• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • Govt. SL. No:-352

Advertise your products here

মা 


ডে-নাইট-নিউজ ; প্রকাশিত: শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১০:০৩ এএম;
মা, মিজানুর রহমান মিজান
মা মিজানুর রহমান মিজান

মিজানুর রহমান মিজান

 .

 .

 .

 .

মা অতি ছোট একটি শব্দ।কিন্তু এ ছোট শব্দটির মধ্যে রয়েছে অপরিসীম নি:স্বার্থ ভালবাসা,গভীর মমত্ববোধ,মোহনীয় সুরের এক শ্রদ্ধা বিজডিত আদর-যত্নের অতুলনীয়তায় ভরপুর ব্যঞ্জনা।মা শব্দটি উচ্চারণের ক্ষেত্রে কতই না মধুরতা বিগলিত হয় তা কল্পনাই করা সম্ভব,কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করা অত্যন্ত দুরুহ ব্যাপার বলে মনে হয় আমার কাছে।মা শব্দের ঝংকার হৃদ-মন্দিরে তোলে অপূর্ব সুর লহরী, যার ব্যাপ্তি অনেক গভীরে প্রোথিত শেকড় সন্ধানীতে নিমগ্নতায় পরিব্যপ্ত।মায়ের সান্নিধ্যে থাকা সন্তান সর্বক্ষেত্রে পরিতৃপ্তির আঁচলে বাঁধা একটি অপূর্ব লীলাময় জীবনের অধিকারী।বলছিলাম আমার মায়ের কথা।.

 .

 .

 .

 .

 .

 .

   আমি আজ জীবন সায়াহ্নের দ্বার প্রান্তে।সুতরাং মায়ের বয়স কতটুকু তা সম্মানিত পাঠকবৃন্দের অনুমিত হবার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ধুয়াশাবিহীন পরিস্কার একটি ধারণাবোধ সহজিয়া ব্যাপার।আমি মাতাপিতার একমাত্র পুত্রসন্তান।সুতরাং মাবাবার কাছে আমার আদর সোহাগের,যত্নের,লালনে কেমন ছিলাম,আছি তা বলাবাহুল্য।বাবাকে হারালাম সে ২০০৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর।হারিয়ে বটবৃক্ষের ছায়াহীন কত দু:সহ জীবন চলার পথ পাড়ি দিয়েছি তা এখানে নাইবা বললাম।বলবো,“অন্য কোথাও, অন্যখানে”।আজ মায়ের কথা বলা আমার একান্ত ইচ্ছা ও দৃঢতর প্রত্যাশা।মায়ের কাছে প্রতিটি সন্তান সারাটি জীবন সেই যে শিশু,সেই শিশু হিসাবেই মা লালন করেন,বুকে ধারণ করে যান শ্বাস-প্রশ্বাস যতক্ষণ তিনির দেহে বহমান থাকে।মা বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুজ।কথাবার্তা অনেকটা অসংলগ্ন।দাঁত নেই একটিও।কথাবার্তা অনেক সময় বুঝাই যায় না।কিন্তু অহরহ বলার চেষ্টা করেন অনেক কিছু অনুমিত হয়।আবার কোন কোন কথা সুস্পষ্ট বুঝা ও যায়।আমি চলমান জীবন যাত্রার আর দুনিয়াবী কাজকর্মে অতি প্রত্যুষে ঘর ছেড়ে বের হই নিয়মিত রুটিনমাফিক।বাড়ি ফিরি বেলা ১২/১টায়।আবার ফিরে আসি ২/৩টায় আহরণ করতে রুটিরুজির ধান্ধায়।প্রতিনিয়ত ফিরে যাই রাত দশটায়। রাতের বেলা গিয়ে দেখি অনেকদিন ঘুমিয়ে পড়েছেন।সাক্ষাৎ হয় না।দুপুরে একবারই সাক্ষাতের সময়।.

 .

 .

 .

 .

 .

 .

আমি যখন কলেজে পড়ি।বাড়ি আসতাম রাত ১১/১২টায়।এসে দেখতাম মা কুপি বাতি বা হারিকেন জ্বালিয়ে বসে আছেন আমার পথপানে চেয়ে।কখন আমি আসি।তিনির রোজকারের অপেক্ষার অবসানের নিমিত্তে।গৃহে ঢুকতাম মা-পুত্র এক সাথে।দিতেন ভাতের থালা এগিয়ে।আমি অপলক নেত্রে চেয়ে থাকতাম মায়ের হাসিমাখা মুখেরপানে।আমার দেখা যেন শেষ হত না,তৃপ্ত হতাম না।একটি অতৃপ্তি যেন আমাকে তাড়া করতো বার বার প্রতিবার।কি যাদুমাখা হাতের ছোঁয়া সমৃদ্ধ ভাত, তরকারি।কত যত্নে আদরমিশ্রিত শব্দবানে বলতেন বাবা এটি আরেকটু নাও ভাল লাগবে।ওটি হয়তো তোমার মনের মত হয়নি।অনেক সময় অকারণে রাগান্বিত হতাম।সে কি কাকুতি,আদর আমার মায়ের।কখন ও বিরক্ত হতেন না।পাঠক হয়তো আপনারা বিরক্ত হতে পারেন।সবার মা-ইতো এমন হয়।তা এখানে বলার এমন কি নতুনত্ব আছে,নিগুঢ রহস্য রয়েছে?আমি অকপটে বলতে পারি,হ্যাঁ আছে,রয়েছে আমাদের প্রত্যেকের জন্যই শিক্ষণীয়।যাঁদের মা নেই,তাঁরা প্রতিনিয়ত বেদনার স্বাদে,ভারে আপেক্ষিত।প্রত্যেকের মা-ই মা।অনেকে যখন মাকে পরিণত বয়সে স্ত্রী,পুত্র,কন্যার লোভাতুর মায়ামমতায় ভুলে যান,কষ্ট দেন সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হয়।মা কি বেদনা অনুভব করেন তা,“বুঝিবে সে কিসে…..দংশেনি যারে”।এইতো মাসখানেক পূর্বে আমি যখন দুপুরের আহার সমাপনান্তে না বলে চলে আসতে ঘর থেকে বের হয়েছি।দেখি মা পিছন পিছন আমাকে ডাকছেন অস্পষ্ট সুরে।তাকালাম পিছন ফিরে।এগিয়ে গেলাম মায়ের একেবারে নিকটে।আমাকে শুধালেন,“চলে যাচ্ছ কি?তুমি গেলে যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ তোমার পিছন দিকে চেয়ে থাকি যে আমি”।আমি আজ প্রৌঢ়ত্বে উপনীত।তারপর ও মা আমাকে ভাবছেন সেই আগেকার শিশু বা কৈশোরের মতো।আমার চোখ দুটি হয়ে উঠে মুহুর্তে অশ্রুসিক্ত।আমি মায়ের কাছে সে হিসাবে থাকাতে।এ আনন্দের বন্যা আমিই বুঝি আমার মতো।যিনি আমার পরম শ্রদ্ধেয় মা জননী।আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেক মায়ের কাছে সেই ছোট্র খোকাটি হয়ে বেঁচে থাকতে পরম আনন্দ অনুভুত হয়।আবার পরক্ষণেই মনে হল অন্য রকম অনুভুতি।হাসলাম প্রাণ ভরে।কতই আনন্দের জোয়ারে ভেসে।মায়ের তুলনা মা-ই।সন্তানের জন্য যে মায়েরা নি:স্বার্থে সারাটি জীবন ভালবাসা,আদর,সোহাগ বুকে ধারণ করে সংরক্ষিত রাখেন অনিমেষে,অনায়াসে।এমনকি জীবন বিপন্ন করতে দ্বিধান্বিত হন না মো্টেই।এ ঘটনার চারদিন পর আমি ফজরের নামাজ সমাপ্ত করে বিছানায় বসে আছি।চায়ের অপেক্ষায়।চা পান করেই বেরিয়ে যাবো আমার কর্মস্থলে।দেখলাম মা বেরিয়ে আসছেন নাতি-নাতনিকে ঘুমন্ত রেখে চুপিসারে।আমি অবাক হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,তিনি কি করেন বা কেন বের হলেন জানার উদগ্র বাসনায়।নিজে সঠিক ভাবে হাঁটা চলা প্রায় অসম্ভব।আমার মেয়েকে নিয়ে বের হন সাধারণত।নতুবা পড়ে যাবার ভয় সর্বক্ষণ।দেখলাম ঘরের সিড়ির নীচে যাচ্ছেন।আমি নিরবে অনুসরণ করতে লাগলাম।একহাতে সিড়ির রেলিং ধরে অপর হাতে কি যেন অনুসন্ধান করছেন।জিজ্ঞেস করলাম কি খোজছেন। উত্তর দিলেন,“আমার জন্য চা তৈরী করতে লাকডি খুজছেন।ধরলাম ঝাঁপটিয়ে আপনার শারিরিক অবস্তা মোটেই ভাল নয়।তাছাড়া আমার চা তৈরী হচ্ছে।তুমি কেন চা দিবে বা দেবার প্রচেষ্টায় আছ।বললেন বহুদিন হয়ে গেল তোমাকে চা দিতে পারিনি।আমার মন মানছে না।হায়রে গর্ভধারিনী মা।সন্তানের জন্য এতো মায়া,মহব্বত,ভালবাসা!.

 .

 .

 .

 .

 .

 .

 .

 .

আর আমরা সন্তানরা সে মাকে ভুলে যাই,অনাদর,অবহেলা করি তাঁদের শেষ বয়সে।এই আমার মা,এই আমার জননী,গর্ভধারিনী।মা,মা,মা।আল্লাহ তোমার রহমতের ছায়ায় রেখে আমার মায়ের জন্য কায়মনবাক্যে প্রার্থনা করছি দীর্ঘজীবি, সুস্থ রাখতে এবং সকল গোনাহ মাফ করে দিতে।আমিন।  . .

ডে-নাইট-নিউজ /

সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ