কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি ফলের বাগান আছে। সেখানে হরেক রকমের ফলের গাছ। বড় ফটকটি ধরে ভেতরে ঢুকলে দুই পাশে চোখে পড়ে আমের গাছ। গত শুক্রবার (৭ জুন) সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, আমের গাছগুলো প্রায় ফলশূন্য। এ বাগানের অন্য আমগাছগুলোরও এ অবস্থা। ব্যতিক্রম ছোট কয়েকটি আমগাছের। সেই গাছ এ দেশের কোনো প্রজাতি নয়। এ আমের নাম মিয়াজাকি। অনেকেই জানেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। জাপানি আম এটি।.
.
এই উদ্যানের সঙ্গে জড়িত আছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মেহেদী মাসুদ। তিনি বলছিলেন, এবার এ বাগানে অন্য সব আমের গাছে ফল তেমন প্রায় আসেনি। কিন্তু মিয়াজাকির ফলন খুব ভালো হয়েছে। দেশের অন্যত্রও এ আমের ফলন ভালো।.
.
কৃষিবিদ ও আম উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কথা, এ বছর আমের ‘অফ ইয়ার’। দেশের এই একটি ফল যেটি এক বছর ভালো হয়, পরের বছর হয় না। কৃষি অধিদপ্তরই বলেছে, এবার দেশে অন্তত ১৫ শতাংশ আম কম উৎপাদিত হবে গত বছরের চেয়ে। তবে মিয়াজাকির ক্ষেত্রে এ কথা খাটছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের’ তথ্য অনুযায়ী, এবার ২৫ টনের বেশি উৎপাদিত হতে পারে মিয়াজাকি। গত বছর হয়েছিল ২৪ টন। বাংলাদেশে এ আম আসার পর এবারই সর্বোচ্চ উৎপাদনের সম্ভাবনা, বলছে সূত্রগুলো। মাঠপর্যায়েও এ আমের ভালো উৎপাদনের চিত্র পাওয়া গেছে। জাপানি শব্দ মিয়াজাকি শব্দের অর্থ ‘সূর্যডিম’। টকটক লাল রং, যেন সকালের লাল সূর্য। আবার আকৃতি ডিমের মতো। সব মিলিয়ে সূর্যডিম। এ আম সাধারণের ভাগ্যে জোটে না বললেই চলে। কারণ উচ্চ মূল্য। কিন্তু কতটা উচ্চ মূল্য? ভারতের সংবাদমাধ্যম লাইভমিন্ট ১ জুন ভারতের ন্যাশনাল হর্টিকালচার বোর্ডের সূত্র ধরে এক প্রতিবেদনে বলেছে, দেশটিতে দেড় হাজার প্রজাতির আমের চাষ হয়। এগুলোর দাম কমবেশি প্রতি কেজি ১০০ থেকে ২০০ রুপির মধ্যে পড়ে। কিন্তু গত বছর দেশটিতে এক কেজি আম আড়াই লাখ রুপিতেও বিক্রি হয়েছে।মিয়াজাকি অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনমিক ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী, জাপানের সূর্যডিম বা মিয়াজাকি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। জাপানে ২০১৯ সালে এক জোড়া মিয়াজাকির দাম উঠেছিল প্রায় পাঁচ হাজার ডলার, অর্থাৎ চার লাখ টাকার বেশি।.
জাপানে মেইজি যুগ হিসেবে ধরা হয় ১৮৬৮ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত সময়কে। এ সময়টায় জাপান বিচ্ছিন্ন সামন্ততান্ত্রিক অবস্থান থেকে সরে এসেছিল। এই সময়েই এ আমের উদ্ভব হয়। তবে এর চাষ বেশি করে শুরু হয় গত শতকের সত্তরের দশকে। মাখনের মতো মোলায়েম, সুগন্ধ আর রসে ভরপুর হওয়ার জন্য এ আমের এত কদর।.
বাংলাদেশে মিয়াজাকির বাণিজ্যিক উৎপাদন এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। শখের বশেই অনেকে এ আমের চারা জাপান থেকে এনে লাগিয়েছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ছে। বাংলাদেশে শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গত বছর অনেক খামারি দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এর কমেও কেউ কেউ বিক্রি করেছেন।.
মীর শাহীনুর রহমান নাটোরের কৃষিবিদ। শহরের ডিসি কার্যালয়ের কাছে হাজরা নাটোর এলাকায় তাঁর আমের বাগান। কয়েক বছর ধরেই তিনি মিয়াজাকি আমের চাষ করছেন। কিন্তু এবারকার মতো ফলন হয়নি আগে। এ বছর অন্তত দুই হাজার কেজি আম উৎপাদন হতে পারে বলে জানান মীর শাহীন। গত বছর মিয়াজাকির উৎপাদন ছিল ৮০০ কেজির মতো। তবে এর আগের বছর উৎপাদন হয়েছিল হাজার কেজি। আর এসব আম বিক্রি করে লাভও হয়েছে যথেষ্ট। নিজেই বলছিলেন, দুই বছর আগে মিয়াজাকি বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি দুই হাজার টাকায়। গত বছর এর দাম কিছু কমেছিল।.
মীর শাহীনুর রহমান বলছিলেন, ‘বিশ্বের দামি আম বলে এর সুখ্যাতি আছে। কিন্তু জাপানে এর উৎপাদন হয়, আমরা তো তা করি না। এখানে দাম কম হওয়া উচিত।’.
মিয়াজাকির মতো একটি বিদেশি প্রজাতির আমের উৎপাদনে যে যতœবান হওয়া উচিত, তা মনে করেন খাগড়াছড়ির আলুটিলার রিপল চাকমা। শহরের কাছের আলুটিলা নামের জায়গায় রিপল চাকমার ২০ একরের বড় আমের বাগান। এ বাগানে গোটা পঞ্চাশেক গাছ মিয়াজাকির। গতবার যেখানে প্রতি গাছে দু–একটি করে আম হয়েছিল, এবার তার চেয়ে বেশি হয়েছে। কিন্তু এবার ফল ধরে রাখতে পারেননি বেশি।.
রিপল মনে করেন, অন্য আমের উৎপাদনে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়, মিয়াজাকির ক্ষেত্রে তা করা যাবে না। এটা তিনি উপলব্ধি করেন, কিন্তু কীভাবে তা করা দরকার, এ নিয়ে বিশদ ধারণা নেই তাঁর। তাই এ আম নিয়ে নিজের পড়াশোনা বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিতে চান তিনি।.
উত্তরের জেলা দিনাজপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টারের ক্যাম্পাসে মিয়াজাকি আমের কয়েকটি মাতৃ গাছ আছে। সদর উপজেলার সদরপুরে এই সেন্টার। এগুলো থেকে চারা উৎপাদন করে তা আগ্রহীদের দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এসব গাছেও এবার আম্রপালি ধরেছে আগের.
.
ডে-নাইট-নিউজ / সুমন সরকার ঢাকা:
আপনার মতামত লিখুন: