হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেনারী হাসপাতালে সেবা পেতে চিকিৎসকগণকে নগদ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পশু পালনকারী ভোক্তভোগীরা। এ ছাড়াও নিজের টাকায় সকল প্রকার ঔষধ ক্রয় করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেকেই।.
সরেজমিনে ২৬ ডিসেম্বর ১২ টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় পশু হাসপাতালটিতে একজন মাত্র চিকিৎসক উপস্থিত রয়েছেন।.
গরুর পা ভাঙ্গা নিয়ে যাত্রাপাশা এলাকার বিবলু দেব নামের একজন পশু পালনকারীর সাথে কথা হলে তিনি জানান- আমি একজন মুদি দোকানধার আমি কৃষকের সন্তান, আমার বেশ কয়েকটি গরু রয়েছে। আজ থেকে ১৫ দিন আগে আমার একটি গরুর পা ভেঙ্গে যায় এবং বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী পশু কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমানের কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি আমার বাড়িতে এসে চিকিৎসা দিতে হবে বলে জানান। হাসপাতালে পশুর কোন রকম সার্জারী করা হয় না এবং বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে অতিরিক্ত ভিজিট দিতে হবে বলে জানান উপ-সহকারী মোখলেছুর রহমান।.
পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে বাড়িতে এনেই গরুটির চিকিৎসা করাতে হয়েছে, বিনিময়ে উনাকে নগদ ৮০০ (আটশত) টাকা দিতে হয়েছে। উনার দেওয়া ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বাজারের ভেটেনারী ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনে এনেছি, দীর্ঘদিন চিকিৎসা দেওয়ার পরেও গরুটির কোন রকম উন্নতি না হওয়ায় এবং পায়ে পঁচন দেখা দেওয়ায় আবারও উনার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টিতে পাত্তা দেন নি, বাধ্য হয়ে গরুটি নিয়ে পশু হাসপাতালে যেতে হয়েছে, দীর্ঘ ৩ ঘন্টা অপেক্ষা করার পরে উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে উনি রাগান্বিত হয়ে বলেন এ সব চিকিৎসা হাসপাতালে হয় না, চিকিৎসা করাতে হলে বাড়িতেই যেতে হবে। পরবর্তীতে গরুর ক্ষত স্থানে পরিষ্কার করার জন্য বাজার থেকে লিকুইড এনে দিতে বললে আমাকেই সব কিছু করতে হয়েছে। .
এ বিষয়ে একই এলাকার হাঁসের খামারি শামীম মিয়া জানান- উনাদেরকে কোন বিষয়ে বাড়িতে আনতে হলে খরচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, ৪০ টাকার ভ্যাকসিন কিনতে হয় ৭০ টাকা দিয়ে, গরুর চিকিৎসার জন্য বাড়িতে আনলে তো আর কথাই নাই, অনেক গুলো ঔষধ লিখে দিয়ে একটি প্রেসক্রিপশন হাতে ধরিয়ে দেন।এ সকল ঔষধ উনাদের মনোনীত ফার্মেসী ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না এমন কি ফার্মেসীর নামও উল্লেখ করে দেন উনারা, সরকারী ঔষধ গুলোও কিনতে হয় অর্ধেক মূল্যে।.
এ ছাড়াও এলাকার লোকজন পশু-পাখীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষামান থাকতে হয় বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, বহু পশু-পাখী পালনকারীরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। .
অবশেষে চিকিৎসা পেলেও প্রচুর ঔষধ প্রেসক্রিপশন করে বাহিরের ফার্মেসী থেকে কেনার জন্য পরামর্শ দেয় চিকিৎসকগণ। সরকারীভাবে বিভিন্ন ওষুধ সাপ্লাই থাকলে ও কোন কিছুই পাচ্ছে না পশু-পাখী পালনকারীরা। তারা মনগড়া এক গাধা ওষুধ লিখে সকলকে বিদায় দেন ঔষধ গুলোও ক্রয় করতে হয় উনাদের মনোনীত ফার্মেসী থেকে। অথচ হাসপাতালে সরকারী ওষুধ সাপ্লাই থাকলে ও কেউ বিনা মূল্যে ঔষধ পাচ্ছে না এই ধরনের অভিযোগ রয়েছে অহরহ।.
এছাড়াও বানিয়াচং প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক ইমদাদুল হোসেন খান জানান সম্প্রতি বয়ে যাওয়া বন্যা পরিস্থিতিতে পশু পাখি পালনে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা চেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। সাংবাদিকবৃন্দ কোন রকম তথ্য জানতে চাইলে নানা রকম অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন।.
এ বিষয়ে হাসপাতালে গিয়ে উপ- সহকারী মোখলেছুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমাদের কাছে যে সকল ঔষধ থাকে এই গুলো আমরা দিয়ে থাকি, যে সকল ঔষধ আমাদের সংরক্ষণে নেই সে সকল ঔষধ প্রেসক্রিপশন করে দেই বাহির থেকে কিনে আনার জন্য। একা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মানুষের সাথে একটু উচ্চ স্বরে কথা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সহ অফিস টাইম ছাড়া বিজিট হিসেবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপসহকারী মোখলেছুর রহমান তালুকদার। .
এ সময় সার্জন সাহিদ আহমেদ তাপাদারের অফিস কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়।. .
ডে-নাইট-নিউজ / রিতেষ কুমার বৈষ্ণব-
আপনার মতামত লিখুন: