• ঢাকা
  • শুক্রবার, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ ফেরুয়ারী, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

বিশ্বনাথে আলু চাষীদের মাথায় হাত


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৭ ফেরুয়ারী, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:৪১ পিএম;
বিশ্বনাথে আলু চাষীদের মাথায় হাত
বিশ্বনাথে আলু চাষীদের মাথায় হাত

মো. সায়েস্তা মিয়া, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি: বিশ্বনাথে আলু চাষীদের মাথায় হাত। মড়ক পঁচা রোগে গাছ পঁচে যাচ্ছে। দেখতে লাগছে আগুনে পুড়ে ছাঁই হয়েছে মাঠ। বিঘার পর বিঘা আলুর জমিতে পচন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চাষীরা হতাশায় ভুগছেন। অপরিপক্ষ আলু গাছে পচন ধরায় আলুর ফলন নিয়ে শংকিত কৃষকেরা। অনেক চাষীই বলছেন গাছ পরিপক্ষ না হলে আলুর ফলন ভাল হয় না। আলু পরিপক্ষ হতে কমপক্ষে ২ মাস সময় লাগে। চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া আলু সংরক্ষণে বেশি দিন রাখা যায়। অসময়ে এমন রোগে আলুর গাছ আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে পড়বেন কৃষক। সংরক্ষণে বেশি দিন রাখা যাবে না এমন ধরণের আলু। প্রতিকার হিসেবে রাসায়নিক ঔষধ ব্যবহার করেও পচনরোধ করতে পারছেন না এমনটি জানান একাধিক চাষী। আলু চাষে প্রসিদ্ধ বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পচনের দৃশ্য ও আলু চাষীদের হা-হুতাশ।.

 .

আলু গাছের পচনের কারণ হিসেবে জানা গেছে অতিরিক্ত ঘণকোয়াশা এবং দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরম তাপমাত্রা এই রোগের প্রধান কারণ। বৈরী আবহাওয়া এর জন্য দায়ী বলে জানা গেছে কৃষি অফিস সূত্রে।.

 .

বিশ্বনাথ উপজেলার ২নং খাজাঞ্চী ইউনিয়নে সবচাইতে বেশি আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। পুরো উপজেলায় গতবারের চেয়ে এবছর আলু উৎপাদন মাত্রা অনেকটাই বেড়েছে। আলু রোপনের সময় কৃষকেরা বীজ সংকটে পড়েন এবছর। এখন পচনরোগে পূঁজি ঘরে তোলা নিয়ে শংকায় আছেন তাঁরা। খাজাঞ্চী ইউনিয়নের পাকিছিরি গ্রামের আলু চাষী নুর আহমদ, ইছমত আলী ও নওরোজ আলী জানান; দুই তিন দিনে পুরো জমির আলু গাছ মরে গেছে। বালাইনাশক ব্যবহার করে ও রোগের প্রতিরোধ করা যায়নি। আলুর আকৃতি এখনো পরিপূর্ণ হয়নি । খরচ উঠানো দায় হবে এবার। কৃষিবীদ ও পরামর্শ দাতা কাউকে পাওয়া যায় না। তবে আগে থেকে এই রোগের প্রাদূর্ভাব বুঝে ঔষধ ব্যবহার করলে অনেকটাই সুফল পাওয়া যায়। .

 .

আলু পচন রোগের বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা তথ্য থেকে যা জানা যায়: আলুর লেইট ব্লাইট বা মড়ক রোগ বিশ্বজুড়ে অন্যতম একটি ক্ষতিকারক রোগ। রোগ বাংলাদেশের আলু উৎপাদনের প্রধান অন্তরায়। ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে আলুর চাষাবাদ বিস্তারের পাশাপাশি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর রোগের আক্রমণে আলুর ফলন গড়ে শতকরা ৩০ ভাগ হ্রাস পায়। মড়ক রোগের আক্রমণে ক্ষতির পরিমাণ আলুর জাত, গাছের বয়স, রোগ আক্রমণের সময় আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে রোগের আক্রমণে আলুর ফলন সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হতে পারে। .

 .

মড়ক রোগ চেনার উপায়: রোগের আক্রমণে প্রথমে গাছের গোড়ার দিকের পাতায় ছোপ ছোপ ভেজা হালকা সবুজ গোলাকার বা বিভিন্ন আকারের দাগ দেখা যায়, যা দ্রুত কালো রং ধারণ করে এবং পাতা পচে যায়। সকাল বেলা মাঠে গেলে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাউডারের মত জীবাণু দেখা যায়। ঠাণ্ডা কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় আক্রান্ত গাছ দ্রুত পচে যায়। এই অবস্থায় - দিনের মধ্যেই ক্ষেতের সমস্ত গাছ মরে যেতে পারে। রোগে আক্রান্ত আলুর গায়ে বাদামি থেকে কালচে দাগ পড়ে এবং খাবার অযোগ্য হয়ে যায়। .

 .

রোগ বিস্তারে অনুকূল আবহাওয়া: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের (মধ্য কার্তিক থেকে মধ্য ফাল্গুন) যে কোন সময় নিম্ন তাপমাত্রা (রাতে ১০-১৬ ডিগ্রি এবং দিনে ১৬-২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং কুয়াশাচ্ছন্ন আর্দ্র আবহাওয়া (আর্দ্রতা ৯০% এর বেশি) রোগ বিস্তারের জন্য অনুকূল। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলে রোগ - দিনের মধ্যে মহামারী আকার ধারণ করে। বাতাস, বৃষ্টিপাত সেচের পানির সাহায্যে রোগের জীবাণু আক্রান্ত গাছ থেকে সুস্থ গাছে দ্রুত বিস্তার লাভ করে।.

 .

আলুর মড়ক রোগ নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায়ের সাথে আলোচনা করলে তিনি কৃষকদের পরামর্শ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানান, বর্তমানে আলুর মড়ক রোগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। তবে রোগটির লক্ষণ প্রকাশের শুরু থেকেই সচেতন হলে রোগটিকে দমন করা যায়। আলুর বয়স ৫০ দিন বা তার কম হলে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আলুর গাছের বয়স ৫০ দিনের বেশি হলে ম্যানকোজেব এর সাথে মেটালেক্সিল গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। রোগের অনুকূল পরিবেশ বজায় থাকলে তিন থেকে চারদিন পর পর নিয়মিত স্প্রে করলে প্রতিরোধ সম্ভব।.

.

ডে-নাইট-নিউজ /

কৃষি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ