• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

মানবিক মুল্যবোধের চরম অবক্ষয়


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৪১ পিএম;
মানবিক মুল্যবোধের চরম অবক্ষয়
মানবিক মুল্যবোধের চরম অবক্ষয়

সকল প্রশংসা এক মাত্র বিশ্বপ্রভু মহান আল্লাহর প্রাপ্য।যিনি এ জগত সংসারের যাবতীয় বস্তুর সৃষ্টিকর্তা,হেফাজতকারী,পরিচালনাকারী ও সর্বশেষ মৃত্যুদাতা।কারন ‘জগতের সকল প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’।তিনি এক, অদ্বিতীয়, তাঁর সমতুল কেহ নেই।সর্বশ্রেষ্ট,শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) আল্লাহর প্রেরিত নবী।হাজার হাজার সালাম ও দরুদ পেশ করি হযরত মোহাম্মদ (স:)’র নামে।মানুষকে আল্লাহ আশরাফুল মাখলুকাত নামে অভিহিত করেছেন সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব বলে।কারন মানুষের মধ্যে রয়েছে বিবেক, জ্ঞান,বুদ্ধি,বিবেচনাসহ সচেতনতাবোধ সম্পন্নতা।আল্লাহ মানুষের জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিভাবে জীবনযাত্রা পরিচালিত হবে।এ সমস্ত বোধ শক্তি থাকার মুল মন্ত্র হল সৎ, সত্য সঠিক পথে পরিচালিত হওয়া,হারাম–হালাল, বৈধ-অবৈধ বুঝে হালাল ও বৈধ আয়ের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করা।অত:পর নীতি নৈতিকতা,ভদ্র, নম্র আচার আচরণের মাধ্যমে জীবন নামক তরী বেয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছা।প্রত্যেক মানুষের পিছনে মৃত্যু দুত সব সময় রয়েছেন।নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত সময়ে সবাইকে চলে যেতে হবে।এক মিনিট আগেও না, এক মিনিট পরেও না।পশু পশু হয়ে জন্মায়।তাকে পশুত্ব অর্জন করতে হয় না। কিন্তু মানুষকে মনুষত্ব অর্জন করতে হয়।মনুষত্বের মুলে রয়েছে নীতি,নৈতিকতা, মানবিক,হালাল, বৈধ পন্থা অনুসরণ করে অভিষ্ট গন্তব্যে পৌছা।সুতরাং তা অর্জন করতে অনেক কঠিন,কঠোর ও বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌছা প্রত্যেক নরনারীর ঐকান্তিক কামনা ও বাসনা থাকা চাই।কিন্তু আমরা বর্তমানে কতটুকু মানবিক ও মনুষত্ব সম্পন্ন মানুষের পরিচয় দিচ্ছি?তাই জিজ্ঞাস্য? .

বর্তমানে সামান্য স্বার্থের লোভে আমরা যে পরিচয় দিচ্ছি তা কতটুকু নৈতিক, মানবিক ও মনুষত্ব নির্ভর?দু’একটি উদাহরণ দিলেই তা স্বচ্ছ আয়নায় পরিস্ফুটিত হবে সহজে।এইতো গতকল্য একটি ভিডিও দেখে হলাম আশ্চার্যান্বিত।কুমিল্লা জেলার এম এ জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্কুলের নিকটেই তিনির বাসা।সে বাসায় স্কুল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে তিনি চলছেন।আরো টিনের নির্মিত ছয়টি কক্ষ রয়েছে, তাতেও প্রধান শিক্ষকের রোম থেকে সংযোগ দেয়া হয়েছে।একজন শিক্ষকের বেতন বর্তমানে ৩০/৪০ হাজার।এতো টাকা পেয়েও তিনি অবৈধ, অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত।প্রাপ্ত বেতনে যদি শিক্ষকের জীবন যাপন কঠিন হয়।তবে একজন মসজিদের ইমাম, শ্রমিক, কৃষক মাত্র ৪/৫ হাজার টাকায় এবং একজন কৃষক কত অমানবিক পরিশ্রম করে ৬/৭ হাজার টাকায় তাঁদের জীবন চলে।শিক্ষক মহোদয় কি খান? কোথায়,কিভাবে ব্যয় করেন?তিনি কি সোনা রুপা খেয়ে ফেলেন?আর শ্রমিক,কৃষকের,ইমামের জীবন যদি অল্প বেতনে সংকুলান সম্ভব হয়। তবে কেন শিক্ষকের উচ্চ বেতন পেয়েও সংকুলান হয় না।উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জবাবে তিনি বলেছেন ৭/৮ বৎসর যাবত এভাবে চলছেন। কিন্তু অন্যান্যরা বলেছেন আরো দীর্ঘ দিন থেকে ব্যবহারের কথা।আমি আমার মুরব্বিয়ানদের মুখ থেকে প্রায়ই শুনতাম একটি প্রবাদসম বাক্য।যা হচ্ছে “বৈধ, হালাল উপার্জনে রয়েছে বরকত(মুরাদ)”।অবৈধ ও হারাম উপার্জনে বরকত (মুরাদ) শব্দটির অনুপস্থিতি।শাক-শবজি খেয়ে কৃষক,শ্রমিক অনেক বলবান,অপরদিকে বিরিয়ানী খেয়ে হচ্ছেন ডায়াবেটিস,কোলস্টেরল সমৃদ্ধ।খানা খাদ্যে নিষেধাজ্ঞা সমৃদ্ধ।শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর,সম্মানী ব্যক্তি।কিন্তু কাজকর্ম নিন্দিত।(সব নয়)একজন শিক্ষক সত্য ও সততার হবেন প্রতিকী।বিগত ১২জানুয়ারি ২০২১ দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকার প্রথম পৃষ্টায় প্রকাশিত “৬ বছর অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক” এবং সুরমা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম’র ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের প্রকাশিত সংবাদ “ থাকেন আমেরিকায়, করেন সিলেটে প্রধান শিক্ষিকার চাকুরী”শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ পাঠে জানা যায়, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বৈরাগিপুঞ্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমেনা খাতুন স্কুলে ৬ বছর যাবত অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন।অভিভাবকরা বিষয়টি লিখিত ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালককে জানালে অভিযোগের সত্যতা তদন্ত পূর্বক একটি বিভাগীয় মামলা করা হয় এবং মামলায় তার দুই বছরের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়।ঐ শিক্ষকের কর্মকান্ডে ছাত্ররা বা সন্তানরা কি শিখবেন?তা পাঠকের বিবেচ্য!ঐ শিক্ষকদ্বয়ের এ জাতীয় মন মানসিকতা কি সত্যিকার নৈতিকতা ও মানবতাবোধের?আমরা কোথায় চলেছি, আকাশে না পাতালে?অবক্ষয়ের মাধ্যমে হচিছ বঞ্চিত প্রকৃত বাস্তবতা থেকে?ব্যক্তি, গোষ্টি,সমাজ,জাতি যাচ্ছি রসাতলে।  .

আরেকটি কাহিনী সে দিন আমি আমার এক বন্ধুর মুখ থেকে শুনে হতবাক হয়ে গেলাম।আমাদের সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌথ সম্পত্তি।খুব কম সংখ্যক বাটোয়ারা দলিল হয়ে থাকে।মৌখিক ভাবে চিহ্নিত করে সকলেই ভোগ করতে অভ্যস্থ।এক সময় ছিল একজন তার অংশের ভুমি বিক্রি করতে চাইলে অন্য শরিকান সাক্ষী হিসাবে দলিলে স্বাক্ষর দেবার প্রচলন।তাই ভাতিজা তার অংশের জমি বিক্রি করবে।এখন অন্য শরিকানের সাক্ষী প্রদান আবশ্যক।সেহেতু ভাতিজা বলছে চাচাকে সাক্ষী প্রদান করতে।জমির তার অংশের বিক্রির কথা স্পষ্ট করে বলেছে চাচাকে।চাচা সাক্ষী দিয়াছেন বিশ্বাস করেই দলিল না দেখে।এখানে একটি কথা উল্লেখ করতেই হয়।কবরস্থান কিন্তু যৌথই থাকে।কারন সেখানে কবরস্থ হবেন সবাই।কিন্তু আমাদের উল্লেখিত ভাতিজা মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়।চাচা তা ঘুণাক্ষরে ও টের পাননি।ভাতিজার অংশের আংশিক ভুমিসহ কবরস্থানের দুই তৃতীয়াংশ দলিলে লিখে সাক্ষীর কলামে চাচার স্বাক্ষর নেয়।আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা অতীব প্রয়োজন।ক্রেতা ঐ বংশেরই একজন।উভয়ে চক্রান্ত করে তা বাস্তবায়ন করছে লোভ দেখিয়ে ক্রেতা বিক্রেতাকে।গোপনে তাদের মধ্যে আঁতাত, শলা পরামর্শে কাজটি করা হয়েছে।দিন যায় কথা থাকে।চাচা কবরস্থ ভুমির অংশ বিক্রি করেননি তিনির সত্যে অটল।অপরদিকে বিক্রেতা ক্রেতা এক সময় গোপন আঁতাতে ধরে ফাটল।বের হয়ে আসে গোপন কথা জনসমক্ষে।তখন কিন্তু নদীর জল অনেক বয়ে গেছে।বিক্রেতা দলিল দ্বারা টাকার বিনিময়ে তার নামে কবরের দুই অংশ রেকর্ড করে নেয় টাকা ও শক্তির প্রভাবে।চাচা তাদের সাথে পেরে উঠতে পারছেন না দুর্বল বলে।কিন্তু ভুমিটুকু কবরস্থান বলেই রেকর্ড হয়।এখন কথা হল কবরস্থান বিক্রি হয় না তা বিজ্ঞজন মাত্রই জ্ঞাত।তারপরও হয়ে যায়, যাচ্ছে।সাক্ষী দেবার কারনে চাচার কবরের অংশটুকু থেকে তিনি হলেন বঞ্চিত।সর্বশেষ কথা হল এ ক্ষেত্রে কবরস্থান নিয়েও মানুষ প্রতারণা, প্রবঞ্চণা,ঠকানোর ধান্ধায় লিপ্ত।আর বাকি কি রয়েছে?প্রতারকও তো কবরস্থানে যাবেন শেষ পর্যন্ত।তা থেকে তো কোন ক্রমেই রেহাই নেই।সুতরাং মানুষের মনুষত্ব, মানবিকতা,নীতি-নৈতিকতা কোথায়, কোন অবস্তায় কি ভাব দাড়িয়েছে। সম্মানিত পাঠক ও বিজ্ঞজনের আর ব্যাখ্যা করে দেখাবার প্রয়োজন নেই।যে কেহ অতি সহজে অবশ্যই বুঝে নিতে কষ্ট হবার কথা নয়।আরো তদন্ত করলে যে বের হবে না তা কি নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে?শুধু শিক্ষকদের কথা নয়। দেশের প্রতিটি সেক্টরে অনুরুপ দায়িত্বহীনতার ভুরি ভুরি প্রমাণ মিলবে।দু’একজনের জন্য কেন হবে ঐ সমাজ কলংকিত? .

   যে কোন কাজে ব্যক্তির চারিত্রিক সংশোধন সর্বাগ্রে প্রয়োজন।ব্যক্তি সংশোধিত না হলে সামগ্রিক কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন অসম্ভব।আবার ব্যক্তি সংশোধিত হলেই চলবে না।প্রয়োজন সমষ্টি।কারন পৃথিবীর কোন কিছুই সংঘবদ্ধ ব্যবস্থাপনা ব্যতিরেকে উন্নতির শিখরে পৌছতে পারে নাই, পারবে না।সুতরাং সম্মিলিত শক্তির গুরুত্ব অপরিসীম।তারপরও কথা থেকে যায়।কোন কিছুতেই কিছু হবে না।যতক্ষণ মানুষকে সঠিক অর্থে সঠিক মানবতা, নৈতিক গুণাবলী সমৃদ্ধ ও মানবিক মানুষ বানানো যাবে না।এ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুষ, দুনীর্তি মারাত্মক ব্যাধি রুপে আক্রান্ত সমাজ।এ থেকে পরিত্রাণের আবশ্যকতা অত্যন্ত জরুরী।নৈতিকতা ছাড়া যেমন কেহ ভাল হতে পারেন না,তদ্রুপ মানবিক এবং সামাজিক মুল্যবোধের অভাবে পূর্ণতায় আসা সম্ভব নয়।মুল্যবোধের অবক্ষয় যাতে না ঘটে সেদিকে আমাদেরকে সজাগ, সুদৃষ্টি ও লক্ষ্য রাখতেই হবে।তাহলে হয়ত আমরা পেতে পারি সুন্দর ও সঠিক সমাজ ব্যবস্থা।পরিশেষে এ প্রত্যাশা সর্বাত্মকরণে প্রতিটি ক্ষেত্রে অবক্ষয় থেকে উটে আসার।তথা দায়িত্বশীল, কর্তব্য পরায়ন ও নৈতিকতাবোধে কাজ করার, দায়িত্ব পালন করার।তা না হলে কবির ভাষায় বলতে হবে আক্ষেপের সুরে,“রাত পোহাবার কত দেরী,পাঞ্জেরী”। .

 লেখক মিজানুর রহমান মিজান সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।   .

.

ডে-নাইট-নিউজ / মিজানুর রহমান মিজান 

সম্পাদকীয় বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ