ঝিনাইদহে আত্মহত্যার সংখ্যা কমলেও বেড়েছে পুরুষদের আত্মহত্যার হার। সেই সাথে বেড়েছে একসাথে আত্মহত্যার প্রবণতা।জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যার্থতাসহ নানা কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ২ হাজার ৪১ জন নারী-পুরুষ। বর্তমানে করোকালে জেলায় আত্মহত্যার সংখ্যা কমলেও বেড়েছে পুরষদের আত্মহত্যার হার। তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ২০১৬ সালে জেলায় মোট আত্মহত্যা করে ৩৮৮ জন। এর মধ্যে নারী ২১৯ জন ও পুরুষ ১৬৯ জন, ২০১৭ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় ৪২৪ জনে।.
এদের মধ্যে নারী ২৩৭ জন ও পুরুষ ১৮৭ জন। ২০১৮ সালের পর থেকে জেলায় কমতে থাকে আত্মহননের সংখ্যা। সে বছর আত্মহত্যা করে ৩৯৬ জন। এদের মধ্যে নারী ২২০ জন ও পুরুষ ১৭৬ জন। ২০১৯ সালে আত্মহত্যা করে ৩০৬ জন। যার মধ্যে নারী ছিল ১৭১ জন ও পুরুষদ ছিল ১৩৫ জন। ২০২০ সালে জেলায় মোট আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৩২০ জন। যার মধ্যে নারী ছিল ১৬৯ জন ও পুরুষ ছিল ১৫১ জন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আত্মহত্যার সংখ্যা ২০৬ জন। যার মধ্যে নারী ১০৮ জন ও পুরুষ রয়েছে ৯৮ জন। গত ৫ বছরের তথ্য বিবেচনায় নারীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। কিন্তু করোনাকালে বেড়েছে পুরুষদের আত্মহত্যার কার।তথ্য বলছে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুরুষদের আত্মহত্যার হার ৪৩ থেকে ৪৪ ভাগ থাকলেও বর্তমানে তা বেড়েছে দাড়িয়েছে ৪৭ ভাগের বেশি। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউনে কর্মহীন আর পাবিবারিক কলহ আর হতাশা। এদিকে বর্তমানে জেলায় দেখা দিয়েছে একসাথে বা একরশিতে আত্মহত্যার প্রবণতা।বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডের বারান্দায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শহরের কাঞ্চনপুর এলাকার ২০ বছর বয়সী যুবক ইমরান হোসেন। গত ২৮ আগস্ট নব-বিবাহিতা স্ত্রীকে সাথে নিয়ে নিজ ঘরে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। স্ত্রী ওই দিন মারা গেলেও এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন সে। বিকেলে একসাথে ঘুরে সন্ধ্যায় আত্মহত্যা কারণ আজও অজানা পরিবারের।ওই মাসেরই ১৩ তারিখে প্রেমের স্বীকৃতি না পেয়ে এক রশিতেই ঝুলে আত্মহত্যা করে মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের প্রেমিক জুটি। ২২ আগস্ট দুপুরে হরিণাকুন্ডু উপজেলার বেলতলা গ্রামে পারিবারিক কলহের কারণে সদ্যবিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে দুইজন। হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে স্ত্রী ও পরে মারা যায় স্বামী।জেলা সনাকের সভাপতি সায়েদুল আলম বলেন, বর্তমানে আমরা দেখছি পারিবারিক কলহ, মনমালিণ্য, প্রেমে ব্যার্থতাসহ নানা কারণে একসাথে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এ ধরনের সংবাদ আসছে। সামাজিক এই ব্যাধি দুর করতে দ্বায়িত্ব নিতে হবে সরকার, সমাজ ও পরিবারের। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তৃণমুল পর্যায়ে গিয়ে আত্মহত্যার কু-ফল সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে।.
আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কাজ করে ঝিনাইদহের সোসাইটি ফর ভলান্টারি অ্যাকটিভিটিজ (শোভা) নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা কালে আত্মহত্যার হার কমেছে। তবে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেড়েছে। আয়-রোজগার না থাকা, হতাশা বা মানসিক অস্থিরতাই এ কারণ বলে জানান তিনি।জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঝিনাইদহসহ এ অঞ্চলের মানুষ কিছুটা আবেগ প্রবণ। যে কারণে আত্মহত্যার হার এখানে বেশি। .
এ জেলার মানুষ কখন আইলা দেখেনি, কখন দেখেনে রাতের আঁধারে নিজেদের ঘর-বাড়ি নদীতে বিলিন হতে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ অনেকটা সংগ্রামী। কিন্তু এ এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগের সম্মুখীন হয়নি। তারা একটু বেশিই আবেগ প্রবণ। আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে এটাও অন্যতম।তিনি বলেন, আত্মহত্যা সমাজ থেকে দুর করতে সমাজের সর্বস্তুরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দ্বায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করলেই এটি দুর করা সম্ভব।. .
ডে-নাইট-নিউজ / ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
আপনার মতামত লিখুন: