প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: কচুরিপানা যেন প্রকৃতির এক অপরূপ দান। বেশিরভাগ আবর্জনাময় জলাশয়ে কচুরিপানা জন্মে থাকে। যার ফুলে সুভাশিত হয়ে উঠে খাল-বিল, হাওড়-বাওড়,পুকুর, জলাশয় কিংবা দীঘি। প্রকৃতির এই দানকে অনেকে বাড়তি ঝামেলা মনে করেন। আবার এই ফুলে অনেকে আকৃষ্ট হয়ে প্রকৃতির এই অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
বর্ষাকাল শেষ তাই বর্তমানে খাল-বিল,ঝিলের পানি অনেকটা কম। যেটুকু পানি জমে আছে তাতেই জন্মেছে সবুজ পাতার বেষ্টনির মাঝে ফুটে আছে সাদার উপর হালকা বেগুনি রঙের কচুরিপানা ফুল। পড়ন্ত বিকেলে বিলের ধারের পাশের রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে এমনই ফুলের দৃশ্য দেখা যায়। এতে আকৃষ্ট হচ্ছে ফুল প্রেমি মানুষ। গ্রাম বাংলার খাল-বিল, ছোট নদীতে ফুটে নোংরা জলে স্বর্গীয় এই কচুরিপানা ফুল। নীলচে শিরা-উপশিরায় বিন্যস্ত হালকা বেগুনি রঙের মায়াবী এই ফুল হারানো শৈশবকে খুব কাছে টানে। সকলের কাছে অতি পরিচিতি এক উদ্ভিদের নাম কচুরিপানা।
জানা গেছে, ১৮০০ সালের শেষ ভাগে এক ব্রাজিলিয়ান পর্যটক কচুরিপানা নিয়ে আসেন আমাদের দেশে । এটির আদি জন্মস্থান দক্ষিণ আমেরিকায় বলে জানা যায়। এর সাতটি প্রজাতি রয়েছে এবং বহুবর্ষজীবী। এই কচুরিপানা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। কচুরিপানার বায়ুকুঠুরি থাকায় সহজেই তা পানিতে ভাসতে পারে। কচুরিপানার মূল পানি পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে এবং এর ফুল বিভিন্ন পাখির বীজ বিস্তরণে সাহায্য করে। গ্রামাঞ্চলে এটিকে অনেকে ‘ফেনা” বলে থাকে।
দিনাজপুর ফুলবাড়ী উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামঞ্চলে পরিত্যক্ত জলাশয়, অনাবাদি পুকুর, কিংবা বিলের পানিতে কচুরিপানা দেখা যায়। অবহেলায় যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এক আগাছা উদ্ভিদ কচুরিপানা, যার উপকারের চেয়ে অপকারী দিক কোনো অংশেই কম নয়,এমন এক অবহেলিত উদ্ভিদে এত নয়নাভিরাম,মনোমুগ্ধকর,চিত্তাকর্ষক ফুল যা প্রকৃতি প্রেমীদের বিমুগ্ধ না করে পারে না।
কচুরিপানা দেখতে গাঢ় সবুজ হলেও এর ফুলগুলো সাদা পাপড়ির মধ্যে বেগুনি ছোপযুক্ত কিছুটা ময়ূরের পাকার মতো দেখতে। সাদা এবং বেগুনি রঙের মিশেলে এক অন্যরকম আবহ তৈরি করে। সাদা পাপড়ির স্থলে কোথাও হালকা আকাশি পাপড়িও দেখতে পাওয়া যায়।
প্রতিটি ফুলে ছয়টি করে পাপড়ি দেখা যায়। এলাকাভিত্তিক অনেকে একে একেক নামে চিনে থাকে। কচুরি ফুলের মুগ্ধতায় আমাদের মধ্যে প্রকৃতি প্রেম জাগ্রত হোক।
প্রকৃতি প্রেমিরা বলছেন,যারা এর ব্যবহার ও উপকারিতা জানেন তাদের কাছে এটি একটি সম্পদ। আবার যারা এর ব্যবহার পদ্ধতি আয়ত্ব করতে পারেনি তাদের কাছে এটি একটি আগাছা । তাই এই সম্পদটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হলে অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ হ্রাস করতে পারবেন,কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে কচুরিপানার বহুমাত্রিক ব্যবহারে।
কচুরিপানাকে অনেকে ভাসমান সবজি চাষ,মাছের খাবার,জৈব সার,গবাদি পশুর খাবার,রাস্তার গর্ত ভরাট করা,পিচ ঢালাইয়ের নতুন রাস্তায় পানি ধরে রাখার কাজে এবং কচুরিপানার শিকড়ে বল তৈরি করে সেখানে বীজ অঙ্কুরদম করানোসহ ঢেউয়ের হাত থেকে বসত ভিটে রক্ষার কাজেও কচুরিপানা ব্যবহার করে থাকেন।
উপজেলা কৃষি আধিদপ্তর বলছেন, বর্তমানে ভাসমান সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকারিভাবে কিছু কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি এই কার্যক্রমে জনগোষ্ঠীকে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা হলে কচুরিপানার যথাযথ ব্যবহার আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহার পদ্ধতিগুলোর বিস্তৃতির মাধ্যমেও কচুরিপানাকে সম্পদে পরিণত করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কচুরিপানার ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জনগোষ্ঠী ব্যাপক ধারণা লাভ করলে কচুরিপানা আগাছার পরিবর্তে প্রাকৃতিক সম্পদ হয়ে উঠবে।
.
ডে-নাইট-নিউজ / প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
আপনার মতামত লিখুন: