.
কক্সবাজারের টেকনাফে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস মোস্তাক মিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার পর পুলিশের টানা ২০ দিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা আটক হন। জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা মোস্তাক হত্যার আদ্যেপান্ত বর্ণনা করেছেন পুলিশের কাছে। তবে এতো কম সময়ে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস একটি হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ডসহ জড়িতদের আটক এবং ঘটনার রহস্য উদঘাটন করায় স্থানীয় মানুষের ভূয়শী প্রশংসা কুড়িয়েছেন পুলিশ।.
.
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মার্চ টেকনাফ পৌরসভাস্থ খায়ুকখালী খালে টমটম চালক মোস্তাক মিয়ার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় জনতা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গলায় মাটিভর্তি ভারী বস্তা বাঁধা অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহত টমটম চালক সাবরাং ইউনিয়নে কাটাবনিয়া এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে। ঘটনার পর পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উখিয়া সার্কেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. ওসমান গণির নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনার মাস্টারমাইন্ডসহ জড়িত ছয় আসামীকে আটক করেন। আটকরা হল- মাস্টারমাইন্ড মো. আব্দুর রহিম (১৯), আব্দুল আমিন প্রকাশ পুতিয়া (১৬), ওমর ফারুক (২৪), ফরিদ আহমদ (৫০), সাদেকুর রহমান (২১) ও নুরুল আমিন (৪৩)।.
.
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মু. ওসমান গনি বলেন, মোস্তাক হত্যা একটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লু লেস হত্যাকান্ড ছিল। ঘটনার পরপরই আমরা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় জড়িতদের আটক ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা ওই মামলার মাস্টারমাইন্ডসহ জড়িত ছয়জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। বিজ্ঞ আদালতে তারা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মোস্তাক হত্যার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন। .
.
ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি আরও বলেন, মোস্তাকের হত্যাকারী সবাই আন্ত:জেলা টমটম ছিনতাই চক্রের সদস্য ছিল। ঘটনার দিন চক্রের সদস্য আব্দুর রহিম মোস্তাকের চালিত টমটম গাড়িটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পৌরসভার উপরের বাজার মন্দিরের সামনে থেকে যাত্রী বেশে ভাড়া করে। গাড়িটি অলিয়াবাদ কাড়ির মাথা তিনরাস্তার মোড়ে পৌঁছালে চক্রের আরেক সদস্য আব্দুল আমিন প্রকাশ পুতিয়া জহির গাড়িটি থামার সংকেত দেয়। ইয়াবা তল্লাশির নামে চালক মোস্তাককে নামিয়ে ফেলে এবং পরিকল্পিতভাবে দুইজনে মিলে মোস্তাককে হত্যা করে। পরবর্তীতে লাশের গলায় মাটিভর্তি বস্তা বেঁধে খালে পাড়ে ফেলে দিয়ে টমটমটি নিয়ে উখিয়ায় রওনা দেয়। সেখানে চক্রের আরেক সদস্য ওমর ফারুক সহ টমটমটি কোটবাজারের ফরিদের কাছে বিক্রি করে দেয়।.
.
টেকনাফ পৌরসভার অলিয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আমিন বলেন, খালের পাড়ে একজন টমটম চালকের মৃতদেহ পাওয়ার পর সবাই ভেবেছিল হয়তো ঘটনার কুল কিনারা খুঁজে পাবেনা প্রশাসন। সবার ধারণা ছিল গরীব টমটম চালকের হত্যাকারীদের ধরতে কেউ হয়তো গুরুত্ব দেবেননা। হত্যাকারীরা সহজে পার পেয়ে যাবেন এমন ধারণা ছিল সবার। কিন্তু টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ যেটি দেখিয়েছে সেটি টেকনাফ থানার ইতিহাসে বিরল। নিহত টমটম চালকের পরিবারের কোন ধরনের তদবির চেষ্টা ছাড়াই পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণির নেতৃত্বে পুলিশের চৌকষ একটি টিম রুদ্ধদ্বার অভিযান চালিয় ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে সক্ষম হন।.
.
টমটম চালক নিহত মোস্তাকের ঘাতকদের আটকের পর তার ভাই মোজাহার বলেন, আমরা গরীব মানুষ, ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার দুরে থাক, তাদের পরিচয় জানতে পারবো সেটিও কল্পনা করিনি। কিন্তু ভাইয়ের হত্যার পর ওসি সাহেব দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে শেষ পর্যন্ত সব আসামিকে আটক করেছে। আমাদের পরিবার পুলিশ বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞ।.
.
ডে-নাইট-নিউজ / টেকনাফ প্রতিনিধি :
আপনার মতামত লিখুন: