• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

ইবির হলে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেত্রী


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৪ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৪:২৩ পিএম;
ইবির হলে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেত্রী
ইবির হলে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেত্রী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে।.

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।.

নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও ঘটনা কেউ জানলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।.

আজ মঙ্গলবার (১৪ বেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ছাত্রী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে প্রভোস্ট সামসুল হক।.

অভিযুক্ত অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপর অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এবং ভুক্তভোগী একই বিভাগের শিক্ষার্থী।.

ভুক্তভোগী ছাত্রীকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী। উল্টো ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন।.

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, ‘গত ০৮ ফেব্রুয়ারি আমার ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হয়। এজন্য আমি গত ০৭ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের ৩০৬ নম্বর কক্ষে আমার এলাকার (পাবনা) পরিচিত এক আপুর রুমে গেস্ট হিসেবে উঠি। যথাযথভাবে সবাইকে সম্মান দিয়ে সেখানে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করি। এরপর ১১-১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় শেখ হাসিনা হলের আবাসিক ছাত্রী ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা আপুর নেতৃত্বে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তাবাসসুম আপুসহ নাম না জানা আরও অন্তত ৭-৮ জন র‌্যাগিংয়ের নামে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। তারা আমাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। এমনকি আমার প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন তারা।.

অভিযোগপত্রে ভয়ংকর অভিযোগের বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই ভুক্তভোগী বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি আমাকে ডিপার্টমেন্টের ২০২০-২১ এর তাবাসসুম নামে সিনিয়র আপুর রুমে দেখা করতে বলা হয়। কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় যথাসময়ে যেতে পারিনি। এরপর থেকেই তারা আমার ওপর চড়াও হন এবং পরে তাদের রুমে গেলে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন। হল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ারও হুমকি দেন।  .

তারা অভিযোগ করতে থাকেন তাদের না জানিয়ে কেন হলে উঠেছি। অথচ হলে আমি আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে না, গেস্ট হিসেবে সাময়িক সময়ের জন্য উঠেছি। কিন্তু প্রথম দফায় গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে আমার ওপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় এবং হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।.

পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক বিকেল ৪টায় হল প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রক্টরের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। কিন্তু রাত না পেরোতেই রোববার দিনগত রাত আনুমানিক ১১টার দিকে অন্তরা আপুসহ ৭-৮ জন আমাকে একটি গণরুমে নিয়ে যান এবং ওনারা ৭-৮ জন মিলে এলোপাতাড়িভাবে মারা শুরু করেন। ‘আপু, আপনারা আমাকে কেন মারছেন’ বলতে গেলে উনারা আমার মুখ চেপে ধরেন এবং সজোরে চোয়ালে থাপ্পড় মারতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন- ‘চিনিস আমাদের, আমরা কত খারাপ?’ ‘আমরা তোর কী করতে পারি কোনো আইডিয়া আছে আমাদের সম্পর্কে তোর?’। তখন আমি কান্না করে আপুকে বলি- আমাকে আর মাইরেন না, এ সময় ওনাদের পা ধরে মাফ চাইতে গেলে তারা লাথি মারেন। আর অকথ্য ভাষায় আমাকে ও আমার মা-বাবাকে নিয়েও গালিগালাজ করেন।.

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমার বুকে আঘাত করাসহ গামছা দিয়ে আমার গলায় ফাঁস দিয়ে ধরে রাখা হয়, ধম যায় যায় অবস্থায় ছাড়া হয়, আবার ধরা হয়। আর বলতে থাকেন- ‘যা বলবো একটা কথাও যেন বাইরে না যায়’। একপর্যায়ে তারা একটা ময়লা গ্লাস আমাকে দিয়ে চেটে পরিষ্কার করিয়ে নেন এবং সেটার ভিডিও ধারণ করেন। তারপর তারা বলতে থাকেন- ‘জামা খোল’, আমি জামা খুলতে না চাইলে তারা আমাকে আবার মারধর শুরু করেন এবং আমার জামা খুলে জোর করে আমাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করে রেখেছেন।  .

ভিডিও নিয়ে আমাকে তারা বলেন- যদি বাইরের কাউকে একথা বলিস, তাহলে তোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেব। যাতে তুই কাউকে মুখ দেখাতে না পারিস। আর অন্তরা আপু বলেন- ‘তুই যদি প্রশাসনের কাছে কোনো অভিযোগ দিস, তাহলে তোকে মেরে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো, যা বলেছি তা মনে থাকে যেনো!’।  .

টর্চার শেষে রাত আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টার পর আমাকে অন্য একটি গণরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর সবাই বলেন, মুখ খুললেই কিন্তু খবর খারাপ হয়ে যাবে। পরেরদিন সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) খুব সকালে জীবন বাঁচাতে আমি হল থেকে পালিয়ে গ্রামের বাড়ি পাবনায় চলে যাই। তারপর সকালে আমাকে হলে না পেয়ে অন্তরা আপুসহ ওই ৭-৮ জন সবাই আমাকে একাধিকবার ফোন দেন, কিন্তু ভয়ে আমি কারও ফোনই রিসিভ করিনি। পরে আমি বাসায় এসে আমার পরিবারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।.

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, ‘সে (নবীন ছাত্রী) সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল। ও আমাকে চেনেও না। অথচ আমার নাম ব্যবহার করে সিনিয়র ছাত্রীদের শায়েস্তা করবে বলে হুমকিও দিয়েছে। নবীন ওই ছাত্রী ওর এক ভাইকে দিয়ে তারই বিভাগের সিনিয়রকে (তাবাসসুম) হুমকি-ধামকি দিয়েছিল। পাশাপাশি ওর পরিচিত এক ভাই ফোন দিয়ে আমাকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। গত রোববার প্রক্টর স্যার, প্রভোস্ট স্যার থাকাকালীন একটা মীমাংসা হয়েছিল। বিষয়টি তখনই সমধান হয়ে যায়। পরে আর কোনো কিছুই হয়নি। এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই ছাত্রীর সঙ্গে এরকম কোনো ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। ’ .

ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টির খোঁজখবর নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।.

এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শেলীনা নাসরিন বলেন, আমরা র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে বরাবরই জিরো টলারেন্স। ওই ছাত্রীর বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।. .

ডে-নাইট-নিউজ /

রাজনীতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ