
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে মানুষের জীবনযাত্রা বদলে গেছে, আর এর প্রভাব কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে পড়েছে। বর্তমানে ঘরে বসেই আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না। ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, কনটেন্ট ক্রিয়েশন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংসহ অসংখ্য ডিজিটাল পেশা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব ক্ষেত্র শুধু তরুণদেরই নয়, বরং অভিজ্ঞদের জন্যও নতুন কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে, তাই সফল হতে হলে সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি।.
.
.
ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কর্মসংস্থান ব্যবস্থা, যা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশে লক্ষাধিক তরুণ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম যেমন আপওয়ার্ক, ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার ও পিপলপারআওয়ারে রেজিস্ট্রেশন করে কাজের জন্য আবেদন করা যায়। সফল হতে হলে গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং, ডাটা এন্ট্রি ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্সের মতো দক্ষতা অর্জন করতে হয়। নতুনদের জন্য প্রথমে নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মে একটি আকর্ষণীয় প্রোফাইল তৈরি করা, দক্ষতা অনুযায়ী ছোট ছোট কাজের জন্য আবেদন করা এবং নিয়মিত অনুশীলন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।.
বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করছে, যেখানে দারাজ, আজকের ডিল, রকমারি ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। অনেকেই নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ খুলে পণ্য বিক্রি করছে। ড্রপশিপিংও বর্তমানে একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, যেখানে নিজস্ব পণ্য ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। সফল ই-কমার্স ব্যবসার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডিজাইন, কাস্টমার সার্ভিস, SEO ও ডাটা অ্যানালাইসিসের মতো দক্ষতা প্রয়োজন হয়।.
.
.
ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সিং এখন একটি লাভজনক ক্যারিয়ার অপশন। অনেক কনটেন্ট নির্মাতা ভিডিও বানিয়ে, স্পন্সরশিপ ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করছে। একটি সফল ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনার জন্য ভিডিও এডিটিং, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, ভালো উপস্থাপন দক্ষতা, এবং সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং জানা দরকার। প্রথমে একটি চ্যানেল খুলে নিয়মিত গুণগত মানসম্পন্ন কনটেন্ট আপলোড করলে এবং সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বাড়লে ইউটিউব মনিটাইজেশন সুবিধা পাওয়া যায়।.
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে অন্যদের পণ্য বা সার্ভিস প্রচার করে কমিশন উপার্জন করা যায়। অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটস, সিজে অ্যাফিলিয়েট ও শেয়ারএসেলের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্লগিং, SEO, ইমেইল মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ভালো আয় করা সম্ভব। সফল হতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে হয়।.
অনলাইন কর্মসংস্থানের অনেক সুবিধা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, তাই নিয়মিত নতুন স্কিল অর্জন করা জরুরি। অনলাইনে কাজ করার সময় সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তাই নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম ও নিরাপদ পেমেন্ট ব্যবস্থা ব্যবহার করতে হবে। অনেক সময় স্থিতিশীল আয়ের নিশ্চয়তা থাকে না, তাই ধৈর্য ধরে কাজ করতে হয়।.
.
.
ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মসংস্থানে সফল হতে হলে নিয়মিত শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কোরসেরা, উডেমি, মুক্তপাঠের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে নতুন স্কিল শেখা যেতে পারে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেও কোর্স করা যায়। নেটওয়ার্কিং খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থেকে প্রফেশনাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।.
ইন্টারনেট আমাদের জন্য বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। সঠিক দিকনির্দেশনা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারি। প্রযুক্তির সঠিক ও পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারি এবং একটি উন্নত ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারি।. .
ডে-নাইট-নিউজ / আবদুল্লাহ আল মামুন
আপনার মতামত লিখুন: