টিপ দিন না-এত বিলম্ব কিসের ? বলে সাজ্জাদ সাহেব বাঁ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ছেপে ধরে কার্বন পেপারে ঘসে মেডিকেল কার্ডে ছাপ দেন। অনিচছা সত্তে¡ ও শুধু দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রহিম সাহেব আঙ্গুলটি মুক্ত করে নেন। তাকে খুবই চিন্তিত মনে হয়। কারন এ মুহুর্তে কেহই সহজে বিশ্বাস করবে না এল .এল .বি পরীক্ষার্থী রহিম সাহেব ডিম্বাকৃতি টিপসহি দিয়ে সবে মাত্র বিদেশ ভ্রমণের ছাড়পত্র পেলেন।
অর্থ! এ নাট্য শালায় অর্থের জন্য মানুষ কি না করছে , মা হয়ে কোলের শিশুটিকে টাকার বিনিময়ে অন্যের হাতে সমর্পন, পিতা-পুত্র সম্পর্কচেছদ, নব দম্পতির বিচেছদ। শুধু মাত্র অর্থের লোভেই এ সমস্ত ঘটনার সুচনা। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই যে অর্থের লোভ তা নয়। কখন ও কখন ও এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হয়। ব্যতিক্রমটি প্রশমিত হয়ে পড়ে যারা চাষা-ভুষা, দীনহীন, সহায়-সম্বল হারা। সমাজে যারা প্রতিষ্টিত (সব নয়) ,যাদের অর্থ আছে তারা অর্থের জাদুকরী প্রভাবে ফেলে গোটা পৃথিবীটাকেই যেন লাটিম বানিয়ে খেলছেন। আমি কাউকে কটাক্ষ বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বলছি না। যা সত্যি তা বলছি। কারন সমাজে রুই , কাতলা আর অর্থের টানা পোড়নে আমরা সংকীর্ণতার এমন স্তরে এসে পৌছেছি , অর্থের প্রভাবে সীমাবদ্ধতার উর্ধেব। তেমন করে সুর ধরে বাজে না। আমরা যেন দর্জির ফিতার মাপে কাট ছাট করা মানুষ। রহিম সাহেব আমারই একজন বন্ধু , বাল্য সহচর। তিনির সুখ-দু:খ , সবটাই আমার নখ দর্পণে। যে দিন রহিম সাহেব আমার হাত ধরে কেদেঁছিলেন , সে দিন আমার আবেগ প্রবণতা , অশ্রুকে ধরে রাখতে পারিনি। মনের অজান্তে নয়ন অশ্রু ভারাক্রান্ত। মাথাটা চক্কর শুরু করে। সবকিছু যেন ঝাপসা হয়ে যায় ঘটনার আকস্মিকতায়।
মেট্রিক পাশ করেই হন্যে হয়ে ঘুরে একটা চাকুরী সংগ্রহ করতে পারেননি। এদিকে নাইট কলেজে ক্লাস করে বি.এ পাশ করেছেন। যেখানেই ( vacancy) দেখেছেন , শুনেছেন আবেদন করতে কাল বিলম্ব করেননি। তথাপি চাকুরী পাওয়া তার পলেমঘ মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। ছাত্র হিসাবে ও তিনি মন্দ নন। যেহেতু একবার বৃত্তি পেয়েছেন সরকারী। চাকুরীর ব্যাপারে বর্তমানে একটু হতাশা , বিতৃষ্ণা ভাব জন্ম নিয়েছে।
একদিন প্রতিবেশী এক ভদ্রলোক তাকে ডেকে বললেন – এই যে রহিম সাহেব লেখাপড়া চালিয়ে যাচেছন। কিন্তু একটা চাকুরীতে জয়েন্ট করলে আপনার আট সদস্যের পরিবারে কষ্টের একটু লাঘব হত। চাকুরী না করলে আজ হয়ত একাহারী দিনাতিবাহিত হচেছ। কয়দিন পর সর্ষে ফুল দেখবেন। তবে আমার মামার অধীনে কোন চাকুরী নেই। এ প্রত্যাশা করো না। আমার চাকুরীর ব্যাপারে মামাকে অনেক কাটখড় পোহাতে হয়েছে। শুনেছি অন্য একজনকে বাদ দিয়ে আমার দফারফা। মামা উর্ধ¦তন কর্মকর্তা থাকায় রক্ষা।
মানুষ অল্প দু:খ বা আঘাত পেলে বিমর্ষ , নিরবতায় ভোগে। তার অধিক হলে কান্না কাটি করে। কিন্তু অত্যধিক চাপে নিথর পাথর বনে যায়। তাই যে কোন ঘটনা অনেক ক্ষেত্রে রসিকতায় গুরু থেকে লঘু করার প্রয়াসে মনকে প্রবোধ বা শান্তনার প্রচেষ্টা চালায়। এমনি রহিম সাহেব মনের শক্ত বোঝা লাঘবের উদ্দেশ্যে প্রতি উত্তর স্বরুপ বলেন, চাকুরী করে কাকে খাওয়াব , চাকুরীর প্রয়োজনই বা কি ? আরো কি যেন বলতে গিয়ে থেমে যান।
ভদ্রলোক এবার জোকেঁর মত মাংসের সাথে মিশে যাবার উপক্রম। আরে রহিম সাহেব- এখন ও বিবাহ করেননি। আপনি যে পিতা-মাতা , ভাই-বোনকে একটু আদর ,¯স্নেহ ,লালন পালন করবেন তা সহজেই অনুমেয়। ভাবী স্ত্রীর ভরণ পোষনের জন্য দেখছি এখন থেকেই নিমগ্ন। তাইত্ আমার ছেলেকে স্কুলেই দেই নাই। লেখাপড়া শিখে ছেলে মেয়েরা অমানুষ হয়ে যায়। ভুলে যায় জনক-জননীর কথা। শেষ পর্যন্ত ভদ্রলোক রহিম সাহেবের পিতা মাতার কাছে এ কথা ব্যক্ত করে ক্ষান্ত হন। প্রত্যেক জনক জননী তাঁর সন্তান সম্পর্কে অবগত। হোক সে সাদা-কালো , ভাল-মন্দ। সুতরাং রহিম সাহেব যে মাতাপিতার একান্ত বাধ্য সন্তান , অনুগত তা নুতন করে কেউ বলতে হবে না। তারাই ভাল জানেন রহিমের চাল-চলন , আচার-আচরণ আরো দশজন। অন্য দশটি সন্তানের চেয়ে তিনি অনেক অনেক উর্ধেব। তাই তারা অতি সহজে ঘটনাটি আঁচ করতে দ্বিধাবোধ করেননি , এ যে রহিমের প্রলাপ। তবে দু:খ হয় শুধু ভদ্রলোকের ব্যবহারে। হয়ত তিনি কথার মর্মার্থ বুঝতে পারেননি বা বুঝার চেষ্টা ও করেননি। কিন্তু পিতার কাছে ব্যক্ত করায় কতটুকু উপকৃত হয়েছেন, কত পার্সেন্ট মুনাফা লাভে বা সুনাম অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। তাই জিজ্ঞাস্য ?
এবার রহিম সাহেবের মুখ নি:সৃত জীবনের অন্যান্য কিছু ঘটনাবলী পাঠক সমাজকে উপহার দেবার চেষ্টা করবো। তাহলে আসুন দেখি তিনি কি বলেন ? স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পৃথিবীতে প্রত্যেক জিনিষের মুল্য উঠা-নামা করে। তবে বর্তমানে জগতে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই মুল্যের নমনীয়তার চেয়ে উর্ধব গতি অত্যধিক স্থায়িত্ব প্রাপ্ত। ১৯৭২ সালে পিতার শেষ সম্ভল ২ কেদার জমি বিক্রি করে ১২ হাজার টাকা আদম বেপারী রসিদের হাতে তুলে দেই। কথা ছিল যদি বিদেশ পাঠাতে না পারেন , তবে টাকা ফেরত দেবার প্রাক্কালে ঐ সময়কার মুল্য হিসাবে পরিশোধ করতে হবে। দিনে দিনে মাস , মাসে মাসে বছর-এ ভাবে তিন তিনটি বছর অতিবাহিত বিদেশ পাঠানো আর হল না। চাইলাম টাকা তা ও অস্বীকার। শুরু করলাম বিচার। যাদের সম্মুখে টাকা দেয়া হয়েছিল , তারাই আসলেন বিচারক হয়ে। বিচারের নামে যে প্রহসন , তা আগে টের পাইনি। সে দিন হাড়ে হাড়ে টের পেলাম , নুতন করে অভিজ্ঞতা অর্জিত হলো। দুই একজন যারা ছিলেন সত্যিকার বিচারক রুপে , সৎ ও মহত হৃদয়ের অধিকারী , তারা পাত্তাই পেলেন না। কথায় বলে যত বড় শক্তিশালী , জ্ঞানী গুণী হোন না কেন , দশের কাছে আপনি নগণ্য। আপনার স্থান এখানে নয় , অন্যখানে , অন্য কোথাও। অন্যায়কে ন্যায় করতে হলে বর্তমানে হয় একশলা সিগারেট নতুবা এক কাপ চা-ই যথেষ্ট। সিগারেটের ক্রিয়া এক ঘন্টা হলে চায়ের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ। অর্থ হলেত কথাই নেই। যত বড় অপরাধ আর অপরাধী হোন না কেন এক পলকে মুক্তি। নেই অর্থ! আরে মশাই আপনার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। করতালী পেতে হলে চাই একটু বন্ধুত্ব। বোধ হয় জানেন না , “মধু থাকলে ভ্রমরের অভাব নেই ”। পাছে পাছে গুণ গুণ গান কত মধুর। নি:শেষ হলে ছায়া দৃষ্টি গোচর মহাসমষ্যা। সুতরাং আমার বিচার ও তাই। মনকে শুধু প্রবোধ দিয়ে শান্ত হলাম।সুবিচার এক মাত্র খোদার কাছে , তিনিই অন্তর্যামী।
দুর সম্পর্কীয় এক ভদ্রলোক। ইয়া লম্বা দাঁড়ি । বয়স অনুমান পঞ্চাশের কাছাকাছি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। মনে হয় তিনির মত খোদা ভক্ত খুবই কম। কথায় কথায় ভাবুকতার রেশ।
আমরা ৫ জন তরুণ, তারুণ্যের প্রতীক। একত্রে বসবাস করে আসছি দীর্ঘ একটি বছর। বাহির থেকে সহজে কেহ ধারণা করতে পারবে না ভিন্ন ভিন্ন পরিবার থেকে আগত। চাল-চলন, আচার-আচরণে আশপাশের সবাই অভিভুত ,“একটি বৃন্তে পাঁচটি ফুল”। যদি ও আমাদের প্রত্যেকে পৃথক বৈশিষ্ট নিয়ে কাজ করে যাচিছ। এখানে নেই জৌলুসতা , অহংকার ও আভিজাত্য। বেশ আনন্দঘন প্রতিটি ক্ষণ অতিবাহিত হয়। কিন্তু রফিক ছিল একটু চঞ্চলমতি, রসিক ,একরোখা, বড় নীতি পরায়ণ,সদালাপি।
আমি বরাবরই মিশুক স্বভাবের। প্রত্যেকের সাথে তাল মিলিয়ে , তার মনের অবস্থান , গতি বুঝে চলাফিরা করি যতটুকু সম্ভব। ঐ ভদ্রলোক পত্র লেখার উদ্দেশ্যে একদিন আমাদের বাসায় আগমন করেন। পরিচয় হয় , হৃদ্যতা গড়ে উঠে মোদের মাঝে। আসতেন ঘন ঘন। শোনাতেন অমোঘ বাণী ,মিষ্টি কথার ফুল ঝুরি। রফিক ব্যতীত সকলেই তার অন্ধ ভক্ত। কিন্তু রফিক এমন ব্যবহার দিত যা ছিল স্বাভাবিক আসুন-বসুন। অতিরিক্ত ভক্তি,শ্রদ্ধা কোনটাই প্রশ্রয় দিত না তিনির বেলায়। এই হল কাল , অপরাধ। একদিন তিনি বলেই ফেললেন,ছেলেটার দেমাগ বেশী। আচছা !
সেদিন থেকে তিনি ওর পেছনে যে লেগেছেন , তা যদি ও একটু আধটু অনুভব করেছিলাম। কিন্তু মনের দুর্বলতা বলে নিজে উড়িয়ে দিতাম। যেহেতু তিনি একজন বর্ষিয়ান , মুরবিব সমতুল্য। কিন্তু ভদ্রলোক নাছোড় বান্দা। তিনি পাড়া পড়শী ছেলে মেয়েদের ক্ষেপিয়ে তুললেন , রফিকের স্বভাব ,চরিত্র সম্পর্কে। যার সংস্পর্শে রফিক কোন দিন যায়নি , ঘৃণা ছিল প্রচন্ড। সে সকল কলংঙ্ক তার উপর রটানো হল। এমন কি আমাদের মধ্যে দু-দু‘টি দলে বিভক্ত করে ছাড়লেন। একদিকে আমি। অপর দিকে অন্য তিন জন। রফিক কিন্তু বেকায়দায় পড়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করে ও কাউকে বুঝাতে পারিনি যে ,এ হল প্রতিশোধের পালা , প্রতিহিংসার দাবানল। রফিক মনে করল তিন সদস্যের দলন্তর্ভুক্ত , ওরা বুঝে নিল বিপরীত। আমার প্রচেষ্টা হল অরণ্যে রোদন,মায়া কান্না। ঘটল বিস্ফোরণ। নিমেষে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল এত দিনের বন্ধুত্ব,মমত্ব,প্রীতি ও ভালবাসা। ছিটকে যে যেখানে সুবিধা পেল,সেখানেই আশ্রয়স্থল হল।
এ সময় থেকে ভদ্রলোকের পাত্তাই নেই। হঠাৎ একদিন রাস্তায় সাক্ষাত। জিজ্ঞেস করলাম, চাচা এ কি করলেন ? উত্তরে উপহার পেলাম এক ঝলক হাসি। বললেন ছেলেটার দেমাগ দেখিয়ে দিলাম। আর কিছু নয়,অতি অল্প। আমি হতভম্ভ। কোথায় আছি ? জীবিত না মৃত,চেতন না অচেতন অনুমানে আসছে না। আঁখিদ্বয় আপনা আপনি বুজে আসে। বাক শক্তি রহিত। দু’ঠোটে কাল বৈশাখীর ঝড়। নিরবতা ব্যতীত আমি অগ্রসর হতে পারিনি ঘটনার আকস্মিকতায়। বুঝলাম যখন , তখন দু’গন্ড বেয়ে তপ্ত অশ্রু বাহিত। চেয়ে দেখি তিনি অনেক দুর চলে গেছেন। আমার কথার সীমানা ছাড়িয়ে। কথায় না বলে ,“অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ”। তা কিন্তু সহজে পরিচয় পাবেন না। কারন বর্তমানে নিজকে চিনা বড় কঠিন। মানুষের মন মানসিকতা বুঝে উঠা মুশকিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়ে পরবর্তিতে যে ফসল তুলে এনে ছিলাম। তাহলো-ঘটনা সম্পর্কে প্রত্যেককেই সম্যক জ্ঞান দান , উপলব্ধি করল, আঁচ করতে সক্ষম হল। তখন কিন্তু নাগালের বাইরে, একত্রে বাস করা আমাদের পক্ষে দুষ্কর। আমরা সবাই তখন সাংসারিক। কাজের নিমিত্তে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অবস্তানরত।
বাড়ী থেকে কলেজের দুরত্ব তখন ৯ মাইল। যোগাযোগের একমাত্র বাহন ট্রেন। যদি কোন ক্রমে ট্রেন ফেল হয় তখন শ্রীচরণের ভরসা। রীতিমত ট্রেন চড়েই লেখাপড়া করতে হয়। হয়ে গেলাম দৈনিক ট্রেন যাত্রি।
সে দিন ট্রেনে বসে সিগারেট টানছি অন্য মনস্ক ভাবে। বিচিছন্ন চিন্তা জট পাকাচেছ। হঠাৎ কম্পার্টমেন্টে সোরগোল , লোকের চিৎকারে হক চকিয়ে গেলাম। ফিরে এলাম ভাবনা রাজ্য থেকে বাস্তব জগতের মোকাবিলা করতে। দামী চশমা , টাই , সুট-কোট পরা একজন লোককে অপদস্ত করার চেষ্টা চলছে। ঘটনা বুঝার ব্যাকুল আগ্রহ নিয়ে অগ্রসর হলাম কি হচেছ, কেন ? পোষাকে মনে হচেছ শিক্ষিত ,ভদ্র ,খান্দানি বংশের লোক। ততক্ষণে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে দু’ব্যক্তি আপ্রান প্রচেষ্টা চালিয়ে আয়ত্বে,নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা অর্জনে শুরু হল বিচার। ভদ্রলোক সীটে বসে পত্রিকা পড়ছেন। কিন্তু সীটের উপর পা তুলে ছড়িয়ে দিয়েছেন পার্শ্ববর্তী সীটে। বেশ আরামে বসেছেন অতিরিক্ত সীট দখলকারীর খাতায় নাম লিখে গৌরবান্বিত অহমিকায়। দ্বিতীয় ব্যক্তি সাধারণ শার্ট লুঙ্গি পরিহিত , নেই আভিজাত্য বা জৌলুসের চিহ্ন মাত্র। সারা কামরায় খালি সীট না পেয়ে অগ্রসর হন প্রথম ব্যক্তির ব্যক্তিগত কোর্টে। আসামী স্বরুপ হাজির হয়ে পা নামিয়ে বসার স্থান প্রদানের জন্য বার বার অনুরোধ করেন। আসামী এজন্য বলছি বর্তমানে আমাদের সামাজিক জীবনে প্রতিষ্টিত হতে হলে উর্ধবতন কর্মকর্তার মন যুগিয়ে চলতে হবে,হচেছ। নতুবা রোষানলে পতিত হয়ে সারা জীবন ভর এর ভার সহ্য করতে হবে। তাইতো অনেক সময় অন্যায়কে চোখ বুজে মেনে নিতে হবে। যেহেতু “সুবচন নির্বাসনে” । প্রথম ব্যক্তি অনুরোধ উপেক্ষা করেন অবহেলা,অবজ্ঞায় “এটা দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরা” বলেই পত্রিকায় দৃষ্টিপাত। কিছুক্ষণ নিরবে দাড়িয়ে থেকে দ্বিতীয় ব্যক্তি আবারো অনুরোধ ,মিনতি একটু জায়গা সাহেব ,বডড ক্লান্ত।
এবার কিন্তু বোমা ফাটলো-চোখ রাঙ্গিয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বের করে প্রথম ব্যক্তি ,“জায়গা , জায়গা”। বললাম না, এটা দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরা। যান -তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় প্রচুর জায়গা ,ইচেছ করলে ঘুমিয়ে যেতে পারবেন। ওটা লাল টিকেটের গাড়ী। মান-সম্মান ,মর্যাদা রক্ষা করা আপনাদের দৌরাত্ব্যে কঠিন। এখানে এসে ও স্বস্থির নি:শ্বাসে বাধা। ট্রেনে ভ্রমণ আজ কাল বিপদজনক।
পার্শ্ববর্তী লোকজন আর ধৈর্য্য ধরতে পারলেন না। ধৈর্য্য,সহ্য জ্ঞান মানুষের মহৎ লক্ষণ। কিন্তু ধৈর্য্যর ও সীমা আছে। যারা অতিরিক্ত ধৈর্য্যশীল , তারা ক্ষেপে গেলে লক্ষ্য থাকে সীমানার। সে সীমানা তখন হয়ে উঠে আগ্নেয়গিরির জ্বালা মুখ। গলিত ও উত্তপ্ত লাভা নির্গমণের পর স্বাভাবিক থাকে না। এখানে ও তদরুপ অবস্তার সৃষ্টি। বিশেষ করে একজন কলেজ পডুয়া ছাত্র অগ্রণী ভুমিকার রক্ষক রুপে কাজ করে। যাকে সহপাঠিরা নিরীহ, সহজ ,সরল ও নিয়মতান্ত্রিকতার বাহক হিসাবে “ভাবুক” বলে ডাকত। ছাত্রটি যখন হুংকার ছেড়ে গর্জে উঠে। এমনি সীট থেকে পা নেমে যায়। পরবর্তীতে ক্ষমা প্রার্থনা নি:শর্ত ভাবে। দ্বিতীয় ব্যক্তি বি.এ পাশ শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি। তিনিই শান্তি ও শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে সহযোগি ব্যক্তি,দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকেটধারী।
অসংখ্য তারকারাজি আকাশে উদিত আলো বিতরণের প্রত্যাশায়। কিন্তু চন্দ্রলোকের কাছে পরাজিত হয়ে মিটমিটে। তথাপি দৃষ্টি গোচরীভুত হতে পারে ক্ষীণ ও ম্রিয়মান। এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক ,অতি দুরত্ব এদের কৈফিয়ত। তবু ও দু’একটি আলোকবর্তিকার সফল উজ্জ্বল তারকা। আর অবশিষ্টগুলি ক্ষুদ্র বলে নিরব প্রতিবাদের ঝড় তুলে অনেক দুর থেকে বিদায় নেয়। ওদের হিসাব ক’জন রাখ্। রাখার প্রয়োজন বোধ হয় নেই। তাই অভিমানে কিছু বলতে পারে না। শুধু চায় কর্তব্য জ্ঞান ও মুল্যবোধের পরিচয়। এক্ষেত্রে প্রতিরোধ কি সম্ভব ? হ্যাঁ অসম্ভব, যদি মেঘ এসে ঢ়েকে ফেলে, সারা আকাশে বিস্তৃতি লাভ করে। প্রশ্ন গুলি আমাকে লক্ষ্য করেই। চার চোখের মিলন বেলা দেখলাম অশ্রু ভারাক্রান্ত। জিজ্ঞেস করলাম ,তুমি কাঁদছ ?
অট্রহাসিতে ফেটে পড়ল। কাঁদব কেন ? কাঁদতে যে আমরা জানি না। হাসি কাঁন্নার সংজ্ঞা অজ্ঞাত। শিখিনি ,শিখতে পারিনি। বিমান বন্দরে সে দিন দেখলাম। পিতামাতা দীর্ঘ প্রবাস থেকে আগত ছেলের গলায় ধরে অঝোর কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তাদের কান্নায় যোগ দিয়ে ছেলেটি ও ঐ পথের যাত্রী হয়ে গেল। অপর পিতামাতা মৃত ছেলেকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন। বলুনতো কোনটি হাসি ,কোনটি কান্না ? কিন্তু সারগর্ভে ভিন্নতা। কেউ স্বাগতম জানিয়ে,কেউ বিদায় সম্ভাষণের মাধ্যমে। তবে এটা চির বিদায়।জবাব দিন-কন্ঠে উত্তেজনার রেশ।
হৃদয়ে একটা তুমুল ঝড় বয়ে গেল। দু’ঠোট কেঁপে উঠলো। কিন্তু অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় র’ল অপ্রকাশিত। অনুভব করলাম আমার নয়ন কোনে পানি জমে আসছে। তাড়াতাড়ি পকেট থেকে রুমাল বের করে মুছে নিলাম। একটু পূর্বে না ওকে বলেছি “তুমি কাঁদছ“ ? লক্ষ্য করলাম রহিম আমার জবাবের তোয়াক্কা করছে না , বোধ হয় অভিমানে। সমস্ত জ্বালা বুকের ভিতর রেখে খুব টেনে টেনে কথা বলছে। “ছাত্র জীবন সুখের জীবন,যদি না হয় এক্জামিনেশন” প্রথম জীবনে উহাকে গুরুত্ব দিতাম অধিক,ভাবতাম চিরন্তন সত্য। কিন্তু সে দিন থেকে মোর মনে হল , অনুভব করলাম পদে পদে “ছাত্র জীবন সুখের জীবন , বিত্তবান যদি হন”। কারন স্কুলে গিয়েছি-শিক্ষক মহাশয় ক্লাস নিচেছন, তিনি এত সুন্দর করে পড়াতেন ,বাড়ীতে পড়ার কোন প্রয়োজন হত না। ক্লাসেই বসে রপ্ত হত। কিন্তু দু’দিনের অনাহারী, পেঠে আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। বলুন-কেমন করে মনোযোগি হলাম ? অমনোযোগির অপরাধে শিক্ষক তৎক্ষণাৎ উপহার দিলেন দু’গন্ডা বেত্রাগাত। জ্বি-না কাঁটা গায়ে লবণ ছিটা নয় বিমূর্ত প্রতিক। শিক্ষককে অপরাধী সাব্যস্ত করছি না। তিনিততো আর জ্যোতিষ নন।
একদিন এক শিক্ষক বলে ছিলেন , “লেখাপড়া বক ধ্যান”। অন্বেষণ কর , ধ্যানে নিমগ্ন থেকো। সাফল্যের চরম শিখরে আরোহণ জলবত তরল। তিন দিনের উপবাসান্তে ঔষধ বিহীন ছোট বোন শিরিন যখন পরপারে পাড়ি জমাল , বক ধ্যান করেছি সত্য। কিন্তু লেখাপড়ায় নয়। জটের জ্বালায় অজ্ঞান হয়ে। ভাল ছাত্র ছিলাম। আশায় বুক বেঁধে তরণী ভাসালাম সাগরে। মাঝি হলাম , তবে বৈঠা বিহীন। ওপারে পৌছা হাস্যস্পদ নয় কি ? তথাপি অন্ধের পথ চলার মত। সবাই যখন পঞ্চমুখ ,চলে যাচেছ ঐ ঐ। অন্ধ ব্যক্তি ও সমস্বরে বলছে , জিজ্ঞেস করলে প্রতি উত্তরে , তোমরা না সবাই বলছো। আমি বললে অপরাধী।
আপনাদের সমাজ আমাকে এমন ভাবে বেঁধেছে। অদৃশ্য রশি পায়ে দিয়েছেন পরিয়ে আদর করে। সমাজ যতটুকু দেয় ততটুকুই। এক পা সামনে এগুলে টান পড়ে , মুখ থুবড়ে পড়ে যাই। রক্তক্ষরণ ,ধুয়ে-মুছে শেষ। টেবলেটের প্রয়োজন আমাদের নেই।
তা নয় কি ? জবাবের আশায় ধাক্কা মারে। থতমতিয়ে উঠলাম। চৈতন্যেদ্বয় হল। উত্তর কি দেব ভেবে পাইনি। শান্তনার আশায় মুখে শুধু বললাম “তোমার প্রতিটি কথা অবশ্য আমি একাগ্রতায় শুনছি”। বলুন-তারপর জবাব পাব না আমি জানি। তবু ও বলবো যখন নদী প্রবাহিত। নদীর চলার পথে স্বল্প বাঁধ আটকিয়ে রাখতে পারে না। ভেঙ্গে অথবা একটু সুযোগ পেলে প্রবাহমান উচলিয়ে পড়ে। মানুষ যখন দু:খ বা আঘাত পায় ,তখন অন্যের কাছে বলে এবং শান্তনার আশ্রয় খোজে। যদি ও ঐ ব্যক্তি তা দুর করতে বা লাঘব করতে অক্ষম।
উপবাস অবস্তায় প্রায়ই থাকতে হত। জাক-জমক ব্যতীত সাধারণ পোষাক পরা ছিল ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। মনে পড়ে শেখ সাদী (র:) ‘র পোষাককে আহার করানোর ঘটনা। জ্ঞানী , গুণী আর বুদ্ধিমান যতই থাকুন না কেন ? আমরা যে শেখ সাদীর (র:) মুল্য , কদর বুঝি না। তবে হ্যাঁ , বুঝি তিনির পোষাকের। অতএব সহজেই অনুমেয় আমার মত শত শত অভাগার কথা। অবস্তার করুণ দৃশ্য। বেতনের চাপে কলেজের রোলকল বদ্ধ হবার ঘটনা নতুন নয় , অনেক অনেক পুরাতন। মনের দৃঢ়তা ,সাহস , জ্ঞানার্জনের অদম্য স্পৃহায় আকৃষ্ট হয়ে কোন রকমে ঠিকে থাকলাম, নৌকার হাল ধরলাম। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। কিন্তু থমকে থমকে, খুড়িয়ে খুড়িয়ে চললাম।
“ আগাছা সমুলে উৎপাঠন বুদ্ধিমানের কাজ ” এ নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে আমার পিছনে কম করেননি। যদি প্রকৃত জ্ঞানার্জন করে ,“ এক যে ছিল হিকমত আলী ” গল্পের হিকমত হয়ে যাই , আপনাদের কর্মকান্ড জেনে নেই। সুতরাং হিকমত যাতে অগ্রসর হতে না পারে, সে জন্য নির্বাসন দিলেন।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার শুরু করে। গলা ধরে এসেছে। তথাপি রাজ্যের বেদনা যেন জমাট বেঁধে আছে। তা থেকে রেহাই পেতে চায়। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অলীক কল্পনায় আরো দশ জনের অনুসারী হয়ে আদম বেপারীর শরণাপন্ন হলাম। ইচছা , দারুণ ইচছা। প্রবাসে যাব , টাকা আসবে ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ও স্বাভাবিকতা নিয়ে নয় দুরু দুরু বক্ষে। অর্থ্যাৎ অবৈধ ভাবে। এ ছাড়া পথ ছিল না মোর সম্মুখে। আরেকটু পরিস্কার হবে আপনাদের কাছে- এক দিন গ্রামের এক লোক কথাচছলে বলছে। এবার বাদশা মিয়া বল্ডারে অনেক লোক সৌদি আরব পাঠাচেছ। লোকটির কথা সঠিক ভাবে হৃদয়াঙ্গম করতে পারিনি , হেড় কোয়ার্টারে ডুকে নাই। তবে হ্যাঁ , অনেকক্ষণ পরে বুঝলাম ( photo older) এর কথা। এটা হল ওমরাহ্ বা হজ্জ্ব ভিসার মাধ্যমে রোজগার করার অভিনব পন্থা অবলম্বন। আমি ও বর্তমানে ঐ পথের পথিক হয়ে গেলাম। রহিম নামের পরিবর্তে মছদ্দর আলী। আমি “জেনে শুনে বিষ করেছি পান” এর মত। প্রবাসে কতটুকু শান্তনা বা সফলতা আসবে তা এক মাত্র ললাট লিখক বা ভাগ্য নিয়ন্তা জ্ঞাত।
লেখক মিজানুর রহমান মিজান সাবেক সভাপতি বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব, বিশ্বনাথ, সিলেট।
.
ডে-নাইট-নিউজ / মিজানুর রহমান মিজান;-
আপনার মতামত লিখুন: