সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটে কর্মরত নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যদের নানা অভিযোগ ও ক্ষোভের শেষ নেই। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সিলেটের মাঠে পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কোনো দিকনির্দেশনা না দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যদের উত্তেজিত জনতার রোষানলের মুখে ফেলে যাওয়ায় বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরা এখন তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারিতা প্রকাশ করছেন। সিলেটের এডিশনাল ডিআইজি ও রেঞ্জ রির্জাব ফোর্স (আরআরএফ), লালাবাজারের কমান্ড্যান্ট হুমায়ুন কবিরের উপরও ক্ষুব্ধ নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, হুমায়ুন কবিরের বাসার মুরগি পাহারা দেওয়ানোর জন্য প্রতি রাতে তিনজন পুলিশ কনস্টেবলকে নাইট ডিউটি করাতেন।.
.
.
.
.
সিলেট বিভাগীয় রেঞ্জ অফিসের ডিআইজি ও বিভাগীয় কমিশনারের গার্ড কমান্ডার নায়েক রাজ কমল অভিযোগ করে বলেন, আমরা নিম্নপদস্থ পুলিশ সদস্যদের নানা ভাবে টর্চার করেন আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের বাজার করা থেকে শুরু করে বাসার মুরগির পাহারাও আমাদের দিতে হয়। সিলেট জেলার কমান্ডিং অফিসার (সিও) হুমায়ুন কবির স্যারের বাস ভবনে মুরগি ছিল ৩০টি। বাইরের কুকুর এসে উনার মুরগিগুলো খেয়ে ফেলে। তাই উনার মুরগির খামারের প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন পুলিশ সদস্যকে নাইট ডিউটি করতে হত। এই মুরগি পাহাড়া দেওয়ার জন্য রাতে তার বাসায় পুলিশের গাড়ি কোনো রকম নামিয়ে দিয়ে আসে। নাইট ডিউটি করে লালাবাজার পুলিশ লাইনসে ফিরতে হয় নিজ উদ্যোগে। ডিউটি শেষ পুলিশ লাইনে ফিরতে হয় তখন ভোরে কোনা গাড়ি থাকে না। তখন এই পুলিশ সদস্যরা সিলেট নগরীর শেখঘাট থেকে হেটে হেটে প্রায় সাত কিলোমিটার দূর লালাবাজার আসেন। এটা আমাদের লালাবাজার পুলিশ লাইনসের সকল ফোর্সের অভিযোগ। নায়েক রাজ কমল আরও বলেন, হুমায়ন কবির স্যারের বাসভবনের তার একটি পোষা বিড়ালকে বাইরের কুকুর মেরে ফেলে। তার বিড়াল কেন মারা গেল এই জন্য জবাবদিহিতা দিতে হয় পুলিশ সদস্যদের। তার বিড়াল মারা যাওয়ায় তিনি দুই পুলিশ কনস্টেবলকে সাসপেন্ডও করেছিলেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল ১১টায় সিলেট নগরীর মিরের ময়দানস্থ পুলিশ লাইনসে সিলেট জেলা ও মহানগর পুলিশের প্রায় ৫ শতাধিক পুলিশ সদস্য বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন সিলেটের লালাবাজার পুলিশ লাইনের নায়েক রাজ কমলসহ আরও অনেকে। তারা সবাই সিলেটের এডিশনাল ডিআইজি ও আরআরএফ লালাবাজার কমান্ড্যান্ট হুমায়ুন কবিরের স্বেচ্ছাচারিতা ও মৌখিক নির্দেশে তার ব্যক্তিগত কাজ করানোর অভিযোগ করেন।.
.
.
.
.
এই পুলিশ সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, সিও হুমায়ুন কবির ৫ তারিখের পর সিলেটে বিএনপির নেতাদের কল করে বলছেন, তিনি নাকি ছাত্রদল করতেন। আমরা পুলিশ বাহিনীতে স্যারদের ব্যক্তিগত কাজ করতে আসিনি, দেশের সেবা করতে এসেছি। এই ধরনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অধীনে থাকতে চাই না। পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু এগুলো না আরও বিভিন্ন সমস্যা আছে। মেসের খাবারের সমস্যা। আমরা লালাবাজার থেকে আট কিলোমিটার দূরে রিকাবিবাজার পুলিশ লাইনে যাই ডাক্তার দেখাইতে যাই ওষুধ আনতে যাই। আমাদের কোনো সিসি দেওয়া হয় না। কল্যাণ সভায় আমাদের কমান্ডিং সিওকে অনেকবার বলা হয়েছে আমরা যদি অসুস্থ হয়ে যাই আমাদের সরকারি গাড়িও দেন না এম্বুলেন্সও দেন না। বলেন বাজেট নাই। ওষুধ আনার সময় সিসি দেন না সরকারি। আমরা যদি এক্সিডেন্ট করে মারা যাই আমাদের পরিবার কি করবে।.
.
.
.
এ ব্যাপারে পুলিশের রেঞ্জ রির্জাব ফোর্স (আরআরএফ), লালাবাজারের কমান্ড্যান্ট হুমায়ুন কবিরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সিলেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এখনও অস্থিতিশীল আবুল কাশেম রুমন,সিলেট: সিলেটে দীর্ঘ দিন ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়তি থাকলেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে লাগামহীন হয়ে পড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। অস্থিতিশীল বাজার এখনো হয়নি স্থিতিশীল। সরকার পতন হলেও এখনো নিয়ন্ত্রণহীণ অসংখ্য পণ্যের দাম। এ অবস্থায় সিলেট মহানগরীতে বাজার মনিটরিং করছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থীরা। বাজার ঘুরে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সহিংসতার মধ্যে কাঁচা মরিচের কেজি উঠেছিল ৪০০ টাকার ওপরে। এখনো কাঁচা মরিচের ঝাঁঝ কমেনি। বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। তবে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদনস্থলেও কম দামে কাঁচামাল বিক্রি হচ্ছে। আবার পণ্য পরিবহনে গত কয়েক দিনে ব্যবসায়ীদের কোনো চাঁদা দিতে হচ্ছে না। এসব কারণে সবজির দাম কমেছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৫০-৭০ টাকার আশপাশে। অথচ সপ্তাহ খানেক আগেও যা ছিল ১০০ টাকার কাছাকাছি। সকালে বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।.
.
.
.
দেখা যায়, বিভিন্ন সবজি পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে। আর লাউ, কাঁকরোল, করলা, বেগুন ও বরবটি কেনা যাচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম ১৪৫ টাকা দরে কিনেছেন ক্রেতারা। অবশ্য আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম আগের মতোই নাগালের বাইরে রয়েছে। প্রতি কেজি আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা, আদা (চায়না) ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ও রসুন (আমদানি) ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত মাসে চালের দাম কেজি প্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছিল। সেই দাম এখনো কমেনি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।বাজারে এক বেসরকারী চাকুরীজীবীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম তো সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এত দিন দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হতো। এখন শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। আশা করছি, দাম কমে আসবে। বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, রাস্তাঘাটে এখন চাঁদাবাজি নেই। তবে সহিংসতা ও ডাকাতির আশঙ্কায় পণ্য পরিবহনে রাজি হচ্ছেন না অনেক ট্রাকচালক। ফলে বিভিন্ন উৎপাদনস্থল বা মোকামে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। এখন আস্তে আস্তে দাম কমে আসবে।.
.
.
ডে-নাইট-নিউজ / আবুল কাশেম রুমন
আপনার মতামত লিখুন: