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। কেউ তাদের জোরপূর্বক বের করেননি।.
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সামনের বাসিন্দা নাজু বেগম বলেন, ‘প্রসূতি নারীর চিৎকার শুনে আমি ঘর থেকে ছুটে আসি। কিছুক্ষণ পর রাস্তায় এক ছেলে সন্তান জন্ম দেয় ওই নারী। পরে তাদের স্বজনরা এসে মা ও শিশুকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।.
লক্ষ্মীপুর জেলা পরিবার ও পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. আশফাকুর রহমান মামুন জানান, ঘটনাটি শুনে তিনি এসে নার্স, আয়া ও অন্যান্য রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই প্রসূতির স্বজনরাই সিজার করার জন্য চাপ দিয়েছে। নার্স ও আয়া বলেছিল স্বাভাবিক প্রসব হবে। কিন্তু প্রসূতির স্বজনরা তা মানতে নারাজ ছিলেন। এতে তারা নিজেরাই সিজার করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান।.
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, ঘটনাটি শুনে সঙ্গে-সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে। ঘটনাটি খুব দুঃখজনক। যদি কর্মরত কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।. .
ডে-নাইট-নিউজ / লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপনার মতামত লিখুন: