হে প্রিয়তম বিকেল.
____///-_সিফাত হালিম (ভিয়েনা /অষ্ট্রিয়া) .
.
একদিন যখন শীতার্ত বিকেল, অস্তাচলে সূর্য.
উষ্ণ যৌবন পলাতক ছিল .
নাভিমূলে হেলে,.
সম্ভবতঃ ২০১৯ মাস আগষ্ট.
আকস্মিক ওদের প্রথম দেখা হলো .
মাত্র মিনিট তিনেক,.
সামান্য কৌতুকে মেয়েটা অশ্পষ্ট.
তখন সবে গোধূলি লগ্ন।.
.
মেয়েটার সাদামাটা আটপৌরে জীবন.
তবে প্রয়োজনের দারিদ্র ছিল না.
ও প্রকৃতির প্রেমিকা ছিল .
ভালোবাসে গাছ, কবিতা আর গান.
এক দারুণ সুগন্ধীতে ভরা প্রাণ।.
.
ছেলেটা অতি দ্রুত মেয়েটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে.
মনের ক্যাম্পাসে বসানো ভাব যন্ত্রের সাহায্যে.
অজস্রবার ভালোবাসি বলে পাঠালো।.
মেয়েটাকে বোঝানো গেল না আসল। .
ওদের মিলবার কথা না .
সবথেকে বড়ো বাঁধা কাল।.
.
ছেলেটা বোকা ও বিবাগী, ক্ষ্যান্ত হয়নি .
স্বপ্নভঙ্গে অপমানিত বোধ করেনি .
সারারাত জানালায় জেগে নিরুত্তর মেয়েটার উদ্দেশ্যে .
হারমোনিকায় বিরহরাগের সুর তুলেছিল .
অসম্ভব অসাধারণ সুর। .
মেয়েটার মনের আনাচে কানাচে ডানায় ভর দিয়ে .
বিরহী চিলের সুর উড়ে বেড়ালো দীর্ঘ এক বছর। .
.
২০২০ আরেক আগষ্ট .
একেই বলে নিয়তি .
মেয়েটার হঠাৎ উপস্থিতি ঘটলো । .
ভালোবাসা মরে যায়না, .
ছেলেটার প্রজ্জ্বলিত বুকে .
অঙ্কুরিত বিগত স্বপ্ন .
অমনি নতুন কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করলো। .
একলা একটা ঘর বুনে .
ঘরের দাবাবোর্ডে দুইজন রাজারানী। .
মাস তিনেক মেয়েটাকে স্বপ্নে আনতে .
নানান ভাবে বোঝালো .
ভালোবাসি ভালোবাসি তাই ঘর বাঁধা ,,,,,,,, .
.
মেয়েটার মনের রাজত্বের সীমা অসীম .
নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে শিঁকড় অরন্যের গভীরে.
সে জানে হৃদয়ের একটাই ঋণ.
ছেলেটার হাতধরে বনে বনে ঘুরে কত কী শেখাবে.
কত পাখি, ঘাসফুল, কাঁচ পোকার নাম.
তা না,,,, কীসব উদ্ভট গবেট আলোচনা,, .
এমন অদ্ভুত অবস্থা সে আগে কখনও শোনেনি। .
ও জানে প্রকৃতিই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে .
তার একমাত্র প্রেমিক.
যে তাকে শুধুই আনন্দ দেয় .
দুঃখ দেয়নি কোনরকম। .
.
ছেলেটার সত্য ভঙ্গ করার স্বভাব নয় .
সে বিবাগী ভাবের উন্মাদ। .
অগত্যা ছেলেটা কথা নিল, .
----একদিন সারারাত তোমার দরজায় ওপারে .
হারমোনিকা বাজিয়ে গান শোনাবো, শুনবে ? .
----, শুধু এই পর্যন্ত।.
যদি ফিরে আসি, কখনও শুনবো। .
-----, আমার কাছে আর কিছু চাওনা? ".
.
মেয়েটা হাসলো,,,, হাসলে টোল খায় .
ওর রক্ত জমা অসামান্য বাম গালে। .
----, হু চাইতো,,,,,,,অনেক,,,,, মুক্ত নিশ্বাস .
গাছের ঘন অরন্য,,,,,,,, তুমি অরন্য হবে? .
মাঝে মাঝে আমার বুকে অসম্ভব চাপ সৃষ্টি করে, .
আমি নাকে বাতাস পাইনা, .
তখন বুকে কৃত্রিমতার ভীষণ কষ্ট, .
দম বন্ধ হয়ে যায় .
অকৃত্রিম বাতাসের জন্য আঁকুপাঁকু করি।.
আমি খোলা প্রকৃতি, গাছ অরন্যের কাছে অনেক ঋণী। .
একদিন দুজনে মিলে সবুজের রাজ্যে যাবো, .
তোমার আপত্তি নেই?,,,, যাবে তো,,? .
.
ছোট্ট চাওয়া। .
আপত্তি থাকবে কেন? .
মেয়েটা গাছ ভালোবাসে। .
আগপিছ ভাবাভাবি নাই অমনি ছেলেটির .
সব তাতে হ্যা জবাব আসতে লাগলো। .
সে নিরলস পরিশ্রম করে বাগানের মাটি প্রস্তুত করলো। .
.
২০২০ সেপ্টেম্বর,,,,, .
মেয়েটা শ্বাস কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো, .
সেইক্ষণে উস্কোখুস্কো উদ্বিগ্ন ছেলেটা কাদলো, বুঝলো। .
বললো, ভালো হও, দ্রুত ফিরে এসো,,,,দেখবে .
তারমধ্যে বিশাল অরন্য দাঁড়িয়ে গেছে । .
.
২০২০ অক্টোবর,,,,, .
মেয়েটা একটু সুস্থ হতেই ওরা কাছাকাছি এলো , .
ছেলেটা যাদুকর, কন্ঠে যেন যাদু আছে, .
দীর্ঘক্ষণ কথা, গান আর হারমোনিকার সুর,,, .
তারপর থেকে ওদের আলাপ নিয়মিত।.
মেয়েটার টানে ততদিন ধরে সে দিনভর অরন্য গড়ছে , .
তার মাঠে বাগানে চারাগাছে ভরে গেল ।.
.
একদিন গাছ লাগানো শেষ .
ছেলেটার স্হির মুগ্ধ দৃষ্টি। .
সে বললো, এখন আমি কি করি?.
মেয়েটা বললো, আর কি? .
ছেলেটা হাসলো, সবাই যা করে। তোমাকেই দেখবো। .
মেয়েটার ক্লান্ত চক্ষু বন্ধ, আমায় কি দেখে? দেখতে নেই। .
----, আছে অনেক কিছুই। ভাবছি খোদার মুখোমুখি বলবো, .
আমাকে কেন অরন্য বানালো না । .
----, এখন দেখেছো। .
----, একে দেখা বলেনা। এ আমার অঙ্গীকার খোদার কসম, .
ঐখানে আমি নিজেই কোনো অরন্য হবো। তারপর .
তোমার এবং সমস্তটা জীবনের জন্য, .
তোমাকে দেখে তোমার প্রতিটি মুহূর্ত নিজের করে রাখবো। .
স্নিগ্ধ মুখ মেয়েটা বললো, শেষতক তুমি রক্ষা করতে পারবে না, .
সত্য ভঙ্গ হবে। .
----, সে ভাবনা আমার। আমি ভাবছি, তুমি ভেবনা। .
.
২০২০ নভেম্বর .
চারাগুলো একটু বড়ো, .
সবে মাথা তুলতে শুরু করেছে, .
সেইদিন বাগানে ছেলেটা নিষ্কম্প অম্লান .
হারমোনিকা বাজালো, গান গাইছে। .
মেয়েটার বিস্ময়, বাহবা এতো গাছ? একসাথে দেখিনি । .
কিন্তু এর যে উদলো সাজ .
ফুল পাখি ছাড়া অরন্য ভাবা যায়? .
ছেলেটা সেইক্ষণে প্রতিজ্ঞ হলো, .
সুরের মূর্ছনা দিয়ে এরসব গাছে গাছে ফুল ফুটাবে, .
সেইদিন থেকে পাখি ডাকবেই। .
.
এতোখানি ভালোবাসা,,,,,,, .
কিছু তো একটা বলতে হবে, .
তাই অন্যকথা খুঁজে না পেয়ে মেয়েটার ঠোঁটে .
গভীর গোলাপি জলের নির্মল হাসি ফোটে। .
.
২০২০ ডিসেম্বর .
খেয়ালি প্রকৃতির গতিরোধ করে কে? .
ছেলেটার সব শ্রম, চেষ্টা, উদ্দেশ্য বিফল হলো.
অকারণে গাছগুলো পটাপট মরে মুখ থুবড়ে পড়ে, .
সেই সাথে ওদের সব গান, সব কথা। .
শেষবার মেয়েটি ধড়ফড় করতে করতে বলেছিল, .
আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। .
তাকে হাসপাতাল অব্দি নেওয়া গেল না। .
.
২০২০ ডিসেম্বর .
আর আজ যখন সবার স্মৃতি থেকে, .
মেয়েটার সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, .
উন্মাদ ছেলেটাকে শিকলি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয় ঘরে। .
তারমধ্যে এরকম একটা অদ্ভুত কান্ড, .
একসময় সবাই শুনেছে,,,,,,দেখেছেও অনেকে .
ছেলেটা যখন তখন হেঁটে বেড়ায় , .
বিরহ কাতর গলার গান, হারমোনিকার সুর .
সত্যি সত্যিই খুঁজে ফিরে , .
বনে জঙ্গলের মধ্যে তার প্রিয় মানবীকে। .
আবদ্ধ গাছের বাতাসে ঘুরে ঘুরে বাজে, .
সকরুণ মর্মদন্ত তান্ডব সুর, .
আর তখনই গাছে গাছে ফুল ফোটে, পাখি গান গায়, .
মেয়েটা অস্হির। সেই ডাকে মাঝে মাঝে এসে হাজির হয়। .
.
অথচ আমরা কেউই নির্দিষ্ট জানলাম না, .
মেয়েটা স্বর্গ মর্ত অরন্যের গাছের ফুল, পাখি হয়ে আসে .
না কি অভিমানী ছেলেটির বুকের কোনো স্বপ্ন হয়ে আসে। .
.
সমাপ্তি. .
ডে-নাইট-নিউজ / সিফাত হালিম ভিয়েনা /অষ্ট্রিয়া
আপনার মতামত লিখুন: