নাসির মাহমুদ (লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি): ব্যাংক-এনজিওসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে স্থানীয় পাড়ার দোকানে ব্যবসা করে কোনো মতে সংসার চলছিল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনের। কিন্তু হঠাৎ করে ছিঁচকে চোরের একের পর হানায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন তিনি। একে একে চার বার দোকান চুরি হওয়ার পর চোরকে ধরতে ফাঁদ পাতেন তিনি। সে অনুযায়ী চোরকে হাতেনাতে ধরতেও সক্ষম হন। পরে চুরি হওয়া সকল মালামাল ফেরতের প্রতিশ্রুতিতে ওই চোর স্থানীয় গণ্যমান্যদের মধ্যস্থতায় ছাড়া পায়। কিন্তু এর পরই ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ওই চোরের বাবা মিথ্যা মামলা করেন জসিমের বিরুদ্ধে। ওই মামলা নিয়ে তিনি এখন পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘটনাটি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরলরেন্স ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ডাকাতিয়ার পোল নামক এলাকার।.
.
ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন রোববার কমলনগর প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানান, গত ৬ আগস্টের পর থেকে তার দোকানে বিভিন্ন সময়ে চারটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় চোর নগদ অর্থসহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় দিশেহারা হয়ে চোরকে ধরতে কৌশল আঁটেন তিনি। কৌশলের অংশ হিসেবে গত ২৩ নভেম্বর রাতে দোকানঘরের কপাট তালাবদ্ধ করে তিনি ভিতরে লুকিয়ে থাকেন। রাত ১২টার দিকে প্রতিবেশী খলিল মাঝির ছেলে মো. রাজু (২৭) তার দোকানের মাচা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় দোকানের এক কোণে লুকিয়ে থাকা জসিম চুরির পুরো ঘটনাটি নিজের মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। পরে একপর্যায়ে তিনি চোর রাজুকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এসময় স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদে রাজু আগের চার ধাপে ওই দোকানে চুরি করার কথা স্বীকার করে। পরে রাজুর বাবা খলিল মাঝি তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চুরির টাকা জসিমকে ফেরৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজুকে ছাড়িয়ে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু লোকের ইন্ধনে খলিল মাঝি ব্যবসায়ী জসিমসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কল্পকাহিনী সাজিয়ে আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে কমলনগর থানাকে নির্দেশ দেন।.
.
এদিকে মামলার পর থেকে বাদি ও তার লোকজন জসিমসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকিসহ নানানভাবে হয়রানি করে আসছে। তাই ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেতে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেন জসিম।.
.
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আবুল কাশেম, মো. সবুজ ও স্থানীয় মসজিদের সেক্রেটারি আব্দুল হাইসহ আরও অনেকে জানান, ঘটনার সময় রাজুকে হাতেনাতে আটক করে জসিম তাদরকে খবর দেন। ওই সময় রাজু পূর্বেও জসিমের দোকানে চুরি করে টাকা ও মালামাল হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করে। যা উপস্থিত সকলে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। পরে রাজুর বাবা খলিল মাঝিকে খবর দিলে তার সামনেও রাজু চুরির কথা অকপটে স্বীকার করে। এসময় খলিল মাঝি ১৫দিনের মধ্যে চুরির টাকাগুলো পরিশোধ করবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলে রাজুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে নাটক সাজিয়ে খলিল মাঝি উল্টো জসিম ও তার ভাই-ভাতিজাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন বলে তারা জানান।.
.
জসিম উদ্দিনের বড় ভাই মো. মহিউদ্দিন জানান, তাদের নামে মিথ্যা মামলা করেই খলিল মাঝি ও তার ছেলে রাজু ক্ষান্ত হয়নি। ওখানে ব্যবসা করতে হলে রাজুকে চাঁদা দিতে হবে বলে তারা প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে। তাই ন্যায় বিচার পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন তিনি।.
.
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রাজুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। খুঁদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি তিনি।.
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, আদালতের নির্দেশে খলিল মাঝির দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তদন্তে বাদির (খলিল মাঝির) দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।.
.
তিনি বলেন, দোকান চুরির ঘটনায় জসিম মামলা করলে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে.
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: